শাহাজাদা এমরান, কুমিল্লা: বৃহত্তর কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলের সর্ববৃহৎ স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ দীর্ঘদিন ধরেই শিক্ষক সংকটে ভুগছে। সরকারি অনুমোদিত ১৯১টি শিক্ষক পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত আছেন মাত্র ১২০ জন, বাকী ৭১টি পদ শূন্য। এই ভয়াবহ সংকটের কারণে মেডিকেলের শিক্ষা কার্যক্রম ও মানে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
বিশেষ করে অধ্যাপক পর্যায়ের সংকট প্রকট। এখানে অধ্যাপক পদে অনুমোদিত ২৯টি পদের মধ্যে ২৩টিই শূন্য। অর্থাৎ, পুরো কলেজে মাত্র ৬ জন অধ্যাপক রয়েছেন।
৪৪ বছরের পুরনো প্রতিষ্ঠান, শিক্ষক সংকটে কোণঠাসা
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৯ সালের ২৮ মে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত ধরে। ১৯৮২ সালে রাজনৈতিক পরিবর্তনের কারণে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হলেও ১৯৯২ সালের ১৫ আগস্ট থেকে পুনরায় শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয়। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ছিলেন ডা. হাবিবুর রহমান আনছারী।
বর্তমানে কলেজে প্রতি বছর ২০০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হন এবং বর্তমানে ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়েছে। ইতোমধ্যে ২৮টি ব্যাচ এমবিবিএস সম্পন্ন করেছে।
কোন বিভাগে কতজন ঘাটতি?
শিক্ষক সংকটের বিস্তারিত চিত্র হলো:
✅ সহযোগী অধ্যাপক: অনুমোদিত ৪৮, কর্মরত ৩০, শূন্য ১৮
✅ সহকারী অধ্যাপক: অনুমোদিত ৭৬, কর্মরত ৪৬, শূন্য ৩০
✅ অধ্যাপক: অনুমোদিত ২৯, কর্মরত ৬, শূন্য ২৩
✅ কিউরেটর: ২, শূন্য ১
✅ প্যাথলজিস্ট: ২, শূন্য ১
✅ বায়োকেমিস্ট ও ফার্মাসিস্ট: ১টি পদ শূন্য
✅ প্রভাষক: ৩১টি পদে ৩১ জনই কর্মরত
কর্তৃপক্ষ কী বলছে?
এত সংখ্যক শিক্ষক না থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নে কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার বলেন,
“সমস্যা হচ্ছে না এমন বলা যাবে না। তবে আমরা ম্যানেজ করে নিচ্ছি। আশা করছি, দ্রুতই এ সংকট কেটে যাবে ইনশাআল্লাহ।”
শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, “সিনিয়র শিক্ষকের সংখ্যা এত কম যে ক্লাসে সঠিক গাইডলাইন পাওয়া কঠিন। মাঝে মাঝেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পড়াতে জুনিয়র শিক্ষক বা সহকারী অধ্যাপকরা পাঠদান করেন।”
সমাধানের আশায় মেডিকেল পরিবার
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের অনেক সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা সরকারের কাছে দ্রুত শূন্য পদগুলোতে নিয়োগ দিয়ে কলেজটির শিক্ষা পরিবেশ ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়েছেন।