এম আর আমিন,চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম পাহাড়তলী রেলের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকের দপ্তরে গোডাউনের তালা ঠিক, প্যাকেটও ঠিক আছে, কিন্তু প্যাকেটের ভেতর নেই মালামাল। ক্যাবল, স্প্রিংসহ রেলের প্রায় অর্ধকোটি টাকার মালামাল হঠাৎ উধাও হয়ে গেছে।
এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেল প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) দপ্তরের গোডাউনে। তবে কখন চুরি হয়েছে তা কেউ জানে না।গত সোমবার (২০ জানুয়ারি) বিকালে আরও মালামাল গোডাউনে রাখতে গেলে বিষয়টি নজরে পড়ে।
এ ঘটনায় তিন সদস্যর তদন্তে কমিটি গঠন, আহ্বায়ক এসিওএস মো. আলমগীরকে করা হয়েছে।
গোডাউন থেকে মালামাল উধাও হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক পরিদর্শন নিয়ন্ত্রক পাহাড়তলী গোলাম মোর্শেদ। তিনি বলেন, ‘গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই কারা চুরি করেছে, তা জানা যায়নি। জানা গেছে, চট্টগ্রামের পাহাড়তলী রেল প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পূর্ব) দপ্তরের ভেতরের গোডাউনে রেলের সব ধরনের মালামাল রাখা হয়। এখানে বিদেশি মালামালও থাকে। এর মধ্যে প্যাকেটে স্প্রিং, নাট, ক্যাবল থেকে শুরু করে বিদেশি অনেক দামি মালামালও রাখা হয়। সোমবার দায়িত্বরত কর্মচারী গোডাউনে (এ ও বি) মালামাল রাখতে গেলে দেখেন, অনেকগুলো প্যাকেটে ভেতর থেকে মালামাল উধাও হয়ে গেছে। পরে তিনি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানান।
এর আগে ২০২৪ সালে মালামাল সরবরাহ না করে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ অভিযোগ উঠে।পাহাড়তলী সাবেক সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রকসহ ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রেলের দরপত্র ও কেনাকাটায় ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের
রেলের ১০ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রেলের দরপত্র ও কেনাকাটায় ঠিকাদারের সঙ্গে যোগসাজশে অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনায় দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এ বাদী হয়ে দুটি মামলা দায়ের করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আহসানুল কবীর পলাশ।
মামলার (নং- চট্টগ্রাম: ৩৩১০০ তাং- ১৭/০৯/২০২৪) অভিযুক্তরা হলেন—বাংলাদেশ রেলওয়ের প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক ফরিদ আহমেদ, সাবেক অতিরিক্ত প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (বর্তমানে উপসচিব-বেজা) মুহাম্মদ রাশেদুল আমিন, প্রধান যন্ত্র প্রকৌশলী (পূর্ব) তাপস কুমার দাস এবং ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজির স্বত্বাধিকারী এএসএম ইকবাল মোর্শেদ। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতা অপব্যবহার করে পিপিআর-২০০৮-এর ধারা লঙ্ঘন করে, মালামাল সরবরাহ না করে সরকারের ১ কোটি ৩৭ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ক্ষতি/আত্মসাৎ করে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
এদিকে মোঃ আলমগীর কবির)সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (পরিদর্শন) বাংলাদেশ রেলওয়ে পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করেন ১৬/০১/২০২৫ নং- ৫৪.০১.১৫৪৩,৪৬৫.২৬.০০২.২২- পাহাড়তলী দপ্তরের গোডাউনের পেছনে ৬নং সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছন্ন পাওয়া প্রসঙ্গে।বিষয়ে বর্ণিত ডিসিওএস (পরিদর্শন), পাহাড়তলী দপ্তরের গোডাউনের পেছনে পরিদর্শনের সময় ৬নং সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পাওয়া যায়। সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে দেখা যায় (মেইল প্রেরণ করা হলো) গত ২৫/১২/২০২৪ সন্ধ্যা ৬.৫০ টায় তিন জন দূর্বিত্তকারী একজন অপর জনের কাধে উঠে সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে এবং অন্যান্য সিসি ক্যামেরাগুল্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে।
অতি জরুরী ভিত্তিতে দপ্তরের নিরাপত্তা প্রহরা জোরদার করা বিশেষ প্রয়োজন। কে বা কাহারা সিসি ক্যামেরার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে তা সিসি ক্যামেরার ডিডিও ফুটেজ পরীক্ষা করে আগামী ০৫ (পাঁচ) কর্ম দিবসের মধ্যে অত্র দপ্তরকে জানানোর এবং দুষ্কৃতিকারীদের গ্রেফতারের জন্য নির্দেশ করা হয়।এ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে পাহাড়তলী সিসিএস অফিসে।গুদাম থেকে মূল্যবান সরঞ্জাম উধাও হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের পরিদর্শন নিয়ন্ত্রক গোলাম মোর্শেদ।তিনি বলেন, গুদাম থেকে সরঞ্জাম চুরির বিষয়টি পরিকল্পিত। মিলেছে চুরির আলামতও। প্রাথমিকভাবে তিন জনকে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। এরপরও ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে রিপোর্ট প্রদান করবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, গুদামে প্রবেশে দরজার তালা অক্ষত, প্যাকেটও সব ঠিকঠাক, কিন্তু প্যাকেটের ভেতরে নেই অনেক সরঞ্জাম। ক্যাবল, নাট স্প্রিংসহ রেলের প্রায় অনেক টাকার সরঞ্জাম চুরি হয়ে গেছে। যা নির্ধারণ করতে সময় লাগবে। এ জন্য রেজিষ্টার মেনটেইনের কাজ চলছে।বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, এসব চুরির ঘটনা অনেকটা সাজানো এ যেন ‘সর্ষের মধ্যেই ভূত’।আর চুরি হওয়া এসব মালামালের বাজারমূল্য কমপক্ষে ৭০ লাখ টাকা।সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর ওপর একাধিক দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয়। এতে স্বাভাবিক কাজ নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছেন।
পাহাড়তলীর প্রধান সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক মো. বেলাল হোসেন সরকার বলেন, ‘চুরির ঘটনা তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে দায়িত্বে গাফেলতি ও দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার মতামত লিখুন :