শিরোনাম
◈ শিক্ষক-কর্মচারীদের মাধ্যমিক স্তরে বদলি ও পদায়নের নতুন নির্দেশনা ◈ হাজিদের সোয়া ৮ কোটি টাকা ফেরত দেবে সরকার ◈ জরুরি অবস্থা ঘোষণায় বিরোধীদলের অংশগ্রহণ ও নাগরিক অধিকার সুরক্ষার সুপারিশ ◈ গভীর রা‌তে ক্লাব বিশ্বকা‌পের ফাইনাল, এই আ‌য়োজ‌নে ফিফার আয় ২৪ হাজার কোটি টাকা ◈ সিরিজ বাঁচা‌তে রা‌তে শ্রীলঙ্কার মোকা‌বিলা কর‌বে বাংলা‌দেশ ◈ চীনের সুপার ড্যাম,: ভারত ও বাংলাদেশের উদ্বেগ ও বাস্তবতা ◈ ভেরিফিকেশন ছাড়া আর নয় শিক্ষক নিয়োগ: কার্যকর হলো শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিপত্র ◈ সেনা কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেসির ক্ষমতা বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন ◈ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি চ্যালেঞ্জিং হলেও জাতীয় নির্বাচন সম্ভব: বিবিসি বাংলাকে সিইসি ◈ সন্ত্রাসীদের ধরতে যে কোন সময় সারাদেশে চিরুনি অভিযান: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা (ভিডিও)

প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর, ২০২২, ০১:১৪ দুপুর
আপডেট : ০৪ অক্টোবর, ২০২২, ০১:১৪ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

পান চাষ করে বিপাকে, আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা

আবদুল্লাহ মামুন, ফেনী : দাগনভূঞা উপজেলায় পান চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কৃষি বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতার অভাবসহ নানা কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে পান চাষের পরিমাণ। পান চাষীদের পাশে কেউ নেই। সরকারি বেসরকারি কোন সাহায্য সহায়তা তারা পাচ্ছে না।

একদিকে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি অপর দিকে প্রকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদেরকে সরকারি প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা না থাকায় সুস্বাদু বাংলা পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন চাষীরা। পান বাংলাদেশের একটি অন্যতম অর্থকরী ফসল। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় উৎসবসহ বিয়ে-শাদিতে পান-সুপারির কদর আদিকাল থেকে।

পানের জাতের মধ্যে বাংলা পান অন্যতম। উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের লালপুর ও পূর্ব হীরাপুরের বেশ কয়েকটি পরিবার বহুকাল ধরে পান চাষে জড়িত রয়েছে।

এ পান স্থানীয়দের কাছে খুবই প্রিয়। এর চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। এক সময় উপজেলার জায়লস্কর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে পানের বরজ থাকলেও এখন তা অনেকটা কমে এসেছে।

পূর্ব পুরুষের পেশা হিসেবে এখনো যারা পানের বরজ নিয়ে আছেন তাদের মধ্যে কয়েক জন পান চাষী জানান, পান চাষের জন্য সরকারি কোন সাহায্য সহায়তা পাওয়া যাচ্ছে না। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে যে কোন ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হলে সরকার তাদের সহায়তা করে কিন্তু পানের বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হলে চাষীদের পাশে কেউ দাঁড়ায় না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্বাধীনতার আগ থেকে বেশ কিছু পান চাষী স্থানীয়ভাবে পান চাষ করে ব্যাপক সাফল্য লাভ করেন। পরে বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষের মাঝে পান চাষে আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পর্যায়ক্রমে ওই এলাকার চাষীরা পান চাষের দিকে ঝুঁকে পড়েন এবং সফলতার মুখও দেখেন। বর্তমানে চাষীরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ না থাকায় পান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

রোগবালাই পান উৎপাদনের একটি প্রধান অন্তরায়। পানে গোড়া পঁচা, ঢলে পড়া, পাতা পঁচা, অ্যানথ্যাকনোজ ও সাদা গুঁড়া ইত্যাদি রোগ দেখা যায়। এর মধ্যে পঁচন ধরা পানের জন্য একটি মারাত্মক রোগ। গাছের যে কোনো বয়সে এ রোগ হতে পারে।

পানের বরজে সাধারণত কার্তিক ও অগ্রহায়ন মাসে এ রোগের প্রকোপ মহামারী আকারে দেখা দেয়। এ রোগের লক্ষণ হচ্ছে গাছের গোড়ায় আক্রমণ করে।

গোড়ায় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, মাটির কাছের একটি বা দুটি পর্বের মধ্যে কালো বর্ণ ধারণ করেছে। উপরে লতা-পাতা হলুদ হয়ে যায় ও ঝরে পড়ে। মাটি সংলগ্ন লতার ওপর সাদা সুতার মতো ছত্রাক মাইসেলিয়া দেখা যায়।

পরে হালকা বাদামি থেকে বাদামি সরিষার ন্যায় এক প্রকার অসংখ্য দানার মতো স্কে-রোসিয়া দেখা যায়। মাটি সংলগ্ন ডাঁটা পঁচে যায় এবং গাছ ঢলে পড়ে মরে যায়।

পানের রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফলন অনেকাংশে বৃদ্ধি পেত।

জায়লস্কর ইউনিয়নের পূর্ব হীরাপুর গ্রামের প্রবীণ পান চাষী গিরিন্দ্র কুমার ভৌমিকের সাথে আলাপকালে জানাযায়, প্রায় শতবছর আগে তার বাবা রাজ কুমার ভৌমিক এ পানের বরজ শুরু করেন। শতবছরের পুরনো তার বাবার রেখে যাওয়া ঐতিহ্যেবাহী এই পানের বরজের স্মৃতিটুকু ধরে রেখেছেন।

৫০ শতক জমিতে পান চাষ করছেন। বরজের নানান সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, পানের বরজ তৈরি করে পানের লতা লাগিয়ে ভাল ফলন পেলেও সার কীটনাশক ব্যবহারে পানের রোগ ঠেকাতে পারছেন না তারা। রোগবালাই কিংবা সমস্যা দেখা দিলে তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা কিংবা ঔষধ বিক্রেতাদের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।

তখন কৃষি বিভাগ থেকে কোন পরামর্শ পায়না চাষীরা। পান চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন সার, খৈল, বরজ তৈরির বাঁশ ও কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের মজুরির হার বাড়লেও সেই তুলনায় পানের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে না।

এতে পান চাষীরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। পান উপজেলার স্থানীয় বাজারগুলোতে খুচরা ও পাইকারী বিক্রি করছেন। বড় আকারের এক বিড়া (৬৪টি) পান ৪৫ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি করছেন।

এ ছাড়া ছোট পানের প্রতি বিড়া ২০ থেকে ৩০  টাকায় বিক্রি করছেন। অথচ পান চাষের প্রয়োজনীয় উপকরণ খৈল কেজি ৫০ টাকা ও বরজ তৈরির বাঁশ ১০০টি বাঁশ ক্রয় করতেছেন ৫/৬ হাজার টাকা। কীটনাশকের দাম বৃদ্ধি এবং শ্রমিকদের মজুরির হারও বেশি।

একসময় এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে পান চাষ হতো। এই পান এলাকার বাজারগুলোর চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেত। কিন্তু নানাবিধ সমস্যায় পানের চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে।

স্থানীয় লালপুরের পান চাষী অরুন পাল, মিলন দত্ত  সত্যিবান দে ও ননী দত্ত বলেন, সরকার কৃষকদের জন্য সারা দেশে বিনামূল্যে সার, বীজ ও কীটনাশক বিতরণ করলেও আমাদের পান চাষীদের কপালে একশত গ্রাম সার-বীজ ও এক বোতল কীটনাশকও জোটেনি।

কৃষি উন্নয়নে নিয়োজিত এই কর্মকর্তারা যদি পান চাষে প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য উৎসাহিত করতেন তাহলে চাষীরা আগ্রহ হারাতো না।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার জানান, পান‌ একটি অর্থকরী ফসল।এটি ছায়া পছন্দ করে তাই  প্রাথমিক অবস্থায় এর শেড তৈরির জন্য একটু বেশী খরচ  করতে হয় যেটাকে স্থানীয় ভাষায় ছন বলা হয়। এছাড়া বরজ  তৈরীর জন্য বিশেষ বাশ প্রয়োজন, এই বাশঁ এবং ছন উভয়টি চট্রগ্রাম থেকে সংগ্রহ করতে হয় যা একটু কষ্টসাধ্য এবং ব্যয়বহুল।

উপজেলা কৃষি অফিস থেকে এই পান চাষের জন্য অন্যান্য ফসলের মত নগদ  সহায়তার সুযোগ নেই, তবে বালাই ব্যবস্থাপনার জন্য  সঠিক পরামর্শ দিয়ে থাকি।

এছাড়া কোনো কৃষক যদি বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তবে তার আবেদনের ভিত্তিতে উপজেলা পরিষদ অথবা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে সহায়তা করার সুযোগ রয়েছে।

উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা লুৎফুল হায়দার ভূঁইয়া বলেন, পান চাষে সাধারণত ৩টি রোগ ও ৪টি পোকা দ্বারা বেশি আক্রান্ত হয়।

এই রোগ-পোকা দমনে অনুমোধিত বালাইনাশক প্রয়োগ করে রোগ ও পোকার হাত থেকে পানকে রক্ষা করা সম্ভব। তবে অবশ্যই সঠিক রোগ বা পোকা নির্ধারণ, সঠিক বালাইনাশক, সঠিক সময় ও সঠিক পরিমাণ এই চার সঠিক যদি ঠিক রাখা যায় তবেই কৃষক তার ফসলকে রোগ-পোকার হাত হতে রক্ষা করতে পারবে।।

আর এসব কিছু জানতে প্রতিনিয়ত উপসহকারী কৃষি অফিসারের নিকট হতে পরামর্শ নেওয়া একজন কৃষকের দায়িত্ব।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়