শিরোনাম
◈ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি: কী পাচ্ছে বাংলাদেশ, কী হারাতে পারে? ◈ রাতেই সোহরাওয়ার্দীতে জড়ো হচ্ছেন জামায়াতের নেতাকর্মীরা (ভিডিও) ◈ চাপাতি হাতে ব্যাগ ছিনিয়ে পুলিশের সামনেই হেঁটে গেলো ছিনতাইকারী, ভিডিও ভাইরাল ◈ রাশিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত ভারতের বৃহত্তম তেল শোধনাগার নায়ারা রিফাইনারির ওপর ইইউর নিষেধাজ্ঞা ◈ রাতের আকাশে ভেসে উঠলো ‘নাটক কম করো পিও’ (ভিডিও) ◈ জটিল ভয়ানক যে রোগে আক্রান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প! ◈ কুড়িগ্রামে চাঁদা দাবি করা জামায়াতের সেই নেতা সাময়িক বহিষ্কার ◈ বড়াইগ্রামে এক বিষয়ে পরীক্ষা দিয়ে দুই বিষয়ে দুই পরীক্ষার্থী ফেল! ◈ টাঙ্গাইলে পুলিশ হেফাজতে বিএনপি নেতার রহস্যজনক মৃত্যু ◈ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ তলিয়ে দেখা দরকার: শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি

প্রকাশিত : ০৮ নভেম্বর, ২০২১, ০২:১৩ রাত
আপডেট : ০৮ নভেম্বর, ২০২১, ০২:১৩ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

প্রভাষ আমিন: আসলে সরকার বা পরিবহন মালিক কারো কাছেই সাধারণ মানুষের কোনো মূল্য নেই

প্রভাষ আমিন
দেশজুড়ে পথে পথে কতো মানুষের কতো দুর্ভোগ, কতো হাহাকার, অসুস্থ মানুষের কান্না, অসহায় মানুষের চিৎকার, নারী, শিশু, বৃদ্ধ মানুষের অসহায়ত্বের কান্না কোনোদিন পৌঁছাবে না পরিবহন মালিক বা আমাদের নীতিনির্ধারকদের কানে। অসহায়ত্বের ধরনগুলো একেকটা একেকরকম। কক্সবাজার বা কুয়াকাটা বা কোনো পর্যটন এলাকায় গিয়ে সপরিবারে আটকা পড়েছেন। সময় শেষ, বাজেট শেষ, হোটেল ছেড়ে দিয়েছেন, এখন কোথায় যাবেন? অনেক বছর পর বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন, সঙ্গে অনেক লাগেজ। মায়ের কাছে যাবেন বলে প্রাণ কাঁদে। ছোট্ট শিশুর চিকিৎসার জন্য ঢাকা এসেছিলেন মা। চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল ছেড়ে দিয়েছে। শিশুকে নিয়ে মা গেলেন গাবতলী। এখন সেখানেই বসে আছেন। হাসপাতালে ফেরার উপায় নেই, ঢাকায় থাকার মতো কোনো স্বজন নেই, হোটেলে থাকার মতো পয়সা নেই, এখন অসুস্থ এই শিশু নিয়ে এই অসহায় মা কী করবেন? শুক্রবার ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের স্নাতক শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা।

এ ছাড়া ১৯টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির নিয়োগ পরীক্ষাও ছিলো সেদিন। কতো প্রস্তুতি, কতো স্বপ্ন পরিবহন মালিকদের খামখেয়ালীতে ধুলায় মিশে গেলো। অনেকে দৌড়ে, হেঁটে, রিকশায়, সিএনজিতে ১৫/২০ মিনিট পর পরীক্ষার হলে পৌঁছলেও ঢুকতে পারেননি। পরীক্ষার হলের সামনের বাতাস ভারি হয়েছে শিক্ষার্থী আর চাকরি প্রার্থীদের কান্নায়। রাজপথে রাজপথে কতো মানুষের গল্প, কান্না, অভিশাপ কোনোদিনই হয়তো ছুঁতে পারবে না আমাদের পাষাণ হৃদয়।

অনেকে বলছেন ‘ধর্মঘট’, অনেকে বলছেন ‘অঘোষিত ধর্মঘট’। আসলে কিন্তু কোনোটাই নয়। এটা স্রেফ সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে নিজেদের দাবি আদায়ের ঘৃণ্য ও বেআইনি কৌশল। যতো দুর্ভোগ, তাদের বার্গেইন পাওয়ার ততো বাড়বে। আমরা মানি আর না মানি সবকিছুরই একটা নিয়ম আছে। ধর্মঘট ডাকারও নিয়ম আছে। দাবি মানার জন্য অন্তত ১৫ দিন সময় দিয়ে ধর্মঘট ডাকতে হয়। আর ১৫ দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘট ডাকলে মানুষের দুর্ভোগ তেমন হয় না। সবাই যার যার মতো গুছিয়ে বসতে পারেন। হুট করে বিনা নোটিশে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়ে সাধারণ মানুষকে মাইনকা চিপায় ফেলতে পারলেই কেল্লা ফতে। দুর্ভোগ যতো বেশি ক্ষমতাও ততো বেশি, দাবি আদায়ের সুযোগও ততো বেশি।

পরিবহন মালিকরা বলছেন, বাড়তি দামের ডিজেলে গাড়ি চালালে তাদের পোষাবে না, তাই তারা গাড়ি চালানো বন্ধ রেখেছেন। তাদের যুক্তি মানলাম। কিন্তু তাহলে সিএনজিচালিত গাড়ি বন্ধ কেন? আসলে খলের কখনো ছলের অভাব হয় না। তাদের মূল লক্ষ্য মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়। ২/৪ দিন লসে গাড়ি চালালে তাদের ব্যবসা শেষ হয়ে যাবে না। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে বাসভাড়া বাড়বে, এটা জানা কথাই। এরই মধ্যে ০৭/১১/২১ ইং বৈঠকও ডাকা হয়েছে। মাঝের দুইটা দিনও তাদের সইলো না। বাস ভাড়া যে বাড়বেই এটা মালিকরাও জানেন, তারপরও সারাদেশকে অচল করে দেওয়া কেন? এটা আসলেই বার্গেইন পাওয়ার বাড়ানোর কৌশল। ডিজেলের দাম বেড়েছে ২৩ ভাগ, ভাড়াও বাড়বে ২৩ ভাগ। কিন্তু মালিকরা চান ৫০ ভাগ বাড়াতে। এইটুকুর জন্যই এতোকিছু।

আসলে সরকার বা পরিবহন মালিক কারও কাছেই সাধারণ মানুষের কোনো মূল্য নেই। ওবায়দুল কাদের একটা নামকাওয়াস্তে আহŸান জানিয়েছেন বটে, কিন্তু সে আহŸান কানে তোলেনি মালিকরা। একবার ভাবুন তো পরিবহন মালিকরা যা করছে, তা যদি বিএনপি বা জামায়াত করতো, তাহলে কী দাঁড়াতো বিষয়টা? এতোক্ষণে ১০ হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা, দেশজুড়ে ধরপাকড় শুরু হয়ে যেতো। শাপলা চত্বর থেকে লাখ পাঁচেক মানুষকে সরাতে যে সরকারের ঘণ্টাদুয়েক লেগেছিলো, তাদের সময়ে কীভাবে মানুষকে অনির্দিষ্টকাল দুর্ভোগের হুমকি দেওয়া সম্ভব? যে সরকার বিএনপি-জামায়াত বা ভিন্নমতের মানুষের কাছে ফ্যাসিস্ট, সেই সরকার পরিবহন মাফিয়াদের কাছে এমন নতজানু কেন? তাহলে কি যারা মানুষকে বেশি ভোগান্তি দিতে পারবে, তাদের ক্ষমতাই সবচেয়ে বেশি?

আমি একটু ভিন্নভাবে ভাবতে চাই। এখন যারা পরিবহন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করেন, তারা সবাই সরকার সমর্থক। আর তাদের পালের গোদাকে সবাই চেনেন, সরকারের সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খান। এই যে ধর্মঘট ডাকার নিয়মে না গিয়ে হুট করে গাড়ি চালানো বন্ধ করে মানুষকে জিম্মি করে ফেলা যায়, এটা শাজাহান খানের প্যাটেন্ট করার মতো আবিষ্কার। দাবি আদায়ের সহজতম কৌশল আবিষ্কার করায় মালিক-শ্রমিকরা গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বা সাত রাস্তার ট্রাক স্ট্যান্ডে তার আবক্ষ মূর্তি স্থাপন করে পূজা করতে পারে। কিন্তু ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ আজীবন তাতে থুথুই দেবে। আমার ধারণা যান চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে সরকারের প্রচ্ছন্ন সায় আছে। না হলে ০৪/১১/২১ ইং জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার দিনই বাসভাড়া সমন্বয়ের বৈঠকটি হতে পারতো। তবে সবচেয়ে ভালো হতো, আগে বাসভাড়া বাড়িয়ে পরে তেলের দাম বাড়ানো এবং দুটি একই সঙ্গে কার্যকর করা। এখন পরিবহন মালিকরা চাচ্ছে দুর্ভোগ বেশি হোক, তাতে দাবি বেশি আদায় হবে। সরকারও যেন বসে কখন অতিষ্ঠ জনগণ ফেসবুকে দাবি তোলে, আমরা আর পারছি না, ভাড়া বাড়িয়ে দাও। দুই পক্ষই মানুষের ধৈর্যের পরীক্ষা নিচ্ছে। তাদের কাছ থেকেই দাবিটা ওঠাতে চাচ্ছে। আর পরিবহন মালিকদের সঙ্গে সরকারের ফারাকও নেই। পরিবহন মালিকরা বিনা নোটিশে গাড়ি বন্ধ করেছে। সরকারও বিনা নোটিশে, কোনো গণশুনানি ছাড়া তেলের দাম বাড়িয়েছে। সব আসলে একই গোয়ালের।

তবে এবার পরিবহন শ্রমিকরাও মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। গাড়ি না চললে তারা টাকা পাবে না। কিন্তু পরিবহন মালিকরা যে সরকার, জনগণ, শ্রমিক তথা গোটা দেশকে বেআইনিভাবে জিম্মি করে রেখেছে, তার কোনো বিচার হবে না? যারা সুযোগ পেলেই সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায় করতে চায়, সেই পরিবহন মালিকদের বিরুদ্ধ কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সব ক্ষমতা বিএনপি-জামায়াত আর ভিন্নমতের বিরুদ্ধে প্রয়োগ না করে কিছু ক্ষমতা জনগণের স্বার্থে এই দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধেও প্রয়োগ করা হোক। লকডাউনে দিনের পর দিন যানবাহন ছাড়া আমরা চলেছি। আরও কিছুদিনও চলবো। কিন্তু বারবার এই পরিবহন মাফিয়াদের জিততে দেবো না। সরকার এবার অন্তত এই ভয়ঙ্কর চক্রটি ভেঙে ফেলুক। জিম্মি করার শক্তি দিয়ে কেউ যেন নিজেদের সরকারের চেয়ে বড় ভাবতে না পারে।
লেখক : হেড অব নিউজ, এটিএন নিউজ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়