মোঃ সোহেল, নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালী জেলায় একের পর এক গড়ে ওঠছে অবৈধ ইটভাটা। এইসব ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পড়ানো হচ্ছে কাঠ। ফসলী জমি ও বসতি ঘিরে গড়ে ওঠা ইটভাটার বিষাক্ত ধোয়ায় বাড়ছে রোগ-ব্যাধি। ফসলের ক্ষতির পাশাপাশি বিপর্যয় গড়ছে পরিবেশের। অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়রা।
গত রোববার (১২ জানুয়ারি) এমন তথ্যযুক্ত সংবাদ প্রকাশ করে আমাদের সময় ডটকম। আমাদের সময় ডটকমে সংবাদ প্রকাশের পর বুধবার (১৫ জানুয়ারি) নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় দুটি অবৈধ ইটভাটা গুড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। একই সঙ্গে ইটভাটা দুটির মালিক পক্ষকে ২ লাখ টাকা করে মোট ৪ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
পরিবেশ অধিদপ্তর নোয়াখালীর উপপরিচালক মিহির লাল সরদার জানান, পরিবেশ অধিদপ্তর নোয়াখালী এবং সুবর্ণচর উপজেলা প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে উপজেলার পশ্চিম চরজব্বর গ্রামের মাহিন ব্রিকস (পূর্ব নাম আলিফ ব্রিকস) এবং চর বাইগ্যা গ্রামের আল্লার দান ব্রিকসে (এডিবি ব্রিকস) ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯ আলোকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়।
এসময় পরিবেশগত ছাড়পত্র, লাইসেন্স ব্যতিত নিষিদ্ধ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন ও অবৈধভাবে মাটি কাটার অপরাধে ইটভাটা দুটির কিলন ও চিমনী ভেঙ্গে অকেজো করে দেওয়া হয় এবং ২ লক্ষ টাকা করে মোট ৪ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড আদায় করা হয়।
অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন, সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া আক্তার লাকী। এসময় সুবর্নচর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ছেনমং রাখাইন, পরিবেশ অধিদপ্তর নোয়াখালীর সহকারী পরিচালক নুর হাসান সজীবসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর নোয়াখালীর তথ্য মতে, জেলায় বৈধ ইটভাটার সংখ্যা রয়েছে ১১২টি, অবৈধ ইটভাটা ৪১টি। তবে সরেজমিনে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, জেলায় অবৈধভাবে চলছে শতাধিক ইটভাটা। এইসব অবৈধ ইটভাটায় দেদারছে ফসলি জমির ওপরের টপ সয়েল (মাটি) কেটে শিশু শ্রমের মাধ্যমে তৈরী ইট বাংলা সেমনির মাধ্যমে কাঠ কেটে পড়ানো হচ্ছে। আবার স্থায়ীয় পর্যায় থেকে সংগ্রহকৃত গাছ লাকড়ি করার জন্য ভাটার মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে অবৈধ করাত কল। ইটভাটার মাটি ও গাছ বোঝাই ভারি যানবাহন চলাচলে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ সড়ক।
সুবর্ণচর উপজেলায় ১৭টি ইটভাটার মধ্যে ১৩টিই অবৈধ। আলিফ ব্রিকস ও আল্লার দান ব্রিকস ছাড়াও এই উপহেজলায় মের্সাস তাহেরা ব্রিকস, মের্সাস এ.কে.বি ব্রিকস’সহ আরো ১১টি ইটভাটা অবৈধভাবে চলছে। একই চিত্র ফুটে ওঠে জেলার দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ায়ও। ওই উপজেলায় ২০টি ইটভাটা দেদারছে চলছে। সবগুলো ইটভাটাই বাংলা, পোড়ানো হচ্ছে কাঠ।
হাতিয়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমজাদ উদ্দিন জানান, হাতিয়ায় ২০টি ইটভাটা রয়েছে। ইটভাটাগুলোর বৈধতা রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি জানান, কার কি কাগজ আছে, তা তো জানিনা। তবে সবগুলো ভাটাই বাংলা সেমনিতে চলছে। জেলার সদর উপজেলায় ইটভাটা রয়েছে ৭টি। এরমধ্যে ৫টি ইটভাটাই অবৈধভাবে চালানো হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ইটভাটাগুলোর কাগজপত্র দেখে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। একই চিত্র জেলার সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কবিরহাটসহ সব কটি উপজেলায়। জেলাজুড়ে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা ইটভাটায় পরিবেশ বিপর্যয়ে দেখা দিয়েছে রোগ-ব্যাধি, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে ফসলের।
আপনার মতামত লিখুন :