মাসুদ আলম, সুজন কৈরী: [২] রাজধানীর পল্লবী থেকে নিখোঁজ তিন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে র্যাব। তারা কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে ঢাকায় ফেরার পথে আবদুল্লাহপুর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে তাদের উদ্ধার করে র্যাব-৪ এর একটি দল।
[৩] বুধবার র্যাব-৪ এর উপ-অধিনায়ক মেজর রবি খান বলেন, ঘটনার পর থেকে আমরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছিলাম। তাদের লোকেশন শনাক্তের পর আমাদের একটি টিম কক্সবাজারে যায়। সেখানে আমাদের সদস্যরা তাদের অনুসরণ করেন। মঙ্গলবার তারা কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। তখন আমাদের সদস্যরাও তাদের অনুসরণ করে ঢাকায় আসেন। তারা মিরপুরে প্রবেশ করার সময় আব্দুল্লাহপুরের বেড়িবাঁধ থেকে উদ্ধার করা হয় তাদের। তারা তিনজনই সুস্থ আছেন।
[৪] প্রাথামিক জিজ্ঞাসাবাদে তিন কলেজ ছাত্রী র্যাবকে জানিয়েছেন, তারা একে অপরের বান্ধবী এবং তারা মিরপুরের স্থানীয় কলেজে লেখাপড়া করতেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিভিন্ন অপসংস্কৃতিতে আসক্ত হয়ে পরেন। দিনদিন লেখাপড়ার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। যার ফলশ্রুতিতে তাদের পরিবার পড়াশোনার জন্য ও ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে চলতে চাপ দিতো। অতিরিক্ত পারিবারিক বিধি-নিষেধের ফলে তারা পরিবারের প্রতি বিরক্ত হয়ে পড়ে।
[৫] জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানান, তাদের নিজেদের পরিবারের নিয়ম-কানুন ভালো লাগত না এবং এসব সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম কানুন তাদের কাছে অত্যাচার মনে হতো। তারা মূলত উচ্চভিলাসী জীবন-যাপন পছন্দ করতেন। দীর্ঘদিন বাসায় আবদ্ধ থাকার সময় তারা পশ্চিমা সংস্কৃতি বিশেষ করে জাপানী সংস্কৃতির প্রতি আসক্ত হয়ে পরে। তারা অধিক পরিমান জাপানী সিনেমা-সিরিয়াল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখে জাপানী ভাষা কিছুটা আয়ত্ব করেন। তারা দেশ ছেড়ে স্বাধীন জীবন-যাপন ও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে জাপান যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। জাপানী সংস্কৃতিতে নারী পুরুষের সম-অধিকার, স্বাধীনতা, দত্তক হওয়ার সুযোগ এবং অন্যান্য ধর্মীয় ও সামাজিক বিধি-নিষেধ না থাকার কারনে এমন পরিকল্পনা করেন তারা।
[৬] পরিকল্পনা অনুযায়ী গত দুই মাস আগে তিন বান্ধবী তাদের বন্ধু তরিকুলের সাথে দিয়াবাড়ী এলাকায় ঘুরতে গিয়ে জনৈক হাফসা চৌধুরী নামের একজন নারীর সঙ্গে পরিচিত হন। ওই নারীর সঙ্গে আলোচনার এক পর্যায়ে তারা জাপানে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। পরে ওই নারী তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের জন্য ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। তিন বান্ধবী জনৈক হাফসার সাথে পরিকল্পনা করে কক্সবাজার রুট দিয়ে নৌপথে জাপান যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ৩০ সেপ্টেম্বর সকালে বাসা থেকে রিকশায় প্রথমে গাবতলী যান। হাফসার পরামর্শে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেন তাদের অবস্থান চিহ্নিত না করতে পারে সেজন্য তারা নিজেদের ইমেইল, ফেসবুক আইডি এবং ব্যবহৃত মোবাইল গাবতলী এলাকায় ধ্বংস করেন।
[৭] এরপর তারা নৌকায় নদী পার হয়ে আমিন বাজার এলাকায় পৌঁছালে জনৈক হাফসার ২ জন লোক একটি কালো রঙের নোয়া মাইক্রোবাসে করে অজ্ঞাত একটি জায়গায় নামিয়ে দিয়ে সিএনজিতে করে তাদের কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে রেলে করে চট্টগ্রামে যাওয়ার পরামর্শ দেন। তিন বান্ধবী তাদের কথামত কমলাপুর চট্টগ্রামগামী কোনও রেল না পাওয়ায় কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বাসযোগে কুমিল্লা ময়নামতি যায়। পথে তারা নিজেদের পরিচয় গোপনের উদ্দেশ্যে এবং পশ্চিমা সংস্কৃতির আদলে নিজেদের চুল কেটে ফেলে পশ্চিমা বেশ-ভূষা ধারণ করেন। কুমিল্লার ময়নামতি ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় পৌঁছে তারা কেডস্, পোষাক এবং একটি মোবাইল কিনেন। সেখান থেকে তারা আবারও বাসে করে চট্টগ্রাম সিনেমা প্লেস বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দুটি মোবাইল ফোনসেট কিনেন এবং বাসে করে কক্সবাজারে যান।
[৮] র্যাব জানায়, আত্মগোপনে থাকতে তারা কোনও সিম কিনেন নি। কক্সবাজার পৌঁছে তারা গত ১ অক্টোবর থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত কক্সবাজারের কলাতলিতে একটি হোটেলে অবস্থান করে সিমের পরিবর্তে ওয়াইফাই সংযোগ ব্যবহার করেন। ২ অক্টোবর তারা কক্সবাজার বিচ এলাকায় বেড়াতে গেলে হাফসার লোক পরিচয়ে আসিফ এবং শফিক নামের দুজন যুবক তাদের কাছে থাকা স্বর্ণালংকার ও কিছু নগদ টাকা নিয়ে নেয়। এই ঘটনায় তারা আতঙ্কিত হয়ে হোটেল অবস্থান নেন এবং আশেপাশে র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে মঙ্গলবার রাতে ছদ্মবেশে বাসে করে রওনা হয়ে ঢাকার আব্দুল্লাহপুর পৌঁছান।
[৯] র্যাব আরও জানায়, জনৈক হাফসা নামের ওই নারীর কোনও ফেসবুক, ই-মেইল আইডি উদ্ধার ছাত্রীরা সনাক্ত করতে না পারায় তাকে শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে তাকে শনাক্ত ও নোয়া মাইক্রোবাসে থাকা ২ ব্যক্তি এবং কক্সবাজারের বীচ এলাকায় স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেওয়া ২ যুবকসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের অভিযান চলছে।
[১০] উদ্ধার তিন ছাত্রীকে তাদের পরিবারের উপস্থিতিতে পল্লবী থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে র্যাব।