আন্তর্জাতিক ডেস্ক: নাগাল্যান্ড-মায়ানমার সীমান্তে সেনা সংঘর্ষে ১৩ জন গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় ইতোমধ্যেই পরিস্থিতি উত্তাল। ক্ষুব্ধ জনসাধারণের ক্ষোভের মুখে পড়েছে সেনাবাহিনী। এক সেনা নিহতও হয়েছেন সংঘর্ষে। রোববার (৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় আসাম রাইফেলসের ক্যাম্পে হামলা চালানোর সময়ে আরও এক গ্রামবাসী নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সন্ধ্যার দিকে আসাম রাইফেলসের একটি ঘাঁটিতে আক্রমণ করে গ্রামবাসীদের একাংশ। পুলিশের দাবি, নিরাপত্তারক্ষীদের ঘাঁটি ভেঙে জ্বালিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল বিক্ষোভকারীদের। ওই ঘটনায় আত্মরক্ষা করতে গিয়েই আরও এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। শনিবার রাত থেকে এখনও পর্যন্ত মোট ১৫ জন মারা গিয়েছেন বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
রোববার ভোর থেকে নাগাল্যান্ডের মন জেলার ওটিং অঞ্চলে যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলছে, তার জেরে জারি হয়েছে কারফিউ। সমস্ত যানবাহন চলাচলের উপর চলছে নিষেধাজ্ঞা। কেবল জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করার অনুমতি মিলছে। ১৪৪ ধারা জারি গোটা এলাকায়। দায়ের হয়েছে খুনের মামলা।
নতুন করে যাতে উত্তেজনা যাতে ছড়াতে না পারে, সে কারণে মন জেলা জুড়ে ইন্টারনেট এবং এসএমএস পরিষেবা আগেই বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।
রোববার ভোরে মায়ানমার সীমান্তে, নাগাল্যান্ডের মন জেলায় জঙ্গিদমন অভিযানে গিয়েছিল সেনাবাহিনী। তাদের কাছে খবর ছিল, সেখানে বেশ কয়েকজন জঙ্গি জড়ো হয়েছে। তাদের আক্রমণের জন্য রাস্তায় ফাঁদ পাতে সেনাবাহিনী। পুলিশ জানিয়েছে, সেনাবাহিনী ভুল করে নিরীহ গ্রামবাসীদের জঙ্গি ভেবেছিল। সেজন্য বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা সেনা জওয়ানদের ঘেরাও করেন। সেনাবাহিনী ‘আত্মরক্ষার্থে’ গুলি চালায়। তখনই ১৩ জন গ্রামবাসী নিহত হন। সাধারণ জনতা সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এর পরে ফের আরও এক গ্রামবাসীর মৃত্যু হয় সন্ধ্যায়।
সেনাবাহিনী থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, নির্দিষ্ট সূত্রে খবর পেয়ে মন জেলার তিরু অঞ্চলে অভিযান চালানো হয়েছিল। তার পরে দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গিয়েছে। সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ স্তর থেকে ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে বিবৃতিতে বলা হয়, মন জেলার ঘটনায় সেনাবাহিনীর কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। এক সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইট করে বলেন, ‘নাগাল্যান্ডের মন জেলায় যা ঘটেছে, তা গভীর উদ্বেগজনক। মৃতদের পরিবারের উদ্দেশে গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। রাজ্য সরকার স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি যাতে ন্যায়বিচার পান, তার ব্যবস্থা করা হবে।’
নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেইফিই রিও টুইট করে বলেন, মন জেলার ওটিং অঞ্চলে যা ঘটেছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। আমি ওই ঘটনার নিন্দা করছি। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে ন্যায়বিচার পান, সেজন্য উচ্চপর্যায়ের সিট গঠিত হয়েছে। সবাইকে শান্ত থাকার আবেদন জানাচ্ছি।
সূত্র: আনন্দবাজার।
আপনার মতামত লিখুন :