মাছুম বিল্লাহ: [২] ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের প্রাক্তন হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী একটি লেখা বৃহস্পতিবার দেশটির প্রভাবশালী থিংক ট্যাংক অবজারভার রিসার্স ফাউন্ডেশন (ওআরএফ) এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি লিখেছেন, চীন থেকে আমদানি করা সামরিক সরঞ্জামের উপরে বাংলাদেশের অতি নির্ভরতা ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে এবং এর ফলে বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম কেনার ক্ষেত্রে ভারতের তরফে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার আর্থিক সাহায্যের প্রস্তাবের এখনও বাস্তবায়ন হয়নি।
[৩] তিনি লিখেছেন, ধর্মীয়-সামাজিক ক্ষেত্রে, বাংলাদেশে চরমপন্থী ইসলামিক সংগঠনগুলির উত্থানও যথেষ্ট আশঙ্কার জন্ম দিয়েছে। ধর্মের অবমাননা করার ভুয়ো প্রেক্ষিতে মিথ্যা প্রচারের মাধ্যমে সম্প্রতি দুর্গাপূজার সময়ে হিন্দুদের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা আমাদের আরও এক বার মনে করিয়ে দেয়, ইসলামিক চরমপন্থীদের নাশকতার পরিকল্পনার কথা, যারা যে কোনও মূল্যে ভারতকে প্রত্যুত্তর দিতে চায়। এটি অবিলম্বে নিয়ন্ত্রণ না করা হলে তা দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষতি করতে পারে।
[৪] পিনাক রঞ্জন লিখেছেন, নদীর জলবণ্টন, পরিযায়ী সমস্যা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং বাংলাদেশে হিন্দুদের উপরে সাম্প্রদায়িক হিংসার বিষয়গুলির জন্য কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়ে গিয়েছে। উভয় দেশের চোরাচালানকারী মাফিয়াদের দ্বারা সৃষ্ট পরিস্থিতি সীমান্তে গুলি চালানোর মতো ঘটনাকে উস্কে দেয়। এ ক্ষেত্রে একটি বহুমুখী উদ্যোগ প্রয়োজন, পারস্পরিক দোষারোপ নয়। চোরাচালানের মূল কারণটিকে শনাক্ত ও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ভারতীয় সীমান্তকে রক্ষা করতে উপযুক্ত প্রতিরোধ ক্ষমতার প্রয়োজন যা কোনও মতেই অস্বীকার করা যাবে না।
[৫] ঢাকা-দিল্লির সম্পর্ক নিয়ে তিনি লিখেছেন, এক দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভারত এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এক ইতিবাচক পথে চালিত হয়েছে। দু্টি প্রধান দ্বন্দ্ব-সামুদ্রিক সীমানা নির্ধারণ সমস্যা এবং ভূখণ্ডের সীমান্ত নির্ধারণ ২০১৪-১৫ সালে সমাধান করা হয়েছে।
[৬] তিনি লিখেছেন, ভূ-রাজনৈতিক, ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক কারণে বাংলাদেশ ভারতের জন্য সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ ভারতের সর্ববৃহৎ বাণিজ্যিক অংশীদার এবং দুই দেশের বার্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১০০০ কোটি মার্কিন ডলার। বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের জন্য ভারতের আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৮০০ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। বৃদ্ধি পেয়েছে দুই দেশের পারস্পরিক যোগাযোগ ব্যবস্থাও।
[৭] ভারতের সাবেক এই কূটনীতিক লিখেছেন, বিভাজন পূর্ববর্তী আন্তঃসীমান্তবর্তী রেলওয়ে সংযোগস্থলগুলি পুনরায় চালু করা হচ্ছে, হাইড্রোকার্বন সরবরাহকারী পাইপলাইন, চট্টগ্রাম হয়ে আগরতলা পর্যন্ত পণ্য পরিবহণ এবং কক্সবাজারের সমুদ্রতলবর্তী কেবল সংযোগকে কাজে লাগিয়ে আগরতলা পর্যন্ত সাইবার প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা, প্রথাগত এবং পরমাণু শক্তি উৎপাদন কেন্দ্র নির্মাণ, সংযুক্ত বৈদ্যুতিক গ্রিডের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং ব্যাপকতর জনসংযোগ উপমহাদেশে বাংলাদেশকে ভারতের অন্যতম প্রধান উন্নয়নের সঙ্গী করে তুলেছে।
[৮] তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশের অর্থনীতির আকর্ষক বৃদ্ধি দেশটিকে তার এল ডি সি-র (সর্বাপেক্ষা কম উন্নত দেশ) মধ্যে একটি হওয়ার তকমা থেকে মুক্তির দোরগোড়ায় এনে দাঁড় করিয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশি পণ্যের উপর থেকে ‘করমুক্ত’ হওয়ার সুবিধে উঠে যাবে এবং তার প্রভাব পড়বে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রফতানি এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কে। ফলে সি ই পি এ-এর (কম্প্রিহেনসিভ ইকনমিক পার্টনারশিপ এগ্রিমেন্ট) এক নতুন দৃষ্টান্ত দ্বিপাক্ষিক ভাবে স্থাপন করতে হবে। ভারতের ‘লুক ইস্ট পলিসি’ এবং বিমস্টেক ও বি বি আই এন-এর মতো আন্তঃআঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক জোটের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আগামী দিনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।