রহিদুল খান, চৌগাছা (যশোর): যশোর জোনে এবার তুলার বাম্পার ফলন হয়েছে। সেই সাথে মিলছে উচ্চ মূল্য। এতে খুশি চাষিরা। আগামীতে উৎপাদন আরো বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে ফেলার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা জানান, যশোর জোনে এবার চাষির সংখ্যা ছিল ১০ হাজারের বেশি। একইসাথে মৌসুমে তিন হাজার ৩’শো ৫২ হেক্টর জমিতে তুলা উৎপাদন হয়েছে তিন লাখ ৬৮ হাজার মণ। এর আগে কর্মকর্তারা চাষিদেরকে তুলা চাষ করতে বললে তারা অপারগতা দেখাতেন।
তুলা উন্নয়ন বোর্ড থেকে জানা যায়, যশোর জোনে মোট ২০টি ইউনিট রয়েছে। এই জোনের আওতায় যশোরের আট উপজেলা ছাড়াও কালীগঞ্জের বারবাজার, সাতক্ষীরার তালা, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী ইউনিট রয়েছে। এবারে চাষের আওতায় আসা চাষি ছিলেন মোট ১০ হাজার দুইশো ১৭ জন। আবাদ হয়েছে তিন হাজার তিনশো ৫২ হেক্টর জমিতে। এবার গড় ফলন হয়েছে বিঘা প্রতি ১৪ থেকে ১৫ মণ এবং হেক্টর প্রতি একশো পাঁচ মণ থেকে একশো ১২ মণ পর্যন্ত। কৃষকরা এবার প্রতি মণ তুলার দাম পাচ্ছেন তিন হাজার আটশো টাকা।
কর্মকর্তারা বলেছেন, এক বিঘা জমিতে পাঁচশো গ্রাম তুলা বীজ রোপণ করা হয়। যার মূল্য এক হাজার দুইশো টাকার মত। এক বিঘা জমিতে হাইব্রিড বা সিভি ১২ জাতের তুলা চাষে সর্বোচ্চ খরচ হয় আট থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে ১২ থেকে ১৪ মণ তুলা উৎপাদন হয়। সেই হিসেবে খরচ বাদ দিয়েও ৩০ হাজার টাকার মত লাভ হয়। যা তামাক চাষের চেয়ে অধিক লাভজনক ও এতে পরিবেশের জন্য কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়েনা। জুন থেকে জুলাই মাসে তুলা বীজ রোপণের উপযুক্ত সময় ধরা হয়।
তুলা চাষিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এবারের বাম্পার ফলনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা। একইসাথে বাজারমূল্য বেশি পাওয়ায় তাদের সন্তুষ্টি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
বারোবাজার ইউনিটের তুলাচাষি আশাদুল জানিয়েছেন, এবার তিনি তিন বিঘা জমিতে চাষ করে ৫৮ মণ তুলা পেয়েছেন। যার বর্তমান বাজার দর তিন হাজার আটশো টাকা মণ হিসেবে দুই লাখ ২০ হাজার চারশো টাকা। চাষ বাবদ খরচ হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টাকা। তাতে তার নিট লাভ হয়েছে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা। এভাবে দাম থাকলে সামনের বছরে এলাকায় দুই গুণ চাষ হবে বলে জানান তিনি।
যশোরের প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা এসএম জাকির বিন আলম জানিয়েছেন, একদিন এমন সময় আসবে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে তুলা রপ্তানি করা হবে। চাষিদের নিয়ে তদারকি, তুলা চাষে সার্বিক সহায়তা ও তুলা উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরামর্শের কারণেই এ চাষে ভালো সাফল্য এসেছে। এই ধারা অব্যাহত রাখা হবে, আগামীতে চাষের আওতাও বাড়ানো হবে। তিনি আরও জানান, কৃষকদের সাথে কর্মকর্তা কমচারীদের রয়েছে নিবিড় বন্ধন। মাঠ পর্যায়ে তদারকিও ভালো হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের যশোর অঞ্চলের উপ-পরিচালক জাফর আলী, কুষ্টিয়া জোনের তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা সেন দেবাশীষ, তুলা উন্নয়ন বোর্ড সদর দপ্তরের তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন, ভেড়ামারা এলাকার তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা জোবায়ের ইসলাম তালুকদার, প্রাগপুর ইউনিয়নের কটন ইউনিট অফিসার বদর উদ্দিনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তারা কৃষকদের সাথে মতবিনিময় ও মাঠ পরিদর্শন করে এই চাষে উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন। সম্পাদনা: অনিক কর্মকার
প্রতিনিধি/একে