নিউজ ডেস্ক: বেশির ভাগ গরিবের প্রধান খাদ্য ডাল-ভাত। পেট ভরে সেই ডাল-ভাত খাওয়াও যেন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। বাজারে ডালের দাম ক্রমে বাড়ছে, বিশেষ করে মসুর ডালের দাম। গত সপ্তাহে যেখানে বড় দানার মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা কেজি, চলতি সপ্তাহে সেই মসুর ডাল কেজিতে তিন টাকা বেড়ে হয়েছে ৮৮ টাকা। বাজারে এখন ৮৮ টাকা কেজির নিচে কোনো মসুর ডাল পাওয়া যায় না। দুই সপ্তাহ আগে এই ডালের কেজি ছিল ৭৫ টাকা। কালের কণ্ঠ
মাঝারি আকারের মসুর ডালের কেজি গত সপ্তাহে ছিল ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। চলতি সপ্তাহে তা বেড়ে ৯৮ ও ১০২ টাকা কেজি হয়েছে। ছোট দানার মসুর ডালের কেজি পাঁচ টাকা বেড়ে ১০৫ থেকে ১১৫ টাকা হয়েছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) বলছে, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় মসুর ডালের দাম বেড়েছে ৩১ শতাংশ পর্যন্ত।
চালের দাম আগে থেকেই বেশি। বিশ্ববাজারে চালের দাম কমলেও দেশের বাজারে এখনো সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে চালের দাম। বাজারে সবচেয়ে মোটা চালের কেজিও ৪৫ টাকার বেশি। ভালো মানের সরু চাল কিনতে লাগছে ৭০ টাকার বেশি। মাঝারি মানের চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকার আশপাশে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মালিবাগ বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী আমজাদ বলেন, ‘আমাদের মতো গরিব মানুষ জিনিসপত্রের দাম বেশি হলে ডাল-ভাত খেয়ে থাকি। এখন তো দেখছি তারও জো নেই। মাছ-মাংসের যে দাম, তা আগেই কেনা বন্ধ করেছি। আর সবজির দামও বেশি। তাহলে আমরা খাবটা কী?’
আমজাদের কথায় সায় দেন পাশে দাঁড়ানো আরেক ক্রেতা আনোয়ার। তিনি বলেন, করোনায় যে অবস্থা হয়েছে তাতে এমনিতেই চলা মুশকিল। তার ওপর বাজারে সব জিনিসপত্রের দামে যেন আগুন লেগেছে। সব পণ্যের দাম অনেক বেশি।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহ দুয়েক আগে সরকারের বেঁধে দেওয়া তেল-চিনির দাম আরো বেড়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়েও কেজিপ্রতি ২-৩ টাকা বেশি দামে বাজারে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। বাজারে বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৪২ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি, বোতলজাত ১৫০ থেকে ১৫৩ টাকা। চলতি সপ্তাহে কিছুটা কমেছে পাম তেলের দাম। কেজিপ্রতি ১৩৭ থেকে ১৩৮ টাকার পাম তেল ১৩২ থেকে ১৩৪ টাকায় নেমেছে। চিনি ৭৮ থেকে ৮০ টাকা কেজি। আটার দাম গত সপ্তাহের মতোই রয়েছে। খোলা আটা ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি। আর ময়দা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা।
তবে চলতি সপ্তাহে কিছুটা স্বস্তি এসেছে পেঁয়াজ-রসুনে। মাঝখানে কেজিপ্রতি পাঁচ টাকা বাড়লেও পেঁয়াজের দাম আবার ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় নেমেছে। আর রসুনের দাম এখন বেশ সহনশীল। দেশি রসুন পাওয়া যাচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে। চীনা রসুনের দামের ব্যবধান অবশ্য অনেক বেশি। কেজি ১০০ টাকা চাইছেন দোকানিরা। আদার দামও কিছুটা কমেছে। দেশি আদা ১১০ টাকায় মিলছে, চীনা আদা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি।
চলতি সপ্তাহে আরেকটু বেড়েছে ফার্মের মুরগির দাম। ব্রয়লার মুরগি এখন ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি। গত সপ্তাহে কেজিতে আরো ১০ টাকা কমে পাওয়া যেত। তবে ডজনপ্রতি পাঁচ টাকা কমেছে ডিমের দাম। যে মানের ডিম ১১৫ টাকা ডজন কিনতে হয়েছে সপ্তাহের শুরুতে, এখন তা ১১০ টাকায় নেমেছে। আমিষের মধ্যে কিছুটা কমেছে ইলিশের দাম। এখন বড় আকারের ইলিশ মিলছে এক হাজার ২০০ টাকা কেজিতে।
মাঝারি আকারের ইলিশ কিনতে লাগছে কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। অন্যান্য মাছের দাম আগের মতোই বেশি। আর মাংসও আগের মতোই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে হঠাৎ করে আবার বেড়েছে কাঁচা মরিচের দাম। ফের কাঁচা মরিচের কেজি ১৫০ টাকা। অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা কমলেও গড়ে এখনো ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি।
নতুন সবজি সিমের দাম কেজিপ্রতি ১০ টাকা কমে ১০০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। আলু, পটোল, বরবটি, ঝিঙা, লাউ, করলা, কাঁকরোলসহ অন্য সবজিও বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে।
আপনার মতামত লিখুন :