অনুপম দেব কানুনজ্ঞ: অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারাকাতের মতে, নানা সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার ছয়টি কারণ রয়েছে। [১] এই অঞ্চলে মুসলমানদের ফার্টেইলিটি রেট বেশি। [২] ৬৪ সালের দাঙ্গা। [৩] ৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ। [৪] এনিমি প্রোপার্টি এ্যাক্ট। [৫] ভেস্টেড প্রোপার্টি এ্যাক্ট এবং [৬] নিরাপত্তাহীনতা। তবে আমার মতে, প্রথম পাঁচটি কারণও আসলে শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতাতেই পর্যবসিত হয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে সাম্প্রদায়িক উসকানি তৈরি করে হিন্দু-বৌদ্ধদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে হামলা একটি প্যাটার্নে পরিণত হয়েছে। এসব হামলায় তথাকথিত ‘অসাম্প্রদায়িক’ দল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও নানা সময়ে জড়িত থেকেছেন, তাও প্রমাণিত। নানা গুজব ছড়িয়ে উসকানি দিয়ে হামলার ক্ষেত্র প্রস্তুত করার মূল উদ্দেশ্য থাকে একটিই, ভয়ভীতি দেখিয়ে, নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে সংখ্যালঘুদের এলাকা থেকে বিতাড়ন করা এবং সম্পত্তি দখল করা। এই অপপ্রক্রিয়ার শিকার অসহায় মুসলিমরাও হন, কিন্তু ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে প্রতিরোধের আশঙ্কাটা যেমন কম, পলায়নের সম্ভাবনাটাও বেশি।
‘এলাকায় দুর্নীতি হচ্ছে, আসুন সবাই মিছিল করে ঘেরাও করি’ ডাক দিন, রাস্তায় কয়জনকে পাবেন? ‘আসুন ভোট দেওয়ার অধিকার নিশ্চিত করি’, মাইকে ঘোষণা দিয়ে দেখুন। ফেসবুক স্ট্যাটাসে সয়লাব হয়ে গেলেও রাস্তায় কাউকে পাবেন না। কিন্তু ধর্মান্ধদের জন্য কেবল একটা ফেসবুক পোস্ট, একটা ভিডিও, একটা মাইকে ঘোষণাই যথেষ্ট। আসলেই কি ঘটেছে, আসলেই যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের এই ঘটনা ঘটানোর ক্ষমতা বা সাহস আছে কিনা, এসবের কিছু চিন্তা না করেই প্রয়োজনে খুন করার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নেবে। শিক্ষা, ডিজিটালাইজেশন, অর্থনীতি ইত্যাদি দিক দিয়ে দেশ যতোই এগোক, বিপুল জনগোষ্ঠীর মানসিক অন্ধত্ব দূর না করলে জাতিগত উন্নতি কি সম্ভব? সবাইকে শারদীয় দুর্গোৎসবের শুভেচ্ছা। ধর্ম যার যার, উৎসব হোক সবার। Anupam Deb Kanunjna-র ফেসবুক ওয়ালে লেখাটি পড়ুন।