শিরোনাম
◈ গাজীপুরে আসন বাড়বে, কমবে বাগেরহাটে: ইসি ◈ জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেল সড়ক, দুর্ভোগে ২০ হাজার বাসিন্দা ◈ রামগতির সাথে বয়ারচরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন, জোয়ারের তোড়ে ব্রিজের মাটিতে ধ্বস ◈ ৫ ডি‌সেম্বর ২০২৬ সা‌লের ফুটবল বিশ্বকা‌পের ড্র ◈ কম্বাইন্ড ডিগ্রির দাবিতে বাকৃবিতে অনুষদীয় গেটে তালা দিলো শিক্ষার্থীরা ◈ উরুগু‌য়ে‌কে হা‌রি‌য়ে নারী কোপা আমেরিকার ফাইনালে ব্রাজিল ◈ সাপ ধরতে গিয়ে সাপের কামড়ে সাপুড়ের মৃত্যু ◈ ৫ আগস্ট ঘিরে নিরাপত্তা হুমকি নেই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ◈ নিউইয়র্ক বন্দুক হামলা: হামলাকারীর চিরকুটে বেরিয়ে এলো চাঞ্চল্যকর তথ্য ◈ ২০২৪ সালে জাতীয় পার্টির আয় ২ কেটি ৬৪ লাখ টাকা

প্রকাশিত : ০৮ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৩২ রাত
আপডেট : ২৯ জুলাই, ২০২৫, ০৩:০০ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

"টিকিট চাইতেই ক্ষুব্ধ বখাটেরা: আরডিএ পার্কে আনসার সদস্যকে বেধড়ক মারধর"

ইফতেখার আলম বিশাল, রাজশাহী : রাজশাহী নগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত আরডিএ পার্কে বিনা টিকিটে প্রবেশে বাধা দেওয়ায় দায়িত্ব পালনরত এক আনসার সদস্যকে নির্মমভাবে পিটিয়ে রক্তাক্ত করার অভিযোগ উঠেছে বখাটে যুবকদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতে মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করেছে চন্দ্রিমা থানা পুলিশ। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, অভিযুক্তরা প্রায়ই বিনা টিকিটে পার্কে প্রবেশ করে নারী দর্শনার্থীদের উত্ত্যক্ত করে, শ্লীলতাহানির চেষ্টা চালায় এবং পার্কের সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে চলে যায়। তাদের কারণে নিরাপদ পারিবারিক ভ্রমণ আজ হুমকির মুখে।

জানা গেছে, সোমবার (৬ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে আরডিএ নিয়ন্ত্রিত পার্কে প্রবেশের সময় হজের মোড় এলাকার সেলিমের ছেলে মো. আকাশ (২৫) ও তার সঙ্গে থাকা ১৪-১৫ জনের একটি দল বিনা টিকিটে প্রবেশের চেষ্টা করে। এ সময় গেটের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্য জাকির হোসেন তাদের টিকিট দেখাতে বললে, তারা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।

পরে আকাশের নেতৃত্বে ৬-৭ জন সংঘবদ্ধ হয়ে আনসার সদস্য জাকিরকে কিল-ঘুষি ও লাঠি দিয়ে এলোপাথাড়ি মারধর করে। এতে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর জখম হয় এবং নাকের হাড় ভেঙে রক্তপাত শুরু হয়। তার চিৎকারে আরডিএ’র কর্মচারী মো. দুলাল হোসেন ছুটে এলে তাকেও মারধর করে ফুলাফুলা জখম করে।

সঙ্গে সঙ্গে রক্তাক্ত অবস্থায় আহত জাকির হোসেনকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

পরদিন মঙ্গলবার (৭ জুলাই) রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) এক কর্মচারী চন্দ্রিমা থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। এতে আকাশকে প্রধান আসামি এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৪-১৫ জনকে আসামি করা হয়।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, অভিযুক্তরা পার্কের গেটের সামনে স্থাপিত দুটি বৈদ্যুতিক লাইট ভাঙচুর করে এবং ক্যাশ বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়। তবে ওই সময় উপস্থিত আনসার ও কর্মচারীদের প্রতিরোধের মুখে ছিনতাইয়ের চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে দুষ্কৃতিকারীরা দৌড়ে পালিয়ে যায়।

জানা গেছে, পার্কের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য বসানো এসব লাইট অত্যন্ত মূল্যবান ছিল। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সেগুলো ভেঙে পার্কের পরিবেশ ও সৌন্দর্যে আঘাত হানা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শুধু সম্পত্তি নয়, এই ঘটনার মাধ্যমে সরকারি কর্মচারীদের নিরাপত্তাও হুমকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঘটনার সময় উপস্থিত এক দর্শনার্থী মনিরা বেগম জানান, আমরা পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি। কিন্তু কিছু যুবকের এমন দাপট, এমনকি নারী দর্শনার্থীদের গায়ে সাথে হেলে আসা, বাজে মন্তব্য ছোড়া—সব মিলিয়ে আমরা আতঙ্কিত। নিরাপত্তা না থাকলে এখানে আসা অসম্ভব হয়ে যাবে।”

আরেকজন বুলবুল আহমেদ বলেন, “পার্কটা এত সুন্দর একটা জায়গা। অথচ কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে পার্কের পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে। বিনা টিকিটে প্রবেশ, কর্মচারীদের মারধর, মহিলাদের হয়রানি—এসব চলতে থাকলে পরিবার নিয়ে আর কেউ আসবে না।”

ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করে বলেন, এই সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন সময় পার্কের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ক্যামেরা, লাইট ভাঙচুর করে আর কেউ কিছু বলতে গেলেই হামলা করে। তাদের বিরুদ্ধে একাধিকবার মৌখিক অভিযোগ করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সাধারণ দর্শনার্থীরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন— পার্কের নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে, আনসারদের সংখ্যা বাড়াতে হবে এবং এমন দুষ্কৃতিকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে এই ঐতিহাসিক ও নান্দনিক পার্কের পরিবেশ ও নিরাপত্তা এক ভয়াবহ সংকটে পড়বে।

আরডিএ পার্ক শুধু রাজশাহী নয়, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত দর্শনার্থীদের অন্যতম পছন্দের স্থান। এই পার্কে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে তা পর্যটন ও স্থানীয় সামাজিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।

এ বিষয়ে চন্দ্রিমা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “আরডিএ পার্কে কর্তব্যরত আনসার সদস্যকে মারধরের ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা অন্য আসামিদের শনাক্তের কাজ চলছে। তাদের দ্রুত গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়