ডেস্ক নিউজ: চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন নিয়ে শুরু হয়েছিল টানেল নির্মাণের কাজ। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরের মধ্যে যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হবে দেশের প্রথম মাটির নিচের এ সুড়ঙ্গ সড়ক।
জানা গেছে, কর্ণফুলীর তলদেশে নির্মাণাধীন টানেলের নাম রাখা হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। বর্তমানে ৭৩ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ। খনন কাজ শেষে বোরিং মেশিন পতেঙ্গা এলাকায় দ্বিতীয় টিউবের মুখে চলে এসেছে। মেশিনটি এখন খুলে আনা হবে। এটি সম্পন্ন করতে অন্তত ৩ মাস প্রয়োজন হবে। খোলার পর মেশিনটি চীনে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তার পর শুরু হবে স্ল্যাব ও অন্যান্য কাজ। প্রথম টিউব যান চলাচলের উপযোগী করতে প্রয়োজনীয় কাজ শেষে কার্পেটিং-এর জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। সময় নিউজ
চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা প্রান্তে প্রথম সুড়ঙ্গের খননকাজ গত বছরের ২ আগস্ট শেষ হয়। গত বছরের ১২ ডিসেম্বর ভার্চুয়ালি দ্বিতীয় সুড়ঙ্গের খননকাজ উদ্বোধন করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। চট্টগ্রামের আনোয়ারা প্রান্ত থেকে দ্বিতীয় টিউবের খনন কাজ শুরু হয়।
দ্বিতীয় টিউবের খননকাজ শেষ হওয়ায় গতকাল টানেল পরিদর্শন করেন প্রকল্প পরিচালক হারুনুর রশিদ চৌধুরী। তিনি জানান, টানেল নির্মাণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হলো মাটি খনন এবং ক্রস প্যাসেজ (টানেলের ভেতরে পথ পরিবর্তন)। এর মধ্যে প্রথমটি সফলতার সঙ্গে শেষ হয়েছে। বোরিং মেশিন খুলে নেওয়ায় পর ক্রস প্যাসেজের কাজ শুরু হবে। সেটি শুরু করতে অন্তত তিন মাস সময় লাগবে। দুটি টিউবের সড়ক নির্মাণ শেষ হলেই যাতায়াত করা যাবে। সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার জন্য ১৫ মেগাওয়াট করে মোট ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের সাবস্টেশন নির্মাণ করা হয়েছে। দুই পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে।
মেয়াদের আগে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক বলেন, আমরা আগে না পারলেও ২০২২ সালে কাজ সম্পন্ন করতে চেষ্টা করছি। আগে শেষ করতে পারলে ভালো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের মাধ্যমে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ মডেল তৈরি হবে। এতে আনোয়ারা পটিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান ও পর্যটন শিল্প গড়ে ওঠবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারকে সংযুক্ত করে একটি নতুন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। চট্টগ্রাম শহরকে পাশ কাটিয়ে বিদ্যমান যানজট কমিয়ে আনতে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। এ সড়ক যোগাযোগ এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের পাশাপাশি দক্ষিণ চট্টগ্রামে চলমান ইকোনমিক জোন শিল্পাঞ্চলের বিকাশ ঘটাবে।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে হাতে নেওয়া টানেল প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার অর্থায়ন করছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। চীন সরকার অর্থায়ন করছে ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও চীনের সরকারি পর্যায়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়। ২০১৫ সালের ২৪ নভেম্বর টানেল নির্মাণের চুক্তি সই হয়। চীন সরকার এ টানেল নির্মাণের জন্য চীনা প্রতিষ্ঠান চায়না কমিউনিকেশন অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি (সিসিসিসি) লিমিটেডকে নিয়োগ করে। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ব্যবসা ও যোগাযোগ খাতে উন্নয়ন : টানেল নির্মাণের ফলে দক্ষিণ চট্টগ্রামে বিশেষ করে আনোয়ারা-পটিয়া ঘিরে নতুন একটি শহর গড়ে উঠবে মন্তব্য করে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেছেন, এত কক্সবাজার পর্যন্ত বাণিজ্য ও যোগাযোগ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। কক্সবাজার হয়ে এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এ অঞ্চলের মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, উল্লেখযোগ্য বিষয়। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে কর্মসংস্থান বাড়বে। গড়ে উঠবে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান। দক্ষিণ চট্টগ্রামের আগে তেমন উন্নয়ন হয়নি; এখন নতুন করে ব্যাপক উন্নয়ন হবে। এরই মধ্যে কোরিয়ান ইপিজেড স্থাপন হয়েছে। চীনা ইকোনমিক জোনসহ আরও কয়েকটি অর্থনৈতিক শিল্পজোন স্থাপনের কাজ চলছে।
নকশা অনুযায়ী কর্ণফুলী টানেলের দৈর্ঘ্য হবে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর মধ্যে টানেলের প্রতিটি টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দুই টিউবে দুটি করে চারটি লেন থাকবে। মূল টানেলের সঙ্গে পশ্চিম ও পূর্ব প্রান্তে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক থাকবে। আর আনোয়ারা প্রান্তে থাকছে ৭২৭ মিটার দীর্ঘ উড়ালসেতু। কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে ১৮ থেকে ৩১ মিটার গভীরতায় সুড়ঙ্গ তৈরি করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীর নেভাল একাডেমি পয়েন্ট দিয়ে তলদেশে ঢুকে তা বের হবে ওপারে কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানি (কাফকো) এবং চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) মাঝামাঝি স্থান দিয়ে।