অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: ভারতে ২৩টি আইআইটি তার মধ্যে আইআইটি Ropar শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে ২০০৯ সাল থেকে। বর্তমানে ২৩টি আইআইটির মধ্যে আইআইটি রোপারের ranking হলো ৯! কীভাবে সম্ভব? কারণ হলো নেতৃত্ব! কারণ অধ্যাপক সুরিত কুমার দাসের মতো একজন গবেষককে ডিরেক্টর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া! তিনি হলেন ভারতের এক নম্বর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তিনি হলেন the most cited Indian mechanical engineer: citations ১৮১৫৫! আইআইটি রোপারের বর্তমান পরিচালক হলেন Rajeev Ahuja সাইটেশন হলো ৩৫৬৬৪! বুঝতে পারছেন কী মানের স্কলার। এই বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন M Jagadesh Kumar! তিনি আইআইটি দিল্লির শিক্ষক ছিলেন এবং তার সাইটেশন হলো ৬৫৩২! তিনি আইআইটি দিল্লির ডিরেক্টর হওয়ার দৌড়ে এগিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ডিরেক্টর হয়েছেন V. Ramgopal Rao, Ph.D., IEEE Fellow যার সাইটেশন ৬৯৩৬! এর মাধ্যমে প্রমাণিত হয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিসি বা প্রধান নির্বাচন করার সময় প্রথম এবং প্রধান বিবেচ্য বিষয় হওয়া উচিত একাডেমিক এক্সেলেন্স। নেতাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে হয়।
যিনি ভালো একাডেমিক নন, যার গবেষণা বলতে গেলে শূন্য তিনি কীভাবে অধস্তন গবেষকদের বলবেন ভালো শিক্ষক হোন, ভালো গবেষক হোন। আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমস্যা এখানেই। গত ৩০-৪০ বছরের ইতিহাস ঘাঁটলে সহজেই বলা যায় আমাদের সরকারগুলো যেন খুঁজে বেড়ায় কে কতো বড় গবেষক নয় বরং কতো বড় দলান্ধ। দেখেশুনে মনে হয় আমাদের সরকারগুলো চায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের আজ্ঞাবহ করে রাখতে। যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের নেতৃত্বে সরকারের কাছে বেশি বরাদ্দের কোনো দাবি দাওয়া পেশ করে সরকারকে বিব্রত না করে। অর্থের অভাবে শিক্ষার্থীরা যতো কষ্টেই থাকুক, অর্থের অভাবে গবেষণার সুযোগ না থাকুক, শিক্ষকরা ভালো বেতন ও সুবিধা না পাক তবুও কোনো দাবি জানাবে না।
আমাদের সরকার যদি সত্যি সত্যি চাইতেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম জ্ঞানে, বিজ্ঞানে শিক্ষায় এগিয়ে যাক তাহলে প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভালো একাডেমিককে প্রধান এমন কাউকে বানাতেন যিনি জ্ঞানে, প্রজ্ঞা আর নেতৃত্বের গুণাবলীতে সেরা। আমাদের সরকার যদি সত্যি সত্যি চাইতেন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভালো চলুক তাহলে বেশি বেশি বরাদ্দ দিতেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক বাজেট পৃথিবীর অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের অধ্যাপকদের গবেষণা বাজেট থেকেও কম।
আমাদের সরকারগুলো চায় ভিসিরা তাদের সার্ভ করুক, শিক্ষক বা ছাত্রছাত্রীদের না! আমাদের ভিসিরা কতোটুকু সময় নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতির জন্য ব্যয় করেন আর কতোটুকু সময় সরকারের বিভিন্ন মিটিং বা বিভিন্ন অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে ব্যয় করেন? এর উত্তরের মাঝেই সকল সমস্যার সমাধানের clue নিহিত। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই হতে পারতো একটি অ্যাসেট। তাদের কাছ থেকে বড় অংকের ডোনেশন নেওয়া যেতো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাইরা বাৎসরিক ডিনার, কিছু মিটিং আর দু’একটা গেট বা একটা ভবন বানানো ব্যতীত ১০০ বছরের পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কী করেছে? অথচ তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের endowment money তৈরির ক্ষেত্রে বিরাট ভ‚মিকা রাখতে পারতো। সেই endowment money ইনভেস্ট করে বিশ্ববিদ্যালয় করে সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নে খরচ করতে পারতো। ভিসিদের এই ভিশনের জন্য দরকার ছিলো ভিশনারি ভিসি। কবে পাবো এমন ভিশনারি ভিসি? লেখক: শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়