শাহাজাদা এমরান,কুমিল্লা : অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি সবুজে ঘেরা লালমাই পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকা যেন মাদকের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। প্রকাশ্যে ঘুরে ঘুরে বড় ধর্মপুরের লালমাই পাহাড়ে মাদকদ্রব্য বিক্রি করতে দেখা গেছে। তাদের কাছ থেকে সতর্কতার সঙ্গে নানা বয়সী মাদকসেবী মাদক কিনছিল। প্রশাসনের ধরা ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে বড় ধর্মপুর এলাকার জাফর আলীর ছেলে সাদ্দাম ও তার সহযোগী একই এলাকার স্বপন নামে এ দুই শীর্ষ মাদক ব্যাবসায়ী। গত ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর পুলিশ প্রশাসন আগের মতো সক্রিয় হতে পারেনি। আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বেপরোয়া হয়ে ওঠছে এসব মাদক কারবারিরা।
শনিবার (৩ মে) মাদক সেবন ও বিক্রি করার দৃশ্যের কয়েকটি ভিডিও ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলেও প্রশাসন এখনো কাউকে গ্রেফতার করেনি।
জানা যায়, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ বারপাড়া এলাকার ল্যাকল্যান্ড পার্কের সাথে হাইজ্জাখলা, বল্লি ফেক্টরির সাথে ওমরাইজ্জার পাড়ার পল্ট্রি ফার্মের ভেতরে ও বাহিরে, বড় ধর্মপুর উত্তর ও দক্ষিণ পাড়া, বড় ধর্মপুর কাজী হ্যাচারীর আশপাশ ও ছোট ধর্মপুর এলাকায় গাঁজা, ইয়াবা, ফেন্সি স্থানীয় কিছু অসাধু মাদক ব্যবসায়ীরা এসব বিক্রি করে ও সেবনের আড্ডা গড়ে তুলে। এতে দিন দিন মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাদ্দাম নামের ওই মাদক ব্যবসায়ী ইয়াবা বিক্রি করছে, নজির ইয়াবা সেবন করছে, রবিউল গাঁজা সেবন করছে। আর নাঈম নামের আরেক মাদক ব্যবসায়ীকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি মাদকসহ ধরার পর এলাকাবাসী সদর দক্ষিণ মডেল থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ রাত ১২ টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে গেলেও এলাকাবাসী রাত গভীর হয়ে যাওয়াই তাকে ছেড়ে দেয়।
আরও জানা যায়, মাদকের টাকা জোগাতে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষণ ও খুনের মতো ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে তারা। এছাড়াও সদর দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের একাধিক স্থানে মাদক বেচাকেনা হয় বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মতো চাইলেই পাওয়া যাচ্ছে দেশীয় চোলাই মদ,গাঁজা ও ইয়াবা সহ নানান ধরনের মাদক। মাদকের বিভিন্ন স্পট নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় ও টেলিভিশনে ভিডিও সংবাদ প্রকাশ করেও কোনো এক অজানা কারনে নির্মূল হচ্ছেনা সর্বনাশা এই মাদক বাণিজ্য। মাদক কারবারিরা রীতিমত প্রতিযোগীতায় নেমেছে মাদক বেচাকেনায়।
সচেতন নাগরিক ও রাজনীতিবিদ এডভোকেট আখতার হোসাইন বলেন, কয়েক মাস ধরে প্রতিনিয়ত চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটেই চলেছে। মাদকের প্রসারের কারণে এগুলো বেশি সংঘটিত হচ্ছে। সদর দক্ষিণে মাদকের বিরুদ্ধে সদর দক্ষিণবাসীরা এগিয়ে আসতে হবে এবং এদের প্রতিহত করতে হবে।
কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, মাদকবিক্রেতাদের বিরুদ্ধে সঠিক ও নিরপেক্ষ তথ্য পেলে কাজ করার দায়িত্ব আমার। যারা মাদক বিক্রি করবে তাদের প্রতি আমরা ততটাই নির্মম হবো
কুমিল্লা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, মাদক নির্মূলে প্রতিটি পাড়া- মহল্লায় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসতে হবে। আপনাদের মাধ্যমে মাদকের সাথে জড়িত যাদের নাম পেয়েছি তাদের বিরুদ্ধে ও এসব এলাকায় আমাদের অভিযান চলবে। সদর দক্ষিণের ওসি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখবে।