জহিরুল ইসলাম শিবলু, লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দক্ষিণ হামছাদী ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়ে লজ্জা ও আত্মসম্মানের ভয়ে আত্মহত্যা করেছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীর স্ত্রী (৩২)। মৃত্যুর পর তার আট বছরের একমাত্র কন্যাশিশু এখন আশ্রয় নিয়েছে নানাবাড়িতে।
শিশুটি বারবার তার নানার কাছে জিজ্ঞেস করছে, “মা কোথায়? আমি মার কাছে যাব।” এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারছেন না তার নানাও। শিশুটির ভাষ্যমতে, ঘটনার দিন তাকে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখিয়েছিল অভিযুক্তরা। বর্তমানে সে আতঙ্ক ও ভয়ের মধ্যে সময় কাটাচ্ছে।
নিহতের বাবা বলেন, “আমার মেয়ে বিয়ের পর ভালোভাবেই সংসার করছিল। কিন্তু এমন নৃশংস ঘটনা কোনো দিন কল্পনাও করিনি। মেয়ের আত্মহত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।”
ঘটনার বিবরণ
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে গৃহবধূর আট বছরের মেয়ে নুরানি মাদ্রাসায় গেলে তিনি ঘরে একা ছিলেন। এ সুযোগে অভিযুক্ত ফারুক হোসেন, তোফায়েল আহমেদ রকি ও রিয়াজ হোসেন ঘরে ঢুকে লুকিয়ে থাকে। মেয়ে ঘরে ফিরলে তাকে চাকু দেখিয়ে বের করে দিয়ে গৃহবধূকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে তারা।
পরে আত্মসম্মানের ভয়ে গৃহবধূ গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। সন্ধ্যায় তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
প্রযুক্তির সহায়তায় গ্রেপ্তার
মৃত্যুর আগে গৃহবধূ তার ইমো অ্যাকাউন্টে স্বামীর কাছে একটি অডিও বার্তা পাঠান। সেই বার্তার ভিত্তিতে পুলিশ অভিযুক্তদের শনাক্ত করে। নিহতের বাবা বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
র্যাব-১১ এর নোয়াখালী ক্যাম্পের সদস্যরা ঢাকার রায়েরবাগ থেকে প্রধান অভিযুক্ত ফারুক হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। অন্য দুই আসামি তোফায়েল আহমেদ রকি (একজন চিহ্নিত মাদকসেবী) ও রিয়াজ হোসেন (মাছ ব্যবসায়ী) কে রায়পুর ও হামছাদী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
লক্ষ্মীপুর সদর থানার ওসি মো. আব্দুল মোন্নাফ বলেন, “ধর্ষণ ও আত্মহত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন জানানো হবে। এদের কারো রাজনৈতিক পরিচয় নেই।”