শিরোনাম
◈ ২০২৫-২৬ অর্থবছর: বাড়তে পারে সেবা মাশুল, সুদ, টোল ও ইজারামূল্য ◈ কেন দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, ‘স্ট্রেইট কাট’ জানালেন পিনাকী ভট্টাচার্য (ভিডিও) ◈ ভয়াবহ নতুন তথ্য বাংলাদেশসহ ৮ দেশে অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে ◈ ১৪ হাজারের বেশি হজযাত্রীর ভিসা এখনো হয়নি ◈ পাকিস্তান সেনাবাহিনীর জরুরি বৈঠক, ভারতের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি ◈ চীনের কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে বৈঠকে রোহিঙ্গাদের জন্য জামায়াতের রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাবে যা বলল মিয়ানমার ◈ বিমানের বিশেষ সুবিধা ফিরিয়ে দিলেন খালেদা জিয়া ◈ সরকারের হস্তক্ষেপ না থাকায় গণমাধ্যম সূচকে উন্নতি : মাহফুজ আলম ◈ বাংলাদেশ সফর কর‌বে ভারত, বাতিলের শঙ্কা উড়িয়ে দিল বিসিবি ◈ ২ কৃষককে ফেরত পাওয়ায় ২ ভারতীয়কে ছেড়ে দিল বিজিবি (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৭ নভেম্বর, ২০২২, ০৫:০২ বিকাল
আপডেট : ০৭ নভেম্বর, ২০২২, ০৫:০২ বিকাল

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

য‌শো‌রের ‌নি‌ষিদ্ধ রাক্ষু‌সে আ‌ফ্রিকান মাগু‌র পোনার রমরমা কারবার

নি‌ষিদ্ধ রাক্ষু‌সে আ‌ফ্রিকান মাগু‌র পোনার রমরমা কারবার

য‌শোর প্রতি‌নি‌ধি : যশোরে  নিষিদ্ধ আফ্রিকান মাগুর উৎপাদন, চাষ ও বিক্রির রমরসা কারবার চল‌ছে। সংঘবদ্ধ  একটি চক্র বিশেষ একটি মহলকে ম্যানেজ করে দেদার চালিয়ে যাচ্ছে  রাক্ষুসে স্বভাবের আফ্রিকান এ মাগুরের ব্যবসা।  শুধু তাই না, এ মাগুর যশোর থেকে ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে সারাদেশে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো জলাশয়ে এ মাছ থাকলে স্বাদু পানির মাছের অস্তিত্ব এক সময় বিলীন হয়ে যাবে। এতে করে কেবল যশোর না, হুমকির মধ্যে পড়ছে সারাদেশ। প্রশাসনসহ মৎস্য বিভাগের কঠোর তৎপরতার মধ্যে চক্রটি তাদের ব্যবসা অব্যাহত রেখেছে। এ বিষয়ে এখনই পদক্ষেপ না নিয়ে দেশের জন্য বড় ধরনের বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখছেন মাছ চাষিরা।

যশোর সদর উপজেলার কাজীপুর পরিত্যক্ত ইটভাটার মধ্যে  ব্যারেলে রেখে রাক্ষুসে মাগুরের সর্বোচ্চ দাম তোলা হয়। এখা‌নে এক  হাজার পিস মাছের পোনা ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।

জানা যায়, এই ইটভাটা থেকে আফ্রিকান মাগুরের রেনু পোনা কিনে পাইকাররা নি‌য়ে যান চাঁচড়া বাবলাতলায় (ওজোপাডিকোর সামনে)। সেখান থেকে বাইরের পার্টির কাছে বিক্রি করেন তারা। আধা কিলোমিটারের দূরত্ব ও ৩০ মিনিটের ব্যবধানে ৭০০ টাকার মাছ হয়ে যায় ১২০০ টাকা। এছাড়া তিন টাকা পিসের মাগুরের পোনা বিক্রি করতে দেখা যায় ছয় টাকায়। এখান থেকেই মূলত সারাদেশে এই আফ্রিকান মাগুর সরবরাহ করা হয়।

এক‌টি সূত্র জানায়, আফ্রিকান মাগুরের রেনু পোনা উৎপাদন করা হয়  কাজীপুরের মিঠুর বাড়িতে, হাউজ বানিয়ে বিভিন্ন পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রাক্ষুসে মাগুরও। যা ব্যাগের মধ্যে পানি দিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হচ্ছে। মিঠু পোনা উৎপাদনের বিষয়টি স্বীকার করেন।

তবে, এ মাছ নিষিদ্ধ করার বিষয়টি মানতে নারাজ তিনি। অভিযোগ রয়েছে, শুধু মিঠুই না, তার ভাই নুরুজ্জামান এবং সুপারি বাগানের নুর ইসলামও এ ব্যবসার সাথে জড়িত। এছাড়া, বসুন্দিয়ার জয়ন্তার মুক্তি, রশিদ ও তোতা মাগুরের রেনু উৎপাদন করে থাকেন। চাষও করেন তারা।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর উপজেলার আরবপুর ইউনিয়নের ভাটাপুকুর ও দুর্গাপুর এলাকায়  পাঁচটি বড় পুকুর রয়েছে নাজমুল না‌মে এক ব‌্যা‌ক্তির। কয়েকটি পুকুরে সাদা মাছের চাষ করলেও আড়ালে চলছে রাক্ষুসে মাগুরের চাষ। এলাকাবাসী এনিয়ে ত্যক্তবিরক্ত হলেও সবাই যেন নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছেন। একই এলাকার  রেললাইন এর প‌রেই র‌য়ে‌ছে আ‌রো দু’টি বিশাল পুকুর। সেখানেও প্রকাশ্যেই চাষ হচ্ছে রাক্ষুসে মাগুরের।

সেখানে পুকুরের মালিক আমজাদের ভাইপো জানান, সাদা মাছ চাষের কথা বলে একটি পুকুর ৫০ অপরটি ৫৫ হাজার টাকায় দু’টি পুকুর লিজ নিয়েছেন নাজমুল। কিন্তু এখন দেখছেন মাগুর চাষ চলছে।

এলাকাবাসী জানায়, প্রায় এখান থেকে ট্রাক ভর্তি করে মাগুর রাতে নিয়ে যাওয়া হয়। গত মাসে এখান থেকে কিনে নেয়ার সময় র‌্যাবের হাতে দু’ ট্রাক মাছ জব্দ হয়। পাঁচ লাখ টাকার মাগুরসহ র‌্যাবের হাতে আটক হন ক্রেতা। পরে তার মাছ ধ্বংস করে জরিমানাও করা হয়। কিন্তু ধরাছোঁয়ার বাইরে থে‌কে যান মুলহোতারা।

এ বিষয়ে যশোর মাগুর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সেলিম রেজা পান্নু ও সাধারণ সম্পাদক বাদশা মিয়া জানান, এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। মাছগুলো অল্পদিনের মধ্যে বড় হয়। দামও ভালো পাওয়া যায়। কিন্তু ক্ষতিকারক হওয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপরই তাদের সমিতি বিলুপ্ত করা হয়েছে। যারা এ ব্যবসা করছেন তারা অবৈধভাবেই করছেন।  হাইব্রিড ও আফ্রিকান মাগুরের বিষয়ে তারা বলেন, যে মাগুরগুলো বিক্রি হচ্ছে সেগুলোই আফ্রিকান মাগুর। হাইব্রিড মাগুরের কথা বলে ব্যবসা করা হচ্ছে বলে দাবি করেন তারা।

এ বিষয়ে জান‌তে চাই‌লে যশোর মেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ফিরোজ খান বলেন, সরকার যে মাছ নিষিদ্ধ করেছে তা বিক্রি করা অবৈধ। কেউ যদি করে তাহলে সেটা  গোপনে করছে। তিনি নিজেও আফ্রিকান মাগুর মাছের ব্যবসা বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফিরোজ আহাম্মেদ বলেন, এই মাগুরগুলো ভীষণ নোংরা পানিতে এমনকি নর্দমা, জলাধারে যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশের সাথে স্বচ্ছন্দ্যে জীবনধারণ করতে পারে। এরা দল বেধে চলাফেরা করে এবং শিকারের ওপর আক্রমণ করে একসাথে।

এরা যেখানে থাকে সেখানকার ছোট বড় মাছ, মাছের ডিম, পোনা সেইসাথে অন্যান্য জলজ প্রাণী মুহূর্তের মধ্যে খেয়ে নিঃশেষ করে ফেলতে পারে। কোনোভাবে যদি পুকুর বা অবরুদ্ধ জলাশয় থেকে এই মাছ নদী বা মুক্ত জলাশয়ে চলে আসে তাহলে মৎস্য সম্পদের জন্য মহাবিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।

 এসব বিষয় বিবেচনা করে ২০১৪ সালে এই মাগুরকে নিষিদ্ধ করে সরকার। পরে এ ব্যবসা বন্ধ করে দেন যশোরের ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে কঠোর তদারকি করছেন তারা। তারা যেখানেই এই মাছ চাষ হতে দেখেছেন সেখানেই ব্যবস্থা নিচ্ছেন। যশোরেই যে এই মাছ উৎপাদন, বিক্রি ও চাষ হচ্ছে সে বিষয়টি তিনি জানেন না বলে জানান। একইসাথে খবর পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

প্রতিনিধি/জেএ

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়