টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী জামুর্কীর সন্দেশ স্বীকৃতি পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে।
শুক্রবার (২ মে) টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও মির্জাপুর উপজেলা প্রশাসনের কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল ইসলাম জানান, ২০২৪ সালের ১ এপ্রিল জামুর্কির সন্দেশ জিআই পন্যের স্বীকৃতির নিবন্ধনপত্র পাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে আবেদন করা হয়। এক বছর পর মিললো সেই স্বীকৃতির নিবন্ধন সনদপত্র।
এর আগে বুধবার বিশ্ব মেধা সম্পদ দিবস উদযাপন উপলক্ষে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠানে এ সনদ দেওয়া হয়। এতে খুশি সন্দেশের কারিগর ও স্থানীয়রা। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিল্প ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের কাছ থেকে সন্দেশের জিআই নিবন্ধন সনদ গ্রহণ করেন টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসক শরীফা হক।
জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী এলাকায় বাস করতেন জমিদার ও সনাতন ধর্মের বনেদী বংশের পরিবার। জামুর্কী গ্রামের মদন মোহন সাহা প্রথম এই সন্দেশ তৈরি করে বিক্রি শুরু করেন। তার পুত্র কালীদাস সাহা পরে এই পেশায় যুক্ত হন। দুধ, চিনি, মসলা ও পটালি গুঁড় ব্যবহার করে দুই রকমের সন্দেশ তৈরি করেন। মুলত তার হাত ধরেই ধীরে ধীরে ‘জামুর্কীর সন্দেশ’ দেশ বিদেশে খ্যাতি অর্জন করে। এখনও টাঙ্গাইলসহ আশপাশের জেলায় বিভিন্ন উৎসব, বিয়ে, ঈদ কিংবা পূজা-পার্বনে জামুর্কীর কালিদাসের সন্দেশ অন্যতম উপাদান হিসেবে খাবার টেবিলে রাখা হয়।
জামুর্কী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ডি এ মতিন ও সাবেক চেয়ারম্যান আলী এজাজ খান চৌধুরী রুবেল বলেন, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী এলাকায় স্থাপিত হয় সন্দেশের দোকান। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন সন্দেশের জন্য আসেন। তিন-চারটি দোকানে প্রতিদিন হাজার হাজার মণ সন্দেশ বিক্রি হয়। প্রতি কেজি সন্দেশ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৮০০ শত টাকায়।
সন্দেশ ব্যবসায়ী সমর সাহা, ননী সাহাসহ অনেকেই জানিয়েছেন, আগে এক কেজি সন্দেশ ২৫০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন সব কিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় এই সন্দেশের দামও বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। প্রতি কেজি সন্দেশ এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকায়।
টাঙ্গাইল জেরা প্রশাসক শরীফা হক এবং মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ বি এম আরিফুল, মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কীর সন্দেশ আন্তর্জাতিক মানের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি-নিবন্ধনপত্র পাওয়ায় আমরাও গর্বিত ও আনন্দিত। সন্দেশ তৈরির সঙ্গে যারা জড়িত সরকার তাদের যথাযত মূল্যায়ন করেছেন। আমরা আশা করছি তারা তাদের এই সুনাম ধরে রাখবে।
এর আগে টাঙ্গাইলের তাঁত শাড়ি-চমচম ও মধুপুরের আনারস জিআই পণ্য স্বীকৃতির নিবন্ধন পেয়েছে।