আয়াছ রনি: [২] নিহত মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের মধ্যে জনপ্রিয় নেতা ছিলেন। রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কথা বলার জন্য তিনি জাতিসংঘে গিয়েছিলেন। এছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও সাক্ষাত করেছিলেন। রোহিঙ্গাদের অধিকার দিয়ে তিনি সব সময় বিদেশি বিভিন্ন প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করে আসছিলেন। তার মৃত্যুতে লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
[৩] কক্সবাজারের উখিয়া কুতুপালং লম্বাশিয়া শরণার্থী শিবিরে (২৯ সেপ্টেম্বর) রাতে রোহিঙ্গা নেতা ও শিক্ষক মুহিবুল্লাহ (৫০) রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল ইয়াকিনের বন্দুকধারী সদস্যদের গুলিতে নিহত হয়েছে।
[৪] জানা যায়,অজ্ঞাতনামা বন্দুকধারীদের গুলিতে প্রথমে মারাত্নকভাবে আহত হন মুহিব উল্লাহ। পরে কুতুপালং এমএসএফ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। পরে উখিয়া থানার পুলিশ কে দ্রুত লাশ হস্তান্তর করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়।
[৫] লাশের সাথে থাকা নিহত মুহিবুল্লার ভাই হাবিব উল্লাহ দাবি করেন, উখিয়া কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে এশার নামাজ শেষ করে নিজ অফিসে আসেন শীর্ষ পাঁচ রোহিঙ্গা নেতাসহ মাস্টার মুহিবুল্লাহ। কিছুক্ষণ পর সেই অফিসে প্রবেশ করে ২০ জনের মতো একটি রোহিঙ্গ সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ, ছিল ভারী অস্ত্রে সজ্জিত। অফিসে উপস্থিত সঙ্গীদের মারধর করলেও মুহিবুল্লার বুকে সরাসরি গুলি চালায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী মাস্টার আব্দুর রহিম। ঐ গুলিতে নিহত হন রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ।
[৬] তিনি আরো বলেন, সশস্ত্র গ্রুপটিতে মাস্টার আব্দুর রহিম ছাড়াও ছিলেন মুর্শিদ, লালুর নেতৃত্বাধীন ২০ জনের সশস্ত্র গ্রুপ। তিন জনই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আল ইয়াকিনের সদস্য বলে দাবি করেন। তিনি ও রোহিঙ্গা শিবিরে নিরাপদ নই বলে নিজেকে নিয়ে ভয়ে আছেন।
[৭] নিহত রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহ ক্যাম্প-১ ইস্ট এর ব্লক ডি-৮ এর বাসিন্দা বলে জানা যায়। সে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইট(এআরএসপিএইচ) এর চেয়ারম্যান ছিলেন।২৯ সেপ্টেম্বর(বুধবার) এশার নামাজের পর নিজ অফিসে অবস্থানকালে অজ্ঞাতনামা ২০ জন বন্দুকধারীরা ৫ রাউন্ড গুলি করলে তিন রাউন্ড গুলি তার বুকে লাগে এবং উক্ত গুলির ফলেই নিহত হন এ রোহিঙ্গা নেতা।
[৮] নিহতের ঘটনাটি প্রথমে নিশ্চিত করেন ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক নাইমুল হক।
[৯] কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেছেন, কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
[১০] প্রসঙ্গত, গত ২০১৯ সালে মাসের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে উখিয়ার কুতুপালং এক্সটেনশন-৪ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মহাসমাবেশ করে রোহিঙ্গারা। এ সমাবেশে পাচঁ লাখ রোহিঙ্গা জড়ো হন। রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে গঠিত এআরএসপিএইচ চেয়ারম্যান রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ এ সমাবেশে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন থেকে তিনি আলোচনায় উঠে আসেন।
[১১] ২০১৯ সালে ১৭ জুলাই ধর্মীয় কারণে নির্যাতনের শিকার বিশ্বের ১৭টি দেশের ২৭ জন প্রতিনিধি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে একজন ছিলেন মুহিবুল্লাহ।
[১২] রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে গত তিন বছরে অর্ধশত লোক খুন হয়েছে। সম্পাদনা: হ্যাপি
আপনার মতামত লিখুন :