শিরোনাম
◈ আইনি সহায়তা দিতে ‘পরামর্শ কর্মকর্তা’ নিয়োগ দেবে সরকার ◈ মিঠাপানির ঝিনুকে উৎপাদিত মুক্তার গহনা প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর  ◈ কোরবানিতে চাহিদার চেয়ে পশু বেশি: প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ◈ বাংলাদেশকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ভারত সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছে: মির্জা ফখরুল ◈ ক্যাসিনোহোতা সেলিম প্রধানের প্রার্থিতা বাতিল, দিতে হবে জরিমানা ◈ বিএনপি দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র কাজে দেয়নি: পররাষ্ট্রমন্ত্রী  ◈ যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান পরিস্কার করেছেন ডোনাল্ড লু: ওবায়দুল কাদের  ◈ এনইসি সভায় ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট অনুমোদন ◈ বর্তমান ডামি সরকার দেশটিকে একটি লুটপাটের দেশ বানাতে চাচ্ছে: রিজভী ◈ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের শেয়ার হস্তান্তরে স্থিতাবস্থা, কাজ বন্ধ

প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:৫৭ দুপুর
আপডেট : ২৯ এপ্রিল, ২০২৪, ০৩:৫৭ দুপুর

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

সূর্য সেন ও নূতন চন্দ্র সিংহের আত্মত্যাগ তরুণদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করবে: সূর্য সমাবেশে বক্তারা

মারুফ হাসান: [২] চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের ৯৪তম বর্ষ স্মরণে রাজধানীর কবিতা ক্যাফেতে শনিবার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হলো সূর্য সমাবেশ ২০২৪।

[৩] সূর্য সেন সঙ্ঘ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটিতে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন- ড. মেসবাহ কামাল, আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া, ড. মোহাম্মদ বারী, শরীফ শমশির, জুলফিকার আলী মাণিক ও মনোয়ারা বেগম তামান্না। 

[৪] ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে ‘যুব বিদ্রোহ’ সংঘটিত হলে চট্টগ্রাম ৪ দিনের জন্য ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীন থাকে। ইন্ডিয়ান রিপাবলিকান আর্মি চট্টগ্রাম শাখার সর্বাধিনায়ক সূর্য সেনের নেতৃত্বে অস্ত্রাগার, রেলওয়ে ও টেলিফোন, টেলিগ্রাফ অফিস আক্রমণ করে স্বাধীন ভারতের পতাকা উড়ানো হয়। ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে মাস্টারদারা পিছু হটেন।

[৫] অনুষ্ঠানে সূর্য সেনের শেষ চিঠি পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী রানা আহমেদ এবং নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘পুরো মানুষের গান’ পড়ে শোনান আবৃত্তিশিল্পী নাসিমা খান বকুল।

[৬] এবারের সূর্য সমাবেশ উৎসর্গ করা হয় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহকে। তাই শুরুতেই বক্তব্য রাখেন কুণ্ডেশ্বরীয়ান অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন’র সভাপতি মনোয়ারা বেগম তামান্না। তিনি শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহের বর্ণময় জীবন ও চট্টগ্রামে নারী শিক্ষায় তাঁর অবদান তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২৫ মার্চ কালরাতে অপারেশন সার্চ লাইটের মধ্য দিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী যে গণহত্যা চালায় তার ফলে সারাদেশে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। এর কয়েকদিনের মধ্যেই চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালেয়ের শিক্ষকদের প্রায় ২৮টি পরিবার প্রাণ বাঁচাতে চট্টগ্রাম ছেড়ে রাউজানে চলে আসেন নূতন চন্দ্র সিংহের আশ্রয়ে। নূতন চন্দ্র সিংহ তাঁদের পরিবারকে নিরাপদে আশ্রয় দেন এবং পরবর্তীতে তাঁদের ভারত চলে যেতে সর্বাত্মক সহায়তা করেন। তাঁকে হত্যা করার এটিও অন্যতম কারণ ছিলো পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোসরদের।  

[৭] সাংবাদিক জুলফিকার আলী মাণিক বলেন, এখন সময় এসেছে সত্যটা যা ঠিক তা সকলের সামনে তুলে ধরা। নূতন চন্দ্র সিংহকে পাকিস্তানী আর্মির সহায়তায় হত্যা করেছে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী হেরে গেলে তাদের ক্ষোভ গিয়ে পরে নূতন চন্দ্র সিংহের প্রতি। কেননা স্থানীয় হিন্দু-মুসলিম কমিউনিটি নূতন চন্দ্রের মতকে গুরুত্ব দিতো। আর তিনি নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিলেন। যার ফলে ফজলুল কাদের চৌধুরী হেরে যান। এই প্রতিহিংসার বশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৩ এপ্রিল সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর নেতৃত্বে পাকিস্তানী আর্মির একটি দল নূতন চন্দ্র সিংহের বাড়ি আক্রমণ করে তাঁকে হত্যা করে লুটপাট চালায় এবং তাঁর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে।

[৮] নাট্যব্যক্তিত্ব ড. মোহাম্মদ বারী বলেন, জাতি হিসেবে আমাদের মধ্যে ধর্মান্ধ ও মৌলবাদ অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি যারা সাংস্কৃতিক চর্চা করছেন তাদের মধ্যেও বাংলার বদলে আরবি শব্দ বেশি ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। অথচ ৫২ সালে আমরা রক্ত দিয়েছি বাংলা ভাষার জন্য। আমাদের চিন্তার পথ সুদৃঢ় করবে মাস্টারদা সূর্য সেন ও নূতন চন্দ্র সিংহের দেশপ্রেম ও তাঁদের আদর্শিক জীবন।

[৯] লেখক ও গবেষক শরীফ শমশির বলেন, আমার বোন শহীদ নূতন চন্দ্র সিংহ প্রতিষ্ঠিত কুণ্ডেশ^রী স্কুলে পড়েছে সেই সুবাাদে আমি এই মহান দেশপ্রেমিক সম্পর্কে জানি। তিনি জানতেন, মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তাঁকে হত্যা করা হতে পারে। তবু তিনি দেশ ছেড়ে যাননি। দেশকে ভালোবেসে তিনি আত্মদান করেছেন। অনুষ্ঠানের আগে এখানে আয়োজকদের মধ্যে প্রিয়াংকা আচার্য্য প্রশ্ন তুলেছেন যে, চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ নিয়ে বাংলাদেশ থেকে কোনও পূর্ণাঙ্গ বই এখন পর্যন্ত কেন প্রকাশিত হয়নি। আসলে যারা এ যুব বিদ্রোহে যারা জড়িত ছিলেন, তারা দেশভাগের পর ভারতে চলে যান বা যেতে বাধ্য হন। সেখানে গিয়ে তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ চট্টগ্রাম সশস্ত্র এ বিপ্লব নিয়ে স্মৃতিচারণামূলক বই লিখেছেন। সেগুলো সবই এককজনের ব্যক্তিগত পারস্পেক্টিভ থেকে লেখা। আর এ ঘটনায় অনেকগুলো লুপ হোল আছে যা একজন গবেষক যখন সম্পূর্ণ এর মধ্যে প্রবেশ করবেন তখনই খুঁজে পাবেন। তো আমরা আশা করতে পারি সামনে এ নিয়ে অবশ্যই ভালো একটি গবেষণাধর্মী গ্রন্থ প্রকাশিত হবে। আমরা আজকে ভাগ্যবান যে আমাদের মধ্যে আজ এমন একজন উপস্থিত আছেন যিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দেশের পট পরিবর্তন হলে সেই আশির দশকে প্রথমবার সূর্য সেনকে নিয়ে কাজ করেছেন। আমিনুল ইসলাম ভূইয়ার কাজ আমাদেরকে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ নিয়ে কাজ করতে উৎসাহী করেছে।

[১০] বিশিষ্ট অনুবাদক ও গবেষক আমিনুল ইসলাম ভূইয়া বলেন, আসলে ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগের পর এদেশ থেকে অনেক বিপ্লবী মাতৃভূমি ছাড়তে বাধ্য হয়। তো পাকিস্তানীরা কেন হিন্দু বিপ্লবীদের নিয়ে কাজ করবে। তাই এই বাংলায় তাদের নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ তেমন হয়নি। আশির দশকে আমি সরকারি কাজে চট্টগ্রাম থাকায় আমার গুরু আহমদ ছফার নির্দেশে ‘সম্রাট বনাম সূর্য সেন মামলার ঐতিহাসিক মামলার রায়’ অনুবাদ করে প্রকাশিত হয়। এরপর আমি সূর্য সেনকে নিয়ে আরও বিস্তারিত কাজ করতে নানা ধরনের তথ্য ও ছবি সংগ্রহ করি। কিন্তু সেসব হারিয়ে যাওয়ায় সে কাজে হাল ছেড়ে দেই। চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের উপর একটি প্রামাণ্য বই বাংলাদেশ থেকে বের হওয়া এখন সময়ের দাবি। নতুন গবেষকদের এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে।

[১১] ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল বলেন, দুঃখজনক হলেও এটা সত্য যে, সূর্য সেন, প্রীতিলতার কর্মকাণ্ড আজ সাবঅলটার্ন ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। মূলধারার ইতিহাসে তাদের পাঠ নগণ্য বা খুবই কম। যদিও এর বিপরীতটা হওয়ার কথা ছিলো। গর্বিত বাঙালী হিসেবে চট্টগ্রামের সর্বাধিনায়ক সূর্য সেনের সশস্ত্র অভ্যূত্থান ছোটবেলা থেকেই আমাদের অবশ্য পাঠ্য হওয়া দরকার। সূর্য সেন সঙ্ঘের আজকের ছোট্ট প্রয়াস সেই কাজকে একদিন তরান্বিত করবে।

[১২] অনুষ্ঠানে কবি সঞ্জীব পুরোহিত ও হাসিদা মুন দেশাত্ববোধক কবিতা পাঠ করেন। আর দ্রোহের গান পরিবেশন করেন হাবিব আহমেদ নচি। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন মোহাম্মদ ইসহাক আলী। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব

 

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়