আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় প্রিন্স হ্যারি পুলিশি নিরাপত্তার জন্য এমনকী গাঁটের পয়সা খরচ করতে চাওয়ার পরও ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রদপ্তর তা মঞ্জুর করেনি। তাই সরকারের এ সিদ্ধান্ত পাল্টে পুলিশি সুরক্ষার জন্য অর্থ খরচের অনুমতি পেতে বিচার বিভাগীয় পর্যালোচনা চাইছেন হ্যারি।
এ লক্ষ্যে সরকারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন তিনি। স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে কয়েক মাস আগে আইনি চিঠিও পাঠিয়েছেন হ্যারি। এতদিন বিষয়টি নিয়ে কিছু শোনা না গেলেও এখন সামনে আসছে সে খবর।
হ্যারি প্রথম ২০২০ সালে নিজ খরচে ব্রিটেনে পুলিশি নিরাপত্তা পাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়।
এরপর ২০২১ সালে লন্ডনে একটি দাতব্য অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে হ্যারির গাড়ি পাপারাজ্জিদের তাড়ার মুখে পড়ার পর সেপ্টেম্বরে তিনি নিজ খরচে সুরক্ষা পাওয়ার বিষয়টির বিচার-বিভাগীয় পর্যালোচনার দাবি জানান। এর মধ্য দিয়ে প্রথম সরকারের বিরুদ্ধে হ্যারির আইনি ব্যবস্থার পথে হাঁটার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
এখন আইনি প্রক্রিয়ায় হ্যারির অগ্রগতি হলে তিনি হাই কোর্টে সরকারি মন্ত্রীদের সঙ্গে লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়বেন। যুক্তরাজ্যে সাম্প্রতিক সময়ে রাজপরিবারের কোনও সদস্যের সঙ্গে সরকারের আইনি লড়াইয়ের এটিই প্রথম ঘটনা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিবিসি জানায়, ব্রিটিশ রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যের পদ ছেড়ে দেওয়ার পর প্রিন্স হ্যারি এবং তার স্ত্রী, সন্তানরা যুক্তরাজ্যে সরকারি সুরক্ষা পান না।
ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের নাতি প্রিন্স হ্যারি এবং তার মার্কিন স্ত্রী মেগান মার্কল স্বাধীনভাবে নিজেদের ক্যারিয়ার গড়ার কথা বলে ২০২০ সালে নিজেদের রাজ দায়িত্ব-কর্তব্য থেকে প্রত্যাহার করে নেন। বর্তমানে তারা যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে বসবাস করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার থেকেও তাদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়নি। তাদের নিজস্ব সুরক্ষা বাহিনী রয়েছে এবং তারা নিজেরাই সে খরচ বহন করেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য সফরের সময় প্রিন্স হ্যারির যে ধরনের সুরক্ষা প্রয়োজন সুরক্ষা বাহিনী তাকে তা দিতে সক্ষম নয় বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।
আইনজীবীদের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘সেই ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় প্রিন্স হ্যারি এবং তার পরিবার নিজেদের বাড়িতে যেতে পারছেন না।”উদাহরণ হিসেবে বিবৃতিতে ২০২১ সালের জুলাই মাসের ওই দাতব্য অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার অভাবের ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রিন্স হ্যারি যে এর আগেও দু’বার ব্রিটিশ সরকারের কাছে তাকে সে দেশে পুলিশি সুরক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে সব খরচ বহনের আর্জি জানিয়েছিলেন সেকথাও বলেছেন আইনজীবীরা।
এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের পক্ষ থেকে ব্রিটিশ সরকারের কাছে জানতে চাওয়া হলে এক মুখপাত্র বলেন, “যুক্তরাজ্য সরকারের ব্যক্তি নিরাপত্তা সুরক্ষা ব্যবস্থা ‘কঠোর এবং সমানুপাতিক।”
“এবং তাদের দীর্ঘদিনের নীতি হল, কোনও ব্যক্তির সুরক্ষা আয়োজনের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য না দেওয়া। তাতে ওই ব্যক্তির নিরাপত্তা ব্যবস্থা ব্যাহত হতে পারে।”আইনি প্রক্রিয়াধীন কোনও বিষয় নিয়ে বিস্তারিত কথা বলাও ‘সঠিক হবে না’ বলে মন্তব্য করেন ওই মুখপাত্র।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্য সরকারের একটি কমিটি সে দেশে প্রিন্স হ্যারিকে পুলিশি সুরক্ষা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। ওই সিদ্ধান্তের আইনি ভিত্তিকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান হ্যারি।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমে এ খবর ফাঁস হওয়ার পর প্রিন্স হ্যারি এ বিষয়ে সব তথ্য জনসম্মুখে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও বিবৃতিতে জানান তার আইনজীবীরা।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘যুক্তরাজ্য সবসময়ই প্রিন্স হ্যারির নিজের বাড়ি থাকবে এবং সেটি এমন একটি দেশ যেখানে তিনি চাইবেন তার স্ত্রী ও সন্তানেরা নিরাপদ থাকুক। পুলিশি সুরক্ষা ছাড়া তারা এখানে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবেন।”