জিয়া উদ্দিন সিদ্দিকী, আমতলী (বরগুনা) প্রতিনিধি: বরগুনার আমতলী পৌরসভা প্রথম শ্রেণির হলেও সংস্কারের অভাবে অর্ধশতাধিক সড়ক বেহাল হয়ে খানাখন্দে ভরে গেছে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এসকল সড়ক দিয়ে পায়ে হেটে দুরের কথা রিকসায় চরেও যাতায়াত করা যায় না। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে জমে যায় হাটু পানি। পৌরবাসীর নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার জন্য এসকল সড়ক সংস্কার এবং পর্যাপ্ত ড্রেন নির্মানের দাবী জানিয়েছেন ভূক্তভোগী পৌরবাসী।
আমতলী পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে আমতলী পৌরসভাটি তৃতীয় শ্রেণির পৌরসভা হিসেবে যাত্রা শুরু করে। সময়ের পরিবর্তনে ২০০৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণি এবং ২০১২ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। ৩০ হাজার লোকের বসবাসের প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও এটি এখন মানুষের চরম ভোগান্তির পৌরসভা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পৌরসভার নয়টি ওয়র্ডের অধিকাংশ সড়ক সংস্কারের অভাবে খানাখন্দে ভরে গেছে। অন্যদিকে পর্যাপ্ত ড্রেন না থাকায় সামান্য বৃষ্টি হলেই ভাঙ্গা সড়কে হাটু পানি জমে যাওয়ায় নাগরিকদের স্বাভাবিক চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে মারাত্মকভাবে।
আমতলী পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডে দেড় শতাধিক সড়ক রয়েছে। এর মধ্যে অন্ত:ত অর্ধশতাধিক সড়ক সংস্কারের অভাবে বেহাল অবস্থায় পরিনত হয়েছে। সড়কের পিচ এবং আরসিসি ঢালাই উঠে শত শত গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই এসকল গর্তে এক থেকে দেড় ফুট পানি জমে মানুষের চলাচল দায় হয়ে পরে। বৃষ্টির সময় মানুষ পায়ে হেটে দুরের কথা রিকসা যোগেও চলাচল করতে পারে না গর্তের কারনে।
খানাখন্দে ভড়া সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে চার নম্বর ওয়ার্ডের অমল পালের দোকান থেকে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের ফোরকানের বালির দোকান পর্যন্ত ৩ কিলোমিটার সড়ক পিচ উঠে খানা খন্দে ভরে গেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোতাহার হোসেন খা বলেন, বাবা রাস্তাটি ভাইঙ্গা এমন অবস্থা অইছে রিকসায়ও যাওয়া যায় না। মাজা কোমর সব ধইর্যা যায়।
চার নম্বর ওয়ার্ডের মরহুম নজির মৃধার বাসার সামনে থেকে আখরাবাড়ি পর্যন্ত ৫০০ মিটার সড়কের পিচ ঢালাই উঠে সড়কের মাঝখানে এক থেকে দেড় ফুট গর্ত হওয়ায় বর্ষা মৌসুম শুরু থেকে পানি জমে থাকায় মানুষজন বাসাবাড়ির দেয়ালের পাশ দিয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে চলাফেরা করছে।
ওই সড়কের ব্যবসায়ী সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের স্বত্তাধিকারী বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. নুরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার রাস্তা এত ভাঙ্গা এবং রাস্তার মধ্যে এত পানি আমি আমার জীবন্ওে দেখি নাই। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হলেও শহরে নেই পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
সরকারী একে স্কুল থেকে পল্লবী হয়ে নতুন বাজার বটতলা পর্যন্ত ২কিলোমিটার সড়কের সরকারী একে হাই স্কুলের দক্ষিণ পার্শে অবস্থিত খাস পুকুরের পার সংলগ্ন স্থান দিয়ে প্রায় ২০০ মিটার সড়ক ধসে পাশের লেকের পানিতে পরে গেছে। ওই সড়কের স্থানীয় বাসিন্দা মাওঃ মো. আব্দুল খালেক বলেন, এই সড়কটির অর্ধেকের বেশী লেকের পানিতে পরে গেছে। বাকীটুকু পরলেই ওই সড়ক দিয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
চার নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেয়র মতিয়ার রহমানের বাসার পূর্ব পাশের সীমানা প্রচীর এবং পৌরসভার সীমানা প্রাচীরের মাঝ খানের ১ কিলোমিটার সড়ক খানাখন্দে ভরে গেছে।
স্কুল শিক্ষার্থী নিধি, সাবা বলেন, প্রতিদিন আমরা এই সড়ক পায়ে হেটে স্কুলে আসা যাওয়া করি কিন্ত বর্ষার সময় চলাচল করতে পারি না ভাঙ্গা রাস্তায় পানি জমে থাকার কারনে।
তিন নম্বর ওয়ার্ডের গ্রামীন ব্যাংকের সামনে থেকে খোন্তাকাটা পানির ট্যাঙ্কি পর্যন্ত প্রায় ৫কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ উঠে হাজার হাজার গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মানুষ এখন চলাচল করতে ভয় পায়।
স্থানীয় বাসিন্দা কল্পনা বেগম বলেন, ওই রাস্তার পিচ উঠে পানি জমে থাকায় মানুষজন এখন আর স্বাভাবিক ভাবে ওই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে পারছে না।
একই ওয়ার্ডের হাজীবাড়ী সংলগ্ন সড়কটির অবস্থাও একই রকম। এই সড়কে পানি চলাচলের জন্য ড্রেন না থাকায় সড়কের উপর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই হাটু পরিমান পানি জমে থাকে। নিরুপায় হয়ে এলাকাবাসী পাশর্^বর্তী সড়ক দিয়ে চলাচল করে।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসক মো. আলি হোসেন বলেন, সড়কে পানি জমে থাকায় আমরা এখন পাশের অন্য আরেকটি সড়ক দিয়ে চলাচল করি।
তিন নম্বর ওয়ার্ডের বটতলা থেকে লোদা সীমানা পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়কের বেহাল দশা। সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। এই সড়কটি দিয়ে হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নবাসীর চলাচলের একমাত্র পথ।
ওই সড়কের পাশে বসবাস করা বাসিন্দা লুৎফর রহমান লিটন মৃধা বলেন, হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নবাসীর চলাচলের একমাত্র পথ ওই রাস্তাটি খানাখন্দে ভওে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বরগুনা জেলা জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. মনিরুল ইসলাম তালুকদারের বাসার সামনের সড়কটিও গত ৩ বছর ধরে বেহাল অবস্থায় পরে আছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভার নিকট এই সড়কটি সংস্কারের জন্য বহুবার ধর্না দিয়েছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
খোন্তকাটা হারুর ডাক্তারের বাড়ি সংলগ্ন সড়ক থেকে ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম স্বপনের বাসা হয়ে পানির ট্যাঙ্কি পর্যন্ত সড়কটি বেহালদশা ৫ বছর ধরে। স্থানীয়রা নিরুপায় হয়ে বর্ষা মৌসুমে এই সড়কের উপর বালুর বস্তা দিয়ে চলাচল করছে। এই সড়কের পাশে ড্রেন না থাকায় অর্ধশতাধিক পরিবার প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতায় হাবুডুবো খাচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম স্বপন মেম্বার বলেন, শতাধিক পরিবার রাস্তা এবং ড্রেনের জন্য বর্ষা মৌসুমে মারাত্মক ভোগান্তি পোহাতে হয়।
পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডের লঞ্চঘাট এলাকার খাস পুকুর পারের সড়কটি ১০ বছর পূর্বে পুকুরের পানিতে বিলিন হয়ে। সড়কটি সংস্কার না করায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে ১০ থেকে ১২টি পরিবার পানিবন্দি থাকে। নিরুপায় হয়ে পরিবারগুলো নিজেদের টাকায় চলাচলের জন্য এখন বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করছে।
গৃহকর্তা আশরাফুল হোসেন রাগে ক্ষোভে বলেন, মোগো এ্যাহন পৌরসভা ছাইর্যা যাওন ছারা আর কোন উপায় নাই।
আমতলী সরকারী কলেজের পেছনের এক কিলোমিটার সড়কটিও বেহাল হয়ে পরেছে। আট নম্বর ওয়ার্ডের বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম দেওয়ান মজিব্রু রহমানের বাড়ির সামনে থেকে সাংবাদিক কামাল তালুকদারের বাড়ি পর্যন্ত সিসি ঢালাই সড়টির মারাত্মক খারাপ অবস্থা। এই সড়কটি ভেঙ্গে হাজার হাজার খানাকন্দের সৃষ্টি হওয়ায় ভয়তে কোন রিকসাও ওই সড়কে যেতে চায় না।
ভূক্তভোগী আবু জাফর ও মোর্শেদা বেগম নামের বাসিন্দারা বলেন, ওই রাস্তাটি এতই ভাঙ্গা যে পায়ে হেটেও আসতেও পারি না। এমনকি কোন রিকসাও এই সড়কে আসতে চায় না।
এছাড়া সাত নম্বর ওয়ার্ডের হাওলাদার বাড়ী জামে মসজিদ থেকে আট নম্বর ওয়ার্ডের ব্রীজ পর্যন্ত ৫০০ মিটার, আট নম্বর ওয়ার্ডের ফরহাদ মোক্তারের বাড়ী থেকে পিকু মৃধার বাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার সড়ক. গরুর বাজার থেকে লোছা বাজার পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার সড়কের পিচ উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে বৃষ্টির পানি জমে গর্তগুলো ভরে গেছে। এভাবে আমতলী পৌরসভার অভ্যান্তরে মূল সড়কসহ শত-শত পারিবারিক সড়কগুলি সংস্কারের অভাবে বেহাল দশায় পরিনত হয়েছে।
আমতলী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মজিবুল হায়দার বলেন, সংস্কারের জন্য সময়মত টাকা বরাদ্দ না পাওয়ায় পৌরসভার অভ্যান্তরিন ওই সড়কগুলির এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সড়কগুলি সংস্কারের জন্য বরাদ্দের চাহিদা পাঠানো হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌরসভার প্রশাসক মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, ভাঙ্গা সড়কগুলোর তালিকা করে সংস্কারের জন্য মন্ত্রনালয়ে পাঠানো হবে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে কাজ শুরু করা হবে।