নিউজ ডেস্ক: সার্ভার জটিলতার কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ই-পাসপোর্ট নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। এমনও হয়েছে একদিনে ৩০ হাজারের মতো আবেদন পেন্ডিং হয়ে গেছে। ফলে যেসব গ্রাহক জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট করতে দিয়েছেন তাদেরই পাসপোর্ট হাতে পেতে সময় লেগেছে দুই থেকে চার মাসের মতো। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর সূত্রের বরাতে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) বিবিসি বাংলা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। আরটিভি
প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্রুত এই সংকটের সমাধান না হলে আবেদন জমে থাকার সংখ্যা অচিরেই লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। আবার যারা দেরি করে হলেও পাসপোর্ট হাতে পেয়েছেন তাদের পাসপোর্টের তথ্যে রয়েছে নানা অসংগতি সেটা সংশোধনে আরেক দীর্ঘ প্রক্রিয়ার জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন তারা।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন সম্প্রতি বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেলোশিপে যোগ দিতে ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সার্ভারের ধীর গতির কারণে অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম পূরণেই তার লেগে যায় এক মাস। তারপর কোনোভাবেই অনলাইনে সেই ফর্ম জমা দিতে না পেরে তিনি আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে যান এবং পরিচিত এক কর্মকর্তার সাহায্য নিয়ে দরখাস্ত জমা দেন।
এরপর ১৫ থেকে ২১ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট বুঝিয়ে দেওয়ার কথা থাকলেও তাকে অ্যাপয়েন্টমেন্টের তারিখ দেওয়া হয়েছে সামনের বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে। এই অবস্থায় শুধু পাসপোর্ট জটিলতায় ফেলোশিপ হারানোর শঙ্কায় আছেন তিনি।
ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম অনলাইনে ফর্ম পূরণ করতে। কিন্তু এতো স্লো, বার বার হ্যাং করে। শেষ পর্যন্ত পরিচিত একজনের সাহায্য নিতে বাধ্য হলাম। আর এতদিনে পুলিশ ভ্যারিফিকেশন হয়নি। পাসপোর্ট যে কবে পাবো কে জানে।’
এদিকে, মালয়েশিয়ার প্রবাসী শ্রমিক ইলিয়াস হোসেন গত সাত মাস ধরে ঢাকার আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসে বার বার ধরনা দিয়েও এখনও নিজের ই-পাসপোর্ট বুঝে পাননি। নিজের এমআরপি পাসপোর্টের মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তিনি ই-পাসপোর্টে নবায়ন করতে চাইছেন। কিন্তু নামের বানান ভুল থাকায় বার বার ফিরে যেতে হচ্ছে।
‘যতবারই যাই, খালি বলে প্রসেসিং চলতেছে, কালকে আসেন, কালকে আসলে বলে সার্ভারে সমস্যা, অপেক্ষা করেন। দিন তারিখ কিছুই বলে না’, তিনি বলেন।
একইভাবে জেবুন নেছা বেগমের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ ও চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যাওয়াও আটকে আছে, সময় মতো এই ই-পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ার কারণে।
তিনি বলেন, ‘ভিসার মেয়াদ যাওয়ার পরে পাসপোর্ট দিয়ে কী করবো? যদি কোনো সমস্যা থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি ঠিক করুক।’
এসব অভিযোগের বিষয়ে ই-পাসপোর্ট প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার কমে যাওয়ার পর যখন লকডাউন শিথিল করা হয় তখন থেকেই পাসপোর্ট অফিসে প্রবাসী কর্মীসহ, পাসপোর্টপ্রত্যাশীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
তিনি বলেন, অনেকের মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও তারা ই-পাসপোর্টের আবেদন করছেন। একসাথে হঠাৎ এতো বিপুল সংখ্যক আবেদনের কারণে এমন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া পাসপোর্টের এই সার্ভার জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সনদ, অর্থ পরিশোধের কয়েকটি সার্ভারের সাথে যোগাযোগের ভিত্তিতে কাজ করে। ওইসব সার্ভারে দুর্বলতার প্রভাবেও ই-পাসপোর্টের প্রক্রিয়াকরণে জটিলতার সৃষ্টি করে বলেও তিনি জানান।
সাইদুর রহমান বলেন, ‘সার্ভারে অনেক বেশি হিট পড়লে, তাছাড়া সার্ভার আপগ্রেড করতে হয়, মডিফাই করতে হয়। এজন্য সাময়িক সমস্যা হয়। আবার অনেক সময় অন্য গেটওয়েতে সার্ভারে ঝামেলা থাকলেও আমাদের কাজ আটকে যেতে পারে। সেখানে আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া আর উপায় নেই।’
এই জটিলতার পেছনে মানুষের অসচেতনতাও অনেকাংশে দায়ী বলে তিনি মনে করছেন। এমন অভিযোগও রয়েছে যে, অনেক গ্রাহক একই ইমেইল আইডি ব্যবহার করছেন, যেখানে কোনো ইমেইল পাঠানো হলে জবাব মেলে না।
বর্তমানে যত পাসপোর্টের আবেদন পড়ছে তার সিংহভাগই ই-পাসপোর্টের। কিন্তু প্রতিদিন এই বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট ক্লিয়ারেন্সের যথেষ্ট লোকবল নেই। আছে সীমাবদ্ধতাও। সেক্ষেত্রে প্রতিদিন এমন হাজার হাজার পেন্ডিং পাসপোর্টের জট খোলা হবে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের সশরীরে পাসপোর্ট অফিসে এসে সেখানকার হেল্প ডেস্কে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়েছেন ই-পাসপোর্ট প্রকল্প পরিচালক সাইদুর রহমান।
এছাড়া যেকোনো পাসপোর্ট কর্মকর্তার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করলেও সমস্যার সমাধান দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে তিনি জানান।