নিউজ ডেস্ক: অমিক্রন ধরনের সংক্রমণের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা করোনা মহামারির চতুর্থ ঢেউয়ে প্রবেশ করেছে। তবে দেশটির হাসপাতালগুলোয় এখনো চাপ তৈরি হয়নি বলে জানান দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জো ফাহলা। এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার শিশুদের মধ্যে অমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির খবর পাওয়া গেছে। খবর এএফপি ও আল–জাজিরার।
আজ শুক্রবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে জো ফাহলা বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকার নয়টি প্রদেশের মধ্যে সাতটিতে নতুন এ ধরনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। আশা করা হচ্ছে, এ ধরন খুব বেশি মানুষের প্রাণ নিতে পারবে না।’ তিনি দেশবাসীকে টিকার দুই ডোজই নেওয়ার আহ্বান জানান। বলেন, ‘এটিই অমিক্রনের বিরুদ্ধে সেরা সুরক্ষা।’
কঠোর লকডাউনের মতো পদক্ষেপ ছাড়াই অমিক্রনের হাত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সুরক্ষা দেওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা চতুর্থ ঢেউ সামাল দিতে পারব। আমরা অমিক্রন সামলে নিতে পারব। এ ক্ষেত্রে মূল করণীয় সম্পর্কে আমরা জানি। সামনে আমাদের উৎসবের মৌসুম আছে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেসের শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী মিচেল গ্রুম জানান, খুব অল্প সময়ের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকায় অমিক্রন সংক্রমণ নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসকেরা জানান, অমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে পাঁচ বছরের কম বয়সের শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। আর ১০ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের হাসপাতালে ভর্তির হার বেশি।
বয়সভিত্তিক বিবেচনায় দক্ষিণ আফ্রিকায় অমিক্রনে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন ৬০ বছরের বেশি বয়সী ব্যক্তিরা। দ্বিতীয় অবস্থানে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা। দেশটির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেসের বিজ্ঞানী ওয়াসিলা জাসাত বলেন, ‘সব বয়সী মানুষ অমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে আসছেন। তবে শিশুদের মধ্যে এ হার বেশি।’
এ বিষয়ে মিচেল গ্রুম আরও বলেন, ‘হাসপাতালে শিশুদের জন্য শয্যা প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন। কারণ, কম বয়সী রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় অমিক্রন খুব দ্রুত ছড়াচ্ছে।’
শিশুদের মধ্যে অমিক্রন বেশি শনাক্ত হওয়ার পেছনের কারণ খুঁজতে গিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা টিকাদানের সীমাবদ্ধতাকে চিহ্নিত করেন। তাঁদের মতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় ১২ বছরের কম বয়সীদের করোনার টিকা দেওয়া হয়নি। এখন যেসব শিশু ও তাদের অভিভাবকের করোনা শনাক্ত হচ্ছে, তাঁরা বেশিরভাগই টিকা নেননি।
দক্ষিণ আফ্রিকার মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের প্রধান অ্যাঞ্জেলিক কোয়েটজি আল–জাজিরাকে বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তাতে মনে হচ্ছে অমিক্রন খুব বেশি ভয়ংকর রূপ নিতে পারবে না। এ ধরনটি দেখে মনে হচ্ছে, এটি খুব দ্রুত ছড়ায় এবং এখন পর্যন্ত আমরা এ ধরনে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যে উপসর্গ দেখছি, তা খুবই সামান্য। কিন্তু আমাদের এ নিয়ে সচেতন থাকতে হবে। কারণ, আমরা জানি না, কোন রোগীর অবস্থা খারাপ হবে, আর কার হবে না। এ বিষয়ে আগামী দিনগুলোতে তথ্য জানা যাবে।’
সম্প্রতি দক্ষিণ আফ্রিকায় শনাক্ত হয় করোনার নতুন ধরন বি.১.১.৫২৯। এর নাম দেওয়া হয়েছে অমিক্রন। ধারণা করা হচ্ছে, ডেলটাসহ করোনার আগের সব ধরনের চেয়ে এটি অনেক বেশি সংক্রামক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) আশঙ্কা, নতুন এ ধরন বিশ্বের জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। তবে অমিক্রন ধরন কতটা সংক্রামক কিংবা কতটা মারাত্মক, তা নিয়ে এখনো নিশ্চিত হতে পারেননি বিজ্ঞানীরা। এ নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে বিশ্বে এখন পর্যন্ত অমিক্রনে আক্রান্ত কারও মৃত্যু হয়নি বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
আপনার মতামত লিখুন :