ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী প্রতিনিধি: রাজশাহী মহানগর বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে রোববার এক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে—মঞ্চে গান পরিবেশন করেন আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত কণ্ঠশিল্পী গৌরব হোসেন তুষার। বিষয়টি জানাজানি হতেই ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
গৌরব হোসেন তুষার সাবেক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের ভগ্নিপতি। তার স্ত্রী সেতু, পলকের ফুফাতো বোন। জানা যায়, পলক প্রতিমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে গৌরবকে ডিজিটাল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ‘নগদ’-এ চাকরির ব্যবস্থা করে দেন।
গৌরবের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ঘেঁটে দেখা যায়, তিনি বহুবার পলকের সঙ্গে ছবি পোস্ট করেছেন। ২০১৮ সালের ১৫ ডিসেম্বর একটি ছবিতে তিনি নিজের ছবির সঙ্গে লিখেছেন, “নৌকা মার্কায় ভোট দিন”, সঙ্গে যুক্ত করেছেন আওয়ামী লীগের মনোগ্রাম। ২০১৯ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পলকের একটি ছবি পোস্ট করেন এবং শুভেচ্ছা জানান। এছাড়া, পলক বিভিন্ন সময়ে গৌরবের মিউজিক ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে তাকে প্রশংসা করেছেন।
এমনকি গৌরব এক সময় পালিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলামকে “প্রগতিশীল পুলিশ কর্মকর্তা” উল্লেখ করে তার জন্মদিনে শুভেচ্ছাও জানিয়েছেন।
বিএনপি নেতারা জানান, গৌরব শুধু নিজেই আওয়ামীপন্থী নন, তার পুরো পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামী লীগের সক্রিয় সমর্থক। তিনি আওয়ামী লীগের নানা প্রচারণা কর্মসূচির মঞ্চে গান গেয়েছেন। তাই তাকে বিএনপির মতো একটি বিরোধী রাজনৈতিক দলের সম্মেলনের মঞ্চে দেখে বিস্মিত হয়েছেন তারা।
সম্মেলনে উপস্থিত নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের (জাতীয়তাবাদী সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা) শিল্পীদের দিয়েই গান পরিবেশন করানো উচিত ছিল। অথচ জাসাসকে আমন্ত্রণ না জানিয়ে বহিরাগত ও রাজনৈতিকভাবে বিপরীতমুখী শিল্পীকে জায়গা দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, গৌরবকে গান গাওয়ার জন্য মনোনয়ন দেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত। যদিও এ বিষয়ে শাহীন শওকত ও গৌরবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এই ঘটনার পর, রাজশাহী বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রশ্ন তুলছেন—কীভাবে একজন আওয়ামী সমর্থক শিল্পী দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক আয়োজনের অংশ হতে পারেন? এ নিয়ে দলীয় শৃঙ্খলা ও সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করছেন।