লুৎফর রহমান হিমেল: প্রায় হাজার বছর আগে ১২০৭ সালে প্রাচ্যের এক অখ্যাত গ্রামে যার জন্ম, সেই কবির শায়েরি দুনিয়াজুড়ে এখনো বিক্রি হচ্ছে সমানতালে। তার লিখিত কবিতা ইংরেজিতে অনুবাদ হওয়ার পর শুধু আমেরিকাতেই লাখ লাখ কপি বিক্রি হয়ে চলেছে। আমেরিকায় তিনি সেরা কবিদের একজন। তিনি একাধারে কবি, আইনজ্ঞ, ইসলামি ব্যক্তিত্ব, ধর্মতাত্তি¡ক, অতীন্দ্রিয়বাদী এবং সুফী ছিলেন। তার প্রভাব দেশের সীমানা এবং জাতিগত পরিমÐল ছাড়িয়ে বিশ্বদরবারে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সোশ্যাল মিডিয়ার লাখো ব্যবহারকারী তার অমিয় বাণী ফেসবুক, টুইটারসহ নানা মাধ্যমে পোস্ট করে থাকেন। মৃত্যুর প্রায় হাজার বছর পর আজও তিনি বিস্ময়করভাবে জনপ্রিয়। ফারসি ভাষার এই সুফি কবির নাম জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি। রুমি নামেই বেশি পরিচিত তিনি। এদেশেও রুমি সমধিক জনপ্রিয়। ৩০ সেপ্টেম্বর ছিলো তার জন্মদিন। রুমির এই সহস্র বছর ধরে বেঁচে থাকার রহস্য সম্পর্কে গবেষকরা বলছেন, রুমি তার পাঠককে একেবারে সামনে দাঁড় করিয়ে যেন কথা বলছেন। ফলে এ কালের পাঠকও তাকে জীবন্ত হিসেবে আবিস্কার করে। তার সৃষ্টিকর্মে আশাবাদ, আকুলতা, বিচ্ছেদ আর দৈনন্দিন দৃশ্যাবলী উপস্থিত। এ কারণে তিনি আজও প্রাসঙ্গিক এবং প্রয়োজনীয়। রুমির লেখা ‘মসনবী’ বহুল পঠিত একটি বই। তার কিছু বিখ্যাত পংক্তি সেখান থেকে সংকলিত করছি :[১] মোমবাতি হওয়া সহজ কাজ নয়। আলো দেওয়ার জন্য প্রথম নিজেকেই পুড়তে হয়।[২] তোমার জন্ম হয়েছে পাখা নিয়ে, উড়ার ক্ষমতা তোমার আছে। তারপরও খোঁড়া হয়ে আছো কেন?[৩] তোমার হৃদয়ে যদি আলো থাকে, তাহলে ঘরে ফেরার পথ তুমি অবশ্যই খুঁজে পাবে।[৪] আমাদের চারপাশেই সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু এটা বুঝতে হলে বাগানে হাঁটতে হবে।[৫] প্রতিটি মানুষকে একটা নির্দিষ্ট কাজের জন্য তৈরি করা হয়েছে এবং সেই কাজটি তার হৃদয়ে গ্রন্থিত আছে। প্রতিটি মানুষ ভেতর থেকে ঠিক সেই কাজটি করার জন্যই তাড়না অনুভব করে।
[৬] যাকিছু হারিয়েছো তার জন্য দুঃখ করো না। তুমি তা আবার ফিরে পাবে, আরেকভাবে, আরেক রূপে।[৭] এই যে আলো, এ তোমারই আলো। তোমার আলোই এই জগতকে আলোকিত করে।[৮] প্রত্যেক প্রদীপই আলাদা, কিন্তু তাদের আলো একই।[৯] ঘষা খেতে যদি ভয় পাও, তাহলে চকচক করবে কীভাবে? [১০] শব্দ দিয়ে প্রতিবাদ করো, কণ্ঠ উঁচু করে নয়। মনে রাখবে ফুল ফোটে যতেœ, বজ্রপাতে নয়।[১১] গতকাল আমি বুদ্ধিমান ছিলাম, তাই পৃথিবীটাকে বদলে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি জ্ঞানী, তাই নিজেকে বদলে ফেলতে চাই।[১২] কেউ যখন কম্বলকে পেটাতে থাকে তখন সেটা কম্বলের বিরুদ্ধে নয়, ধুলোর বিরুদ্ধে।[১৩] অন্যের জীবনের গল্প শুনে সন্তুষ্ট হয়ো না, নিজের পথ তৈরি করো, নিজের জীবন সাজাও।[১৪] সুন্দর ও উত্তম দিন তোমার কাছে আসবে না, বরং তোমারই এমন দিনের দিকে অগ্রসর হওয়া উচিত।[১৫] তুমি এ ব্রক্ষাÐে গুপ্তধনের খোঁজ করছো, কিন্তু প্রকৃত গুপ্তধনতো তুমি নিজেই।[১৬] যে কখনো বাড়ি ছাড়েনি, তার কাছ থেকে যাত্রার উপদেশ নিও না।[১৭] আকাশ কেবল হৃদয় দিয়েই ছোঁয়া যায়। [১৮] সিংহকে তখনই সুদর্শন দেখায় যখন সে খাবারের খোঁজে শিকারে বেরোয়।[১৯] নতুন কিছু তৈরি করো, নতুন কিছু বলো। তাহলে পৃথিবীটাও হবে নতুন।[২০] সবকিছু জেনে ফেলাই জ্ঞান নয়, জ্ঞান হলো কী কী এড়িয়ে যেতে হবে বা বর্জন করতে হবে তা জানা। মানুষ তার জীবনে খুব বেশিকিছু করলে একটি ইতিহাস হয়, মাওলানা জালাল উদ্দিন রুমি হয়েছিলেন খোদ এক জীবনব্যবস্থা, ভাবনার পরিপূর্ণতা। তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন বার বার, তবে পা দুটি তাঁর মাটিতেই ছিলো। তিনি নিজের ভেতর জন্ম নেওয়া আলোকে চিনতে পেরেছিলেন, সেই আলোয় আলোকিত করতে চেয়েছিলেন পৃথিবীকে। ফেসবুক থেকে