অধ্যাপক ড. কামরুল হাসান মামুন: আচ্ছা, আমাদের বাংলা মিডিয়ামের শিক্ষার্থীদের নিয়ে সরকার এবং মন্ত্রণালয়ের এতো মায়া কেন? তাদের কেন বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক, উৎপাদনমুখী, অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক হচ্ছে কিনা সেটা নিয়ে এতো মাথা ব্যথা? দেশের উচ্চবিত্তের প্রায় সবার ও মধ্যবিত্তের একটা বিরাট অংশ যে ইংরেজি মাধ্যমে পড়ছে তাদের বুঝি মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত দেশপ্রেমিক, উৎপাদনমুখী, অভিযোজনে সক্ষম সুখী ও বৈশ্বিক নাগরিক হওয়ার দরকার নেই? ওখানে কেন সবাইকে তথ্য প্রযুক্তি, ভালো থাকা, জীবন ও জীবিকা, ধর্ম, সামাজিক বিজ্ঞান ইত্যাদি পড়তে বাধ্য করা হচ্ছে না? নিজেদের সন্তানদের সুরক্ষা দিয়ে বিশ্বমানের শিক্ষার ব্যবস্থা রেখে যতো খেলা সব গরিবের সন্তানদের নিয়ে?
যারা বাংলা মাধ্যমের মানকে নামিয়ে কর্মমুখী করতে চাচ্ছে তাদের উদ্যেশ্য হলো গরিবের সন্তানরা পড়ালেখা করবে কিছু একটা করে খাবার জন্য। বড়লোকের সন্তানরা বড় বিজ্ঞানী হবে, বড় ডাক্তার হবে, বড় শিক্ষক হবে, বড় ইঞ্জিনিয়ার হবে, উচ্চ শিক্ষার জন্য বিদেশে যাবে। আর নিম্নমধ্যবিত্ত ও গরিবের সন্তানরা মিস্ত্রি হবে, প্লাম্বার হবে, পিওন হবে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী যেমন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক হবে। উদ্যেশ্যতো তাই। পৃথিবীতে যেসব দেশ তথ্য প্রযুক্তিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইউরোপ, আমেরিকা, চীন-কোরিয়া তাদের সিলেবাস দেখুন?
তারা কি পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও গণিত শিক্ষাকে কমিয়ে স্কুল লেভেলের প্রতি শ্রেণিতে কি তথ্য প্রযুক্তি বিষয় ঢুকিয়েছে? তারা কি ভালো থাকা, জীবন জীবিকা ইত্যাদি আজগুবি বিষয় পড়াচ্ছে? হ্যাঁ কোথাও কোথাও আছে সেটা হলো ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে। কেউ ইচ্ছে করলে এসব নিতে পারে। যারা এসব নিয়ম করছে তাদের সন্তানদের কারিকুলামকে আন্তর্জাতিক মানের রেখে গরিবের সন্তাদের দরদ দেখানোর নামে যা করা হচ্ছে তা দেশকে পশ্চাৎমুখী করবে। প্রস্তাবিত এই কারিকুলাম অবিলম্বে বাতিল ঘোষণা করুন। এই স্ট্যাটাসে আমার এই প্রশ্নগুলোর উত্তর চাই। লেখক : শিক্ষক, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়