অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ: করোনায় বিশ্ব অর্থনৈতিকভাবে প্রায় বিপর্যস্ত ছিলো। দেশে দেশে লকডাউনের কারণে নানান সংকট দেখা দিয়েছিলো। কেউ সামাল দিতে পেরেছে, অনেকেই পারেনি। অত্যন্ত কঠিন সময় পার করেছে বিশ^। এখনো করছে। তবুও লড়াই জারি রেখেছে সকলেÑনিজেদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে। কেউ পারছে, কেউ এখনো সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বিশ^ থেকে বাংলাদেশ আলাদা নয়। বিশে^র মতো বাংলাদেশেও করোনা হানা দিয়েছিলো। কখনো সংক্রমণ বেড়েছে, কখনো কমেছে। কমছে-বাড়ছে। করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি এখন অনেকটাই স্বাভাবিক। সংক্রমণ হার ১ শতাংশের কিছু বেশি। করোনা সংকটে এ দেশেও মানুষ সংকটময় কাটিয়েছে। বহু মানুষের চাকরি গেছে। অনেকের চাকরি আছে, কিন্তু বেতন কমেছে। মহাকঠিন সময়। এই কঠিন সময়কেও পার করেছে বাংলাদেশের মানুষ।
করোনার শুরতে স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিয়ে নানান আলোচনা হয়েছে। সমালোচনা হয়েছে। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ম্যানেজমেন্ট উন্নত হয়েছে। ভালো হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তারা নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। এর ফলও মিলেছে। বিশে^র অনেক দেশের তুলনায় আমাদের দেশে মৃত্যু হার অনেক কম। যদিও আমরা একটি মৃত্যুও আশা করি না। তবে এখন আমরা করোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। ভালো আছি। এই ভলোটা ধরে রাখতে হবে। সচেতন হতে হবে সকলকে। করোনা স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
একটা সময় টিকার প্রাপ্যতা কম ছিলো। কিন্তু এখন সেই সংকট নেই। মানুষ এখন টিকা পাচ্ছেন। প্রত্যাশামতো গতি না থাকলেও টিকা প্রদান অব্যাহত আছে। ২৮ শতাংশেরও বেশি মানুষ প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন। ১২-১৩ শতাংশ মানুষ দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। দুই দফা বিশেষ ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে অন স্পট টিকা দিয়েছেন। টিকাতেই আসলে আমাদের মুক্তি। সকলকে টিকা দেওয়ার সকল উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এ দেশেও টিকা উৎপাদন হবে। আশা করছি টিকার কোনো সংকট হবে না।
করোনা স্বাভাবিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে বিশে^। বাংলাদেশের অর্থনীতিও গতি পাচ্ছে। করোনাকালে বিশ^ যেখানে বিপর্যস্ত সেখানে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা দেখিয়েছে। দৃঢ়তা দেখিয়েছে। অর্থনীতির ভেতরের শক্তি দেখিয়েছে। আমাদের অর্থনীতি আমাদের শক্তি। আমাদের অর্থনীতির বড় শক্তি প্রবাসী ভাইবোনেরা। করোনার দুঃসময়েও দেশে টাকা পাঠিয়েছেন পরিবার-পরিজনের কাছে। আমাদের অর্থনীতির শক্তি আমাদের পোশাকশিল্প খাত ভালো করছে করোনার মধ্যেও। আমাদের কৃষক ভাইবোনেরা তার উৎপাদন অব্যাহত রেখেছেন। তাদের নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন আমাদের খাদ্য নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে সহায়তা করেছে। আমাদের খাদ্যের অভাব নেই। কৃষকেরা আমাদের নির্ভরতা সবসময়। আমাদের শক্তি। আমাদের ভরসা। বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের ভ‚মিকা অনন্য। অসাধারণ। অনবদ্য।
আমরা উন্নত-সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র বিনির্মাণে কাজ করছি। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে, আমাদের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে। চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু টানেলের নির্মাণ কাজও দ্রুত এগিয়ে চলছে। সারাদেশের রাস্তাঘাটের সম্প্রসারণ কাজ চলছে। যেখানে ফোর লেন করা দরকার করা হচ্ছে, ফ্লাইওভার নির্মাণ হচ্ছে। দেশে অবকাঠামো নির্মাণের মহাযজ্ঞ চলছে। একটি উন্নতি, সমৃদ্ধশালী দেশ গঠনের পূর্ব প্রস্তুতি বাংলাদেশ নিচ্ছে একটি সুদূর প্রসারী পরিকল্পনার মাধ্যমে।
বাংলাদেশের সম্ভাবনা আছে, চ্যালেঞ্জও আছে। আমরা মাঝেমধ্যেই দেখি সেই চ্যালেঞ্জ সামনে আসছে। দেশি-বিদেশি অশুভ চক্র তৎপর আছে বাংলাদেশকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য। দমিয়ে দিতে প্রস্তুত তারা। আমরা অসাম্প্রদায়িক দেশ। এখানে সকল ধর্ম, বর্ণের মানুষ মিলেমিশে বসবাস করে আসছে হাজার বছর ধরে। আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি একসঙ্গে, পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে। একসঙ্গেই আমরা বাস করবো। হাসবো। কাঁদবো। মরবো। চক্রান্তকারীরা আমাদের এই সৌহার্দ্যরে পরিবেশ নষ্ট করতে চায়। উসকানি দিয়ে দেশ অশান্ত করে তুলতে চায়। কিন্তু এ দেশের মানুষ সচেতন। ঐক্যবদ্ধ। বাংলাদেশ বিরোধীরা পারবে না আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে। আমরা ঐক্যবদ্ধ ছিলাম, আছি এবং থাকবো। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবেই।
বঙ্গবন্ধুকন্যা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যতোদিন বাংলাদেশ, ততোদিন নিরাপদ এই দেশ। ততোদিন সমৃদ্ধ বাংলাদেশের সম্ভাবনা টিকে আছে। ততোদিন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবে। ততোদিন বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। ফলে দ্রæত ধাবমান বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে, এগিয়ে যেতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
পরিচিতি : প্রধানমন্ত্রীর চিকিৎসক এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞ