শিরোনাম
◈ ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে হাজার কোটি ডলারের গোপন আঁতাত কারা টিকিয়ে রেখেছে ◈ তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া: আপিল বিভাগে তথ্য-প্রমাণ দাখিল ◈ ‘মানবিক করিডর’ নিয়ে সরকার কোনো চুক্তি করেনি: ড. খলিলুর রহমান ◈ ‌‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ তৈরিতে সবাইকে একটু ছাড় দিতে হবে’ ◈ জোবাইদা রহমান বিএনপির নেতৃত্বে আসবেন, নাকি ফিরবেন পুরনো চিকিৎসা পেশায়? ◈ গোপনে পাকিস্তানি নারীকে বিয়ে, ভিসা লঙ্ঘনে চাকরি গেল ভারতীয় জওয়ানের! ◈ ৮০০ ডলারের নিচের পণ্যে শুল্ক বসাল ট্রাম্প, চাপে তেমু-শেয়েন, বিপাকে ডিজিটাল বিজ্ঞাপন বাজার ◈ "নির্বাচনে ব্যবহার না হলেও দেড় লাখ ইভিএমের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত, হস্তান্তর প্রক্রিয়াও ঝুলে আছে" ◈ এবার পা‌কিস্তা‌নে আই‌পিএল সম্প্রচার নি‌ষিদ্ধ ◈ ইং‌লিশ লি‌গে হে‌রেই গে‌লো আর্সেনাল

প্রকাশিত : ০৪ মে, ২০২৫, ০২:৫১ রাত
আপডেট : ০৪ মে, ২০২৫, ০২:০০ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়ায়, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নিহত নরসিংদীর হাবিবুল্লাহ

শিবপুর উপজেলার তরুণ হাবিবুল্লাহ ভূইয়া (২০), ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। সেই স্বপ্ন আঁধারের আবছা আলোয় এসে তার হাতে ধরা দিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু কজন দালাল তাকে ঠেলে দেয় মৃত্যুর মুখে।

ইতালি যাওয়া স্বপ্ন দেখা হাবিবুল্লাহ দালালের কৌশলে গিয়ে পড়েন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে। ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর হামলায় হাবিবুল্লাহ মারা গেছেন।

পরিবারের দাবি, ইতালি নিয়ে যাওয়ার আশ্বাসে একাধিক দালাল হাবিবুল্লাহকে রাশিয়ায় নিয়ে যায়। দালালরা তাকে ২০ লাখ টাকায় রুশ সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেয়। নিদারুণ কষ্ট, নির্মম অত্যাচার সহ্য করেছিলেন হাবিবুল্লাহ। পরিবার এ মৃত্যুর খবর পায় তারই এক সহযোদ্ধার মাধ্যমে।

নিহত হাবিবুল্লাহ শিবপুর উপজেলার আয়ুবপুর ইউনিয়নের ঘাসিরদিয়া গ্রামের বাসিন্দা আবু সিদ্দিক ভূইয়া ও মানসুরা বেগমের ছোট ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট ছিল সে।

পরিবার জানিয়েছে, এইচএসসি পাস করার পর থেকেই ইউরোপ যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিল হাবিবুল্লাহ। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে ব্রাহ্মন্দী গ্রামের এক দালাল ফারুকের সঙ্গে ১৫ লাখ টাকায় চুক্তি করে পরিবার। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে দালালের মাধ্যমে হাবিবুল্লাহকে সৌদি আরবে নেওয়া হয় ওমরাহ ভিসায়। সেখানে দুই মাস অবস্থান করিয়ে তাকে তুরস্ক হয়ে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রাশিয়ায় প্রবেশের সময় ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়েন হাবিবুল্লাহ। পরে শফিক নামে ঢাকার এক দালাল তাকে ছাড়িয়ে নেয় এবং ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে সুলতান নামে আরেক দালালের কাছে বিক্রি করে দেয়। এরপর হাবিবুল্লাহকে সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজের কথা বলে একটি রুশ ভাষায় লেখা চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে দিয়ে সেনা ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেন সুলতান। সেখানে তাকে যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। হাবিবুল্লাহ তখনই বুঝতে পারেন, তাকে ইউক্রেন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।

গত ২৭ মার্চ, রাশিয়ান বাহিনীর ৪৫ সদস্যের একটি ইউনিটের সঙ্গে ইউক্রেনে যুদ্ধে অংশ নেন হাবিবুল্লাহ। যুদ্ধ শেষে তারা বিশ্রামের সময় ইউক্রেনীয় বাহিনীর অতর্কিত হামলায় প্রাণ হারান। বুধবার হাবিবুল্লাহর মৃত্যুর খবর পরিবারের কাছে পৌঁছায় তার এক বাংলাদেশি সহযোদ্ধার মাধ্যমে।

হাবিবুল্লাহর বন্ধু নাইম ইসলাম অভি বলেন, রাশিয়ায় যাওয়ার পর মাঝে মধ্যে ওর সঙ্গে আমার কথা হতো। দালালরা তাকে মিথ্যে প্রলোভন দিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে গেছে। সেখানে তাকে অনেক অত্যাচার করা হয়। তাকে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করতে জোর করা হয়। সেখানে ও নিহত হলো। আমরা এর জন্য দায়ীদের বিচার চাই।

প্রতিবেশী ইব্রাহিম মিয়া বলেন, সে খুব ভালো ছেলে ছিল। ছোট ভাইয়ের মতো দেখতাম। এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না ও আর নেই। দালালদের বিচার চাই।

ছেলের মৃত্যুর খবরে পাগলপ্রায় হয়ে পড়েছেন বাবা-মা। হাবিবুল্লাহর বাবা আবু সিদ্দিক বলেন, আমার ছেলে ইতালি যেতে চেয়েছিল। দালালরা তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়েছে। চাইলে আমাদের কাছেই টাকা চাইতো, কিন্তু তারা টাকার লোভে আমার ছেলেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।

মা মানসুরা বেগম কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ছেলে দেশে ফেরার জন্য কাঁদতো, আর আমরা অসহায়ের মতো কিছুই করতে পারিনি। এত টাকা খরচ করেও আজ তাকে কফিনে দেখতে হবে? এই দালালরা অনেক মায়ের বুক খালি করেছে। আমি তাদের কঠিন শাস্তি চাই এবং সরকারের কাছে ছেলের মরদেহ ফিরিয়ে আনার আবেদন জানাই।

এ বিষয়ে নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, আমরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানতে পারিনি। যিনি নিহত হয়েছে, তার পরিবার তথ্য দিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে মরদেহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবো এবং দালালদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উৎস: বাংলানিউজ২৪

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়