নিউজ ডেস্ক : সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে মা–বাবা ও নানাকে হারানো শিশু সাকিরা আক্তার (৬) আবার গতকাল রোববার বিকেলে মায়ের কথা জানতে চেয়েছে। মাকে তার কাছে আসতে বলতে স্বজনকে অনুরোধ করেছে। প্রথম আলো
এদিকে ফোনে ছোট মামার সঙ্গে কথা বলেছে সাকিরা। বলেছে, মামা, তুমি কই? মামা তার জন্য জামা ও সানগ্লাস কিনে রেখেছে, সেই খবর জেনে আনন্দও প্রকাশ করেছে সে। সাকিরার স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু সার্জারি বিভাগের ২০৩ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে ছোট্ট শিশুটি। সোমবার হাসপাতাল থেকে তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হতে পারে। আপাতত মেজ মামা রফিকুল ইসলামের গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বাসায় নেওয়া হবে তাকে।
গত শুক্রবার সকাল সাতটার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে সেন্ট মার্টিন পরিবহন নামের একটি বাসের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা উল্টে প্রাণ হারিয়েছে সাকিরার বাবা রিয়াজ খান (৪০), মা শারমিন আক্তার (৩২) ও নানা আবদুর রহমান ব্যাপারী (৬০)। শিশু সাকিরাও তাঁদের সঙ্গে ছিল। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে।
মহাখালীতে জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সাকিরার নানি শাহেদা বেগমকে দেখতে ওই দিনই বরিশাল থেকে লঞ্চে করে ঢাকায় এসেছিল পরিবারটি। সদরঘাট থেকে তারা মাতুয়াইলে সাকিরার ছোট মামা তানভীর আহমেদের বাসায় যাচ্ছিল। একই অটোরিকশায় জায়গা না হওয়ায় সাকিরাদের তুলে দিয়ে বড় মামা নজরুল ইসলাম একটি বাসে উঠেছিলেন। আর বেশ কয়েক দিন আগেই সাকিরার ভাই ফাহিম খান ওরফে শাহরিয়ার (১১) ছোট মামার বাসায় বেড়াতে এসেছে।
রোববার মুঠোফোনে সাকিরার ছোট মামা তানভীর আহমেদের সঙ্গে কথা হয়। তিনি জানান, বোন, দুলাভাই ও বাবার দাফনের জন্য পরিবারের সবাই বরিশালে এসেছিলেন। তিনি ও ফাহিম এখনো বরিশালে। বড় দুই ভাই ঢাকায় ফিরে গেছেন। হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দিলে আজ সোমবার তাঁর মেজ ভাই নিজের বাসায় নিয়ে যাবেন সাকিরাকে। আর তিনি ঢাকায় ফেরার পর সাকিরা ও ফাহিমকে নিজের কাছে রাখবেন।
তানভীর বলেন, ‘ওরা (সাকিরা ও ফাহিম) আমার সঙ্গে বেশি ঘনিষ্ঠ। আমার বোনও (শিশু দুটির মা) সবকিছুতে আমার ওপর নির্ভর করত। আমি ওদের নিজের কাছে নিয়ে রাখব।’ তিনি আরও বলেন, ‘মিষ্টির (সাকিরার ডাকনাম) সঙ্গে কথা হয়েছে। আমাকে বলছে “মামা তুমি কই, আমাকে দেখতে আসো না কেন?” ওকে জানালাম, একটু কাজ আছে। বরিশালে আছি। কাজ শেষ করে তোমার কাছে চলে আসব। বলেছি, তোমার জন্য জামা ও সানগ্লাস কিনে রেখেছি। সেটা শুনে বেশ খুশি হয়েছে।’ শিশু দুটি এবং নিহত বাবা, বোন ও দুলাভাইয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি। মাতুয়াইলে প্যাকেজিংয়ের ব্যবসা করেন তানভীর আহমেদ।
গতকাল বিকেলে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সাকিরার মাথার ব্যান্ডেজ খুলে দেওয়া হয়েছে। সে ঘুমাচ্ছে। তার বড় মামির বোন শিরীন সুলতানা দুর্ঘটনার পর থেকে হাসপাতালে শিশুটির দেখভাল করছেন। তিনি বলেন, ‘মুখে খাচ্ছে সাকিরা। একবার নানির কাছে যেতে চেয়েছিল। মায়ের কথাও জানতে চেয়েছে।
বলেছে, “মাকে বলো, আমার কাছে আসতে।” নানি অসুস্থ, তাই নানির কাছে আছে মা, নানি সুস্থ হলে মা আসবে—এটা বলে সাকিরাকে প্রবোধ দিয়েছেন তিনি।
শিরীন সুলতানা জানিয়েছেন, সাকিরার চিকিৎসা বিনা মূল্যে করে দিচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরীক্ষা–নিরীক্ষা কোনো কিছুর জন্য অর্থ দিতে হচ্ছে না তাঁদের।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগের পরামর্শক মোস্তফা আল মামুন গতকাল বলেন, শিশুটির পাঁজরের হাড় ভেঙে যাওয়ায় দ্বিতীয়বার এক্স–রে করা হয়েছে। এক্স–রে রিপোর্টে অবস্থা অপরিবর্তিত এসেছে। সোমবার তৃতীয়বার এক্স–রে করে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
পাঁজরের ভাঙা হাড় মাস ছয়েকের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে। শিশুটির পেটের সিটিস্ক্যান করা হয়েছে। কোনো সমস্যা পাওয়া যায়নি। সার্বিকভাবে শিশুটি ভালো আছে—জানান মোস্তফা আল মামুন।