অনলাইন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পদত্যাগের দাবিতে উত্তাল ব্রিটিশ রাজনীতি। ব্রিটেনে লকডাউনের মধ্যে মদের পার্টি করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। এই তথ্য সামনে আসার পর তার পদত্যাগ দাবি করছেন তারই দলের শীর্ষ নেতারা। এছাড়া বিরোধী দল ও সাধারণ ব্রিটিশদের মধ্যেও তার পদত্যাগের দাবি জোরালো। ইত্তেফাক
যদিও জনসন ঐ ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন এবং পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন। এই পরিস্হিতির মধ্যেই জনসন সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দল কনজারভেটিভ পার্টির কয়েক জন বিদ্রোহী এমপিকে ‘ব্ল্যাকমেইল’ করা ও ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় কার্যত আরো চাপের মুখে পড়েছেন জনসন। তবে তিনি জানিয়েছেন, এমপিদের ব্ল্যাকমেইল করার কোনো তথ্য বা নথি তিনি দেখেননি।
২০২০ সালে ব্রিটেনে যখন কঠোর লকডাউন চলছিল, সে সময় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং বাসা ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে একটি মদের পার্টি হয়, যাতে যোগ দিয়েছিলেন জনসন। সারা দেশের মানুষ যখন কোভিড বিধিনিষেধ মেনে বাড়িতে ছিল, তার মধ্যে আয়োজিত এই পার্টির খবর ফাঁস হওয়ার পর জনগণের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া। এছাড়া গত বছর ১৬ এপ্রিল রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ স্বামী প্রিন্স ফিলিপের শেষকৃত্যের আগের রাতে জনসনের কার্যালয়ে কর্মীরা আরো দুটি মদের পার্টির আয়োজন করেছিল।
স্কটল্যান্ডে কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ডাগলাস রস আগেই জানিয়েছেন, তিনি দলের ১৯২২ কমিটির কাছে লিখবেন, যাতে দলের নেতৃত্ব পরিবর্তনের প্রক্রিয়াটি শুরু করা যায়। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভের নতুন নেতা নির্বাচন করতে হলে অন্তত ৫৪ জন এমপির প্রত্যেককে দলের কাছে আলাদাভাবে লিখতে হবে। তার দলের এমপিরা ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে অনাস্হা জ্ঞাপন করে ১ হাজার ৯২২ কমিটিকে চিঠি লেখার প্রস্ত্ততি নিয়ে ফেলেছেন। এখন পর্যন্ত কনজারভেটিভ দলের ৫৮ জন এমপি খোলাখুলি প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন।
ইংল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলের বুরি সাউথ থেকে নির্বাচিত কনজারভেটিভ পার্টির এমপি ক্রিশ্চিয়ান ওয়েকফোড জানিয়েছেন, তিনি দলত্যাগ করে বিরোধী দল লেবার পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন। ওয়েকফোর্ড এবং ছয় জন কনজারভেটিভ এমপি অনাস্হা চিঠি জমা দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিবিসির এক খবরে বলা হয়েছে, সিনিয়র টোরি নেতা উইলিয়াম রাগ সরকারকে অভিযুক্ত করে বলেছেন, নিজ দলের বিদ্রোহী এমপিদের ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা হচ্ছে। যারা জনসনের পদত্যাগ চেয়েছেন তাদেরকে সরকারের মন্ত্রীরা চাপ দিচ্ছেন, ভয়-ভীতি দেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, বিদ্রোহী এমপিদের তহবিল কাটছাটের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বাজে প্রচারণার ভয় দেখানো হয়েছে।
লেবার পার্টির উপনেতা অ্যাঙ্গেলা রায়নার বলেছেন, এই অভিযোগ খুবই দুঃখজনক। লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টির নেতা স্যার এড ডাভে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী জনসন প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে মাফিয়া বসের মতো বেশি আচরণ করছেন। হাউজ অব কমন্সের স্পিকার স্যার লিন্ডসে হইলে বলেন, অভিযোগ গুরুতর, উদ্বিগ্ন এমপিরা চাইলে লিখিত অভিযোগ জানাতে পারেন। তবে জনসনের পদত্যাগ দাবি করা টোরি এমপি অ্যান্টনি মাংনাল বলেছেন, তাকে কোনো ভয়-ভীতি দেখানো হয়নি।
অন্যদিকে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট বলেছে, এমন কোনো প্রমাণ আছে বলে তারা জানেন না। এমন প্রমাণ থাকলে সতর্কতার সঙ্গে দেখা হবে। বরিস জনসন বলেছেন, কোনো এমপি হুমকি পেলে পুলিশের কাছে যেতে পারেন।
প্রসঙ্গত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হওয়া জনসনের দল ২০১৯ সালের নির্বাচনে রেকর্ড জয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে। এখন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় তার দলের এমপিরাই লজ্জিত হচ্ছেন।