কল্যাণ বড়ুয়া, বাঁশখালী(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি : চট্টগ্রামের বাঁশখালী জুড়ে এবার ৭১০ হেক্টর লিচু চাষ হয়েছে বলে উপজেলা অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়।
দেশের মৌসুমী ফলের মধ্যে সুস্বাদু ফল লিচু। আর লিচুর নাম এলে প্রথমে আসে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কালীপুরের লিচুর কথা। কালীপুরের রসালো লিচু বাজারে আসতে শুরু করেছে। বৃষ্টি না হওয়ায় প্রথমে চাষিরা দুশ্চিন্তায় ছিলেন। মাঝে দুয়েকবার বৃষ্টি হওয়ায় মোটামুটি ফলন হয়েছে বলে অভিমত চাষিদের। ঝড়–বৃষ্টির আশঙ্কায় যেসব লিচুতে রং ধরেছে চাষিরা সেসব লিচু বাজারে তুলতে শুরু করেছেন। তবে শুরুতে লিচুর স্বাদ ও পুষ্টিগুণ নিয়ে কথা উঠলেও আর কয়েকদিনের মধ্যে পরিপূর্ণ স্বাদ ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন লিচু বাজারে পাওয়া যাবে বলে জানালেন তারা।
শুরুতে একশত লিচু ৩০০ *৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও কিছুদিনের মধ্যে তা কমে আসবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। বাঁশখালী উপজেলার কালীপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত। এছাড়া সাধনপুর, পুকুরিয়া, বৈলছড়ি, গুনাগড়ি, পুকুরিয়া, জঙ্গল জলদি, জঙ্গল চাম্বল, পুইছড়িসহ প্রতিটি ইউনিয়নে বাণিজ্যিক ও ঘরোয়াভাবে পাহাড়ি ও সমতল এলাকায় লিচুর চাষ হচ্ছে।
জানা গেছে, এবার বাঁশখালীতে ৭১০ হেক্টর জমিতে লিচু চাষ হয়েছে। এছাড়া মধ্যে কালীপুরের ৩০০ হেক্টরসহ বিভিন্ন বাসা বাড়িতে ঘরোয়া ভাবে সহ পুরো উপজেলায় সাড়ে ৮শ হেক্টর বাগানে বিভিন্ন জাতের লিচুর চাষ হয়েছে। এসবের মধ্যে কালীপুরের স্থানীয় জাত ছাড়াও রাজশাহী বোম্বে, বারি–১, ২, ৩ ও ৪ এবং চায়না–৩ জাতের লিচু রয়েছে।
দক্ষিণ সাধনপুর এলাকার লিচু চাষী মোঃ আমজাদ বলেন, আমার বাগানে প্রায় ২ শতাধিক গাছ রয়েছে। গত বছরের চেয়ে ফলন এবার কম হয়েছে, বৃষ্টি না হওয়াতে ফলন ও ভাল হয়নি । তবে সে বাগানের লিচু ১লক্ষ ৮০হাজার টাকায় লাগিয়ত করা হয়েছে বলে জানান তিনি ।
কালীপুর ইজ্জতনগর এলাকার লিচু চাষী রবিউল ইসলাম বলেন,আমার প্রায় ২একর জায়গা জুড়ে লিচু চাষ করলে ও এবার আগের মত বেশি ফলন হয়নি । তারপরেও বর্তমানে লিচু বিক্রি উপেযোগি হওয়াতে পাইকারি হিসাবে হাজার লিচু তিন সাড়ে তিন হাজার দরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে তিনি জানান ।
স্থানীয়রা বলছেন, কালীপুরের লিচু আকারে একটু ছোট, কিন্তু স্বাদে অতুলনীয়। তাই সারা দেশের মানুষের কাছে এখানকার লিচুর কদর আছে। উপজেলার লিচু বাগানগুলোতে গিয়ে দেখা যায়, গাছে গাছে থোকায় থোকায় পাকা লিচু ঝুলছে। পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালীপুর,পৌরসভা সদর জলদী হয়ে বৈলছড়িসহ বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ি এলাকায়, সড়কের পাশে, বাড়ির আঙিনায়, লোকালয়ের বাগানে এখন শুধু লিচু আর লিচু।
তারা আরো জানান বাঁশখালীর অধিকাংশ লিচু কালীপুর ইউনিয়নে উৎপাদিত হয়। এখানকার লিচু রসালো ও সুস্বাদু। তাই দূরদূরান্ত থেকে লিচু ব্যবসায়ী ও ক্রেতারা এসে এখান থেকে লিচু নিয়ে যান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবু ছালেক বলেন, বাজারে আসতে শুরু করেছে বাঁশখালীর কালিপুরের বিখ্যাত রসালো লিচু। এবার ঝড়-বৃষ্টির আধিক্য না থাকায় বাঁশখালীতে লিচুর ভাল ফলন হয়েছে। কালিপুর ইউনিয়নের ৩০০ হেক্টরসহ পুরো বাঁশখালীর ৭১০ হেক্টর বাগানে স্থানীয় ও উন্নত জাতের লিচু চাষ হয়েছে। এর মধ্যে রাজশাহীর বোম্বে, বারি ১,২,৩,৪ ও চায়না-৩ জাতের লিচুও চাষ হয়েছে। সাধনপুর, কালিপুর, চাম্বল, পুঁইছড়ী, বৈলছড়ীসহ বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় লিচু চাষ হয়েছে। আবহাওয়া এমন অনুকুল থাকলে ভাল ফলন হবে আশাবাদী। কালিপুর ঋষিধামসহ বেশ কিছু এরিয়ায় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল বলে তিনি জানান।