জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি: তৃতীয় দফায় আবারও ফুলে-ফেঁপে উঠেছে তিস্তা। বর্তমানে বিপদসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে পানি। নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের বাড়িঘর, ক্ষেত-খামার, গ্রামীণ সড়ক সবকিছুই এখন তিস্তার পানিতে তলিয়ে গেছে। লালমনিরহাটের ৫ উপজেলার নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের অন্তত ১০ হাজার পরিবার এরইমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দারা পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
বুধবার (১৩ আগস্ট) দুপুর ৩টায় লালমনিরহাটের তিস্তা ব্যারাজ ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ দশমিক ২০ মিটার, যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। (স্বাভাবিক ৫২.১৫ সেন্টিমিটার)।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার কালমাটি গ্রামের মর্জিনা বেগমের বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে পানি, ঢুবে গেছে চুলা, তলিয়েছে সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও তাই বাধ্য হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন কালমাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বারান্দায়। একই দুর্দশায় রয়েছেন ষাটোর্ধ বুলবুলি বেগমও।
গত ১৫ দিনে তিন দফায় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রমের পর হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু গতকাল দুপুর থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে পানি। এখন বিপদসীমার ওপর দিয়ে তীব্র স্রোতে বইছে তিস্তার পানি।
তিস্তার পানি বাড়ায় লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, আদিতমারী, সদর, কালীগঞ্জ উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে সৃষ্টি হয়েছে বন্যার। এসব এলাকায় এরইমধ্যে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে অন্তত ১০ হাজার পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন চলতি মৌসুমে তৃতীয় দফা বন্যার কবলে পড়েছেন তারা। আমনের ক্ষেতসহ মৌসুমি ফসল তলিয়েছে পানিতে, বাড়ি-ঘরে পানি থাকায় বেগ পেতে হচ্ছে সাংসারিক কর্মকান্ডেও। তিস্তার পানিতে অনেক কৃষকের ভেসে গেছে পাটসহ নানা জাতের ফসলও। দুর্ভোগ আর অভিযোগের শেষ নেই ভোগান্তিতে পড়া মানুষজনের।
তিস্তার উত্তাল পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছে তিস্তা পাড়ের হাজারো মানুষ। তাদের দাবি ত্রাণ নয় স্থায়ীভাবে দুর্ভোগ কমাতে সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নিবে নদী খনন বা তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় আগামী দু’দিন পানি বিপদসীমার ওপর দিয়েই প্রবাহিত হতে পারে। সার্বিক খোজ খবর নিচ্ছেন তারা।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করা হচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হবে দূর্গতদের মাঝে।