শিরোনাম
◈ গভীর ঘু‌মে যখন নগরবাসী তখন সংবর্ধনা পে‌লেন আফঈদা-ঋতুপর্ণারা ◈ নারী এশিয়ান কাপে ১১ দলই চূড়ান্ত, ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে সবাই বাংলাদেশের উপ‌রে ◈ চী‌নে এশিয়া কাপ হ‌কি‌তে বাংলা‌দে‌শের হ্যাটট্রিক জয়  ◈ তিন নম্বর সতর্ক সংকেতে সুন্দরবনের খালে আশ্রয় নিয়েছে শত শত মাছ ধরার ট্রলার ◈ চট্টগ্রাম বন্দরে সাইফ পাওয়ার টেকের যুগের অবসান, এনসিটির দায়িত্বে নৌবাহিনী ◈ ১ ট্রিলিয়ন ডলারের খনিজের খেলায় তালেবান, পেছনে চীন-রাশিয়া-ইরান-ভারত! ◈ পাকিস্তানকে ঠেকাতে গিয়ে ভারতে বন্যা, তোপের মুখে কঙ্গনা (ভিডিও) ◈ ৫ আগস্ট লক্ষ্য ছিল গণভবন, এবার জাতীয় সংসদ: নাহিদ ইসলাম (ভিডিও) ◈ গাজীপুরে মহানগর বিএনপির ৪ নেতা বহিষ্কার ◈ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় জনগণ ঐক্যবদ্ধ : মির্জা ফখরুল

প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ০১:৩৮ রাত
আপডেট : ২৬ অক্টোবর, ২০২১, ০১:৩৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

উৎপল শুভ্র: টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ-২০২১: দুটি ক্যাচ ড্রপ, মাহমুদউল্লাহ এবং ‘বাঁহাতি তত্ত¡’

উৎপল শুভ্র
মুশফিকুর রহিমের অপরাজিত ৫৭ রান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে টানা তৃতীয় জয় এনে দিতে দিতেও যে শেষ পর্যন্ত পারলো না, এর কারণ দুটি। একটি ছিল দৃশ্যমান। লিটনের ক্যাচ ফেলা। অন্যটি অদৃশ্য। মাহমুদউল্লাহর অব্যাখ্যনীয় ক্যাপ্টেনসি। যেটির মূলে আছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অংশ হয়ে যাওয়া ‘বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তত্ত¡’! জন্মদিনে কোনো ম্যাচ পড়লে তাতে ভালো করার বাড়তি একটা তাড়না থাকেই ক্রিকেটারদের। ভানুকা রাজাপাকসেরও ছিলো। জন্মদিনে ক্রিকেটার-অক্রিকেটার নির্বিশেষে উপহার পাওয়ার একটা প্রত্যাশাও থাকে সবারই। সেই ‘উপহার’-ও পেলেন রাজাপাকসে। অভাবিত এক উপহার! উপহার পেতে যেমন ভালো লাগে, তেমনি দিতেও। এখানে অবশ্য ব্যতিক্রম। ভানুকা রাজাপাকসে যাঁর কাছ থেকে উপহারটা পেলেন, তাঁর শুধু মন খারাপই নয়, এই ‘উপহার’ দেওয়ার যন্ত্রণা আরও অনেক দিন তাঁকে তাড়িয়েও বেড়াবে।

একটু বেশি ভূমিকা হয়ে যাচ্ছে। যদিও তাতে কোনো সমস্যা দেখছি না। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচটা যদি দেখে থাকেন, এই ভ‚মিকা থেকেই আপনার যা বোঝার বুঝে নেওয়ার কথা। বুঝে নিয়েছেন, কিসের কথা বলছি, কার কথা বলছি। কিসের কথা? ক্যাচ ড্রপের। কার কথা? লিটন দাসের। লিটন যদি রাজাপাকসের ক্যাচটা না ফেলতেন, তাহলে শ্রীলঙ্কার স্কোর হয়ে যায় ৫ উইকেটে ৯৮। এই ম্যাচ কি তাহলে শ্রীলঙ্কা আর জিততে পারতো? ক্রিকেটে এসব প্রশ্নের উত্তর কখনো পাওয়া যায় না। কী হলে কী হতো...এই আলোচনা কোনোদিনই শেষ হওয়ার নয়। তবে সাধারণ ক্রিকেট-বুদ্ধি বলে, এই ম্যাচ বের করা শ্রীলঙ্কার জন্য কঠিনই হতো। তখন ১৪ রানে থাকা রাজাপাকসে শেষ পর্যন্ত আউট হয়েছেন ৫৩ রান করে। ম্যাচ প্রায় শেষ করে। শ্রীলঙ্কার জয়ের জন্য তখন দরকার আর মাত্র ৭ রান। বল বাকি ১০টি।

ক্রিকেটে ‘ক্যাচ চেজেস্ ফিল্ডার’ একটা কথা প্রচলিত আছে। যেটি সত্যি প্রমাণ করে এদিন যেমন ক্যাচ তাড়া করলো লিটনকে। ৬ ওভারে শ্রীলঙ্কার চাই ৫১ রান...এই সমীকরণ সামনে নিয়ে ১৫তম ওভারটা করতে আসা মোস্তাফিজের বলে এবার ক্যাচ তুললেন প্রলয়ঙ্করী চারিথা আশালঙ্কা। লিটন সেই ক্যাচও ফেললেন। এটা ধরলেই বাংলাদেশ জিতে যেত কি না, এটাও সেই ‘কী হইলে কী হইতে পারতো’ জল্পনার আরেকটি বিষয়। তবে সমীকরণটা একটু সাহায্য করতে পারে। আশালঙ্কার ক্যাচটা ধরতে পারলে ৩৩ বলে ৪৮ রান লাগতো এবং উইকেটে আসতেন নতুন ব্যাটসম্যান। সাইফউদ্দিনের পরের ওভারে এমন চার-ছয়ের ঝড় বইয়ে দেওয়াটা রাজাপাকসের জন্য কি এত সহজ হতো? মনে করিয়ে দিই, ওই ওভারে এসেছে ২২ রান, যার ২১-ই রাজাপাকসের ব্যাট থেকে। ম্যাচটার দিকে ফিরে তাকালে এই দুটি ক্যাচ ফেলার দৃশ্যই প্রথম ভেসে উঠছে চোখে। তবে যে দৃশ্যটা চোখে ভাসছে না, সেটিই আসলে এই ম্যাচটাকে ঘিরে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। আশালঙ্কা আর রাজাপাকসের জুটিটা ভাঙাটাই যখন ম্যাচ জয়ের পূর্বশর্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে, অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ তখন কেন তাঁর দলের সেরা বোলারকে আনলেন না? যিনি প্রথম ২ ওভারে মাত্র ৬ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছেন। সেই ২ উইকেটও একই ওভারে। যাতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার রেকর্ড থেকে শহীদ আফ্রিদিকে ঝেড়ে ফেলে সেটি শুধুই নিজের করে নিয়েছেন। তখন মনে হয়েছিলো, একই সঙ্গে বাংলাদেশের জয়ের রাস্তাও মনে হয় পরিষ্কার করে দিয়েছেন।

বোলারের নাম সাকিব আল হাসান। অবিশ্বাস্যভাবে যখন তিনি ম্যাচে তাঁর তৃতীয় ওভার করতে এসেছেন, তখন আসলে ম্যাচ শেষ। ২৪ বলে শ্রীলঙ্কার চাই ২৪ রান। হাতে ৬ উইকেট। সাকিবেরও তখন সাধ্য কি লঙ্কান জয়রথে বাধা হয়ে দাঁড়ানোর!
তুরুপের তাস হয়ে সাকিব তো ছিলেনই, নাসুম ছিলেন, ছিলেন মোস্তাফিজ...তারপরও তাঁদেরকে রেখে মাহমুদউল্লাহ কেন আফিফ হোসেনকে দিয়ে বোলিং করালেন, নিজেও করলেন দুই ওভার...এটাই তো আসলে এই ম্যাচের কোটি টাকার প্রশ্ন। যেটির কারণ অনুমান করা একটুও কঠিন নয়। বাংলাদেশের ক্রিকেটে কোচ বদল হয়, কিন্তু একটা তত্তে¡র ওপর অবিচল বিশ্বাসে তাতে একটু চিড় ধরে না। কী সেই বিশ্বাস? উইকেটে বাঁহাতি ব্যাটসম্যান থাকলে বাঁহাতি স্পিনার নৈবচ নৈবচ। অফ স্টাম্পের বাইরের লাইনে বোলিং করলে অফ স্পিনারকে স্পিনের উল্টো দিকে মারতে হয়, বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনারকে ‘উইথ দ্য স্পিন’ মারা যায়...বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের বিপক্ষে অফ স্পিনারকে বরাবরই তাই খুব কার্যকর অস্ত্র বলে মেনে এসেছে ক্রিকেট। কিন্তু তার মানে তো এই না যে, বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কখনো বাঁহাতি স্পিনে আউট হয় না। আউট হওয়া না-হওয়া তো অনেকটাই নির্ভর করে বোলার কেমন, তার ওপর। তা তিনি ডানহাতিই হোন বা বাঁহাতি। এখানেই মনে হয় বড় ভুলটা করে ফেললেন মাহমুদউল্লাহ। আফিফ ছক্কা খাওয়ার পরও উইকেট প্রায় পেয়েই গিয়েছিলেন, এটাই হয়তো আরও বেশি প্ররোচিত করে থাকবে তাঁকে। যে কারণে ৫ রান দিয়ে প্রথম ওভারটা শেষ করার পর কোথায় কোথায় মানে মানে সরে যাবেন তা না, আরেকটি ওভার করতে এলেন। ৭ ওভারে তখন ৬৭ রান দরকার শ্রীলঙ্কার। মানে ওভার প্রতি সাড়ে নয়েরও বেশি। ম্যাচের গায়ে তখনো ঘোর অনিশ্চয়তা। যা অনেকটাই মুছে গেল ১৪তম ওভার শেষে। মাহমুদউল্লাহর ওই ওভারে ১৬ রান সমীকরণটাকে বানিয়ে দিল ৬ ওভারে ৫১। তার চেয়েও বড় কথা, মোমেন্টাম বলে যে কথাটা আছে, সেটিকে বানিয়ে দিল শুধুই শ্রীলঙ্কার সম্পত্তি।

১১ ইনিংস পর মুশফিকুর রহিমের হাফ সেঞ্চুরিটি তাই বিফলে গেলো। এর আগে নাঈমের গড়ে দেওয়া ভিত্তিটাও। মাঝখানে টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকের এমনই দুর্দিন গেছে যে, প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল তাঁর দলে জায়গা নিয়েও। তিনটা শূন্য আছে, যার দুটি আবার প্রথম বলে। সর্বোচ্চ রানের ইনিংসটি (স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৬ বলে ৩৮) এমনই টি-টোয়েন্টির চরিত্রবিরোধী ছিলো যে, পরের ম্যাচে যা তাঁকে নামিয়ে দিয়েছে আট নম্বরে। সেখান থেকে এদিন মুশফিকের দুর্দান্ত কামব্যাক। টি-টোয়েন্টিতে তাঁর সর্বশেষ হাফ সেঞ্চুরিটি ২০১৯ সালের মার্চে। নয়াদিল্লিতে অপরাজিত ৬০ রানে টি-টোয়েন্টিতে ভারতের বিপক্ষে প্রথম জয় পেয়েছিলো বাংলাদেশকে। এদিনের অপরাজিত ৫৭ রান শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে টানা তৃতীয় জয় এনে দিতে দিতেও যে শেষ পর্যন্ত পারলো না, এর কারণ ওই দুটি। একটি ছিল দৃশ্যমান। লিটনের ক্যাচ ফেলা। অন্যটি অদৃশ্য। মাহমুদউল্লাহর অব্যাখ্যনীয় ক্যাপ্টেনসি। যেটির প্রতিচ্ছবি হয়ে থাকা স্কোরকার্ড এখনো বিস্ময় জাগাচ্ছে। সেটি যে বলছে, সাকিব আল হাসানের একটি ওভার বাকিই থেকে গেছে! সূত্র: উৎপল শুভ্রডটকম

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়