কাকন রেজা
মৃত্যুদিনে মওলানা ভাসানীকে নিয়ে লিখিনি। তাকে নিয়ে লিখলে যে সত্য উঠে আসবে তাকে হজম করার মতো পাকস্থলী হালসময়ের নেই বলেই লেখা হয়নি। তবে তাকে নিয়ে অনেকের লেখা পড়লাম এবং হাসলাম। মূল সত্যিটা লেখার সাহস না থাকলে, কেন লিখেন। শুধু শ্রদ্ধা জানিয়ে ছেড়ে দেন। পারলে মওলানাকে মওলানার মতো উপস্থাপন করুন। তার মতো ‘খামোশ’ বলার সাহস অর্জন করুন। আমার সাহস নেই, তাই লিখার চেষ্টা করিনি।
সাহস না থাকার কারণ, বললাম তো হজম করার ক্ষমতা নেই হালসময়ের। কখনো কখনো নিজেরও ‘খামোশ’ থাকতে হয়। কারণ সবাই মওলানা নন, লাল মওলানা হওয়া সহজ কথা নয়। এই সময়ে তার চেয়ে চলুন, কিছু উন্নয়নের কথা বলি। নদীর নিচ দিয়ে টানেল, মাথার ওপর দিয়ে রাস্তা এসবের গল্প করি। কিংবা আলাদিনের গল্প। ‘হুকুম করুন মালিক’ জাতীয় রূপকথা। কর্পোরেট আর করাপশন মিলে মানুষকে এখন দাসের জায়গায় নামিয়ে নিয়ে এসেছে। বলা হতো, ‘জনগণ সকল শক্তির মূল’। এখন সেই শক্তিমান জনগণ নামক ‘জিন’ ক্ষুদ্র প্রদীপে বন্ধ। এখন আলাদিনের সময়, জনসকল হুকুমের দাস। চারদিকে বিরাজমান ‘হুকুম করুন মালিক’ অবস্থা। এমন বেহাল সময়ে ‘খামোশ’ এই উচ্চারণটা বড় দরকার।
শেষ করি হায়দার আকবর খান রনো’র ‘শতাব্দী পেরিয়ে’ থেকে উদ্ধৃত করে। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিলের সে কথা। মওলানা ভাসানীর একটি চিঠি নিয়ে লিখেছেন রনো। নিচে তুলে দিলাম- পাকিস্তানের সঙ্গে কনফেডারেশনের চেষ্টা হচ্ছে। আমাদের প্রতি ভাসানীর উপদেশ- ‘তোমরা ইহা মানিবে না। যুদ্ধ চালাইয়া যাইবে।’ চিঠির শেষ লাইনটি ছিলো পরিচিত গানের একটি লাইন ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে।’ শেষ কথা : একলা চলার সাহস আর শক্তি এখন আর ক’জনার আছে, যেমন ছিলো লাল মওলানার।
লেখক : সাংবাদিক ও কলামিস্ট