সিলেটের সাদাপাথরের পাথর লুট নিয়ে দেশজুড়েই এখন চলছে তোলপাড়। ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে পাথর লুট নিয়ে। কেবল সাদাপাথর নয় সিলেটের জাফলংসহ অন্যান্য কোয়ারির পাথর লুট নিয়েও সমালোচনা চলছে। এ অবস্থায় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই)-এর একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
ছড়িয়ে পড়া ওই বক্তব্যে ফয়জুল করীমে পাথর উত্তোলনের পক্ষে সাফাই গাইতে শোনা যায়। এতে পরিবেশ রক্ষার দোহাই দিয়ে পাথর উত্তোলন বন্ধের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে যানা যায়, ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর বক্তব্যটি গত বছরের সে্প্টেম্বর মাসের। সেসময় সিলেটে এসে পাথর ব্যবসায়ী ও মালিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এই বক্তব্য রাখেন ফয়জুল করীম। এসময় তিনি পাথর উত্তোলনের দাবিতে আন্দোলনরতদের সাথেও একাত্মততা জানান।
ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে ফয়জুল করীমকে বলতে শোনা যায়, ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগ ফ্যাসিস্ট সরকার ভারতের একটি এজেন্টা বাস্তবায়ন করে। বাংলাদেশ থেকে পাথর উত্তোলন করা যাবে না। আমরা মনে করি পরিবেশের নামে আজকে পাথর উত্তোলন যে বন্ধ করছে, এটা আসলে পরিবেশ-টরিবেশ কিছু না। এটার মূল কারণ হলো ভারতে খুশি করা। এবং আমাদের মুদ্রা বিদেশে পাচার করা। ভারত থেকে প্রতিবছর ৫ মিলিয়ন ডলারের পাথর আনা হয়। এবং সেটা নিম্নমানের পাথর। অথচ আমরা আমাদের ভূ-খন্ড থেকে পাথর তুলতে পারি না।
সেই বৃৃটিশ আমল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পাথর উত্তোলন হচ্ছিলো তখন পরিবেশ নষ্ট হয় নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, হঠাৎ ২০১৯ সালে সব পরিবেশ নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো, এমন কথা মানা যায় না। আমি মনে করি এটি ভারতের চক্রান্ত। এটা ভারতের ইশারায় করা হয়েছে। তারা যেনো তাদের নিম্নমানের পাথর রপ্তানি করতে পারে। অথচ ভারত পাহাড় কেটে পাথর সংগ্রহ করছে। কিন্তু আমাদের নদী থেকে পাথর তুলতে দিচ্ছে না।
পাথর তুললে পরিবেশ নষ্ট হবে কেন এই প্রশ্ন তুলে ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, পাথর না তোলার কারণে বরং আমাদের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নদীগুলো ভরাট হয়ে গেছে। নদী ভরাট হওয়ার কারণে বন্যার সৃষ্টি হচ্ছে। আপনি দেখেছেন, সুনামগঞ্জ, সিলেটে কখনো বন্যা হতো না। এখন বন্যা হওয়ার কারণ কি, দ্রুত গতিতে পানি না নামার কারণে। আর পানি নামবে কিভাবে? যেহেতু পাথরে নদী ভরে গেছে। আর উত্তোলন করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, আমাদের দেশকে ডুবে মারার একটি চক্রান্ত চলছে। এটি শুধু পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধের বিষয় নয়, বরং প্রতিবছর যাতে আমাদের দেশের মানুষ পানিতে ডুবে মরতে পারে তারও একটি ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই।
পাথর উত্তোলনের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, কোন অবস্থাতেই পরিবেশের দোহাই দিয়ে আমাদের সম্পত্তি উত্তোলনে যারা বাধা দেবে, আমাদের ডুবিয়ে ও চুবিয়ে মারবে এটা আমরা কোন অবস্থাতেই মানতে পারি না। সরকারকে বলবো, আপনারা অচীরেই পাথর তোলার অনুমতি প্রদান করুন। না হলে বুঝবো, আপনারাও ভারতের স্বার্থে কাজ করছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সাল থেকে উচ্চ আদালতের নির্দেশে সিলেটের জাফলং ভোলাগঞ্জসহ ৮ টি পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন বন্ধ রাখে তৎকালীন সরকার। তবে গত বছরের ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর থেকে চলছে ব্যাপক লুটপাট। একবছরে সিলেটের কোয়ারিগুলো থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার পাথর লুটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।