শারফিন শাহ: রবীন্দ্রনাথ শান্তি নিকেতনের শিক্ষক ছিলেন। তার কোনো ডিগ্রি না থাকলেও পড়াতেন বেশ। প্রমথনাথ বিশীর ‘রবীন্দ্রনাথ ও শান্তি নিকেতন’ গ্রন্থে শিক্ষক রবীন্দ্রনাথের পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি সময় ধরে ক্লাসে আসতেন ও বের হতেন। পড়াতেন কিটসের কবিতা। তার ব্যাখ্যা শুনে বুঁদ হয়ে যেতো শিক্ষার্থীরা। ক্লাসে আসার পূর্বে তিনি কখনো কারও লম্বা চুল কর্তনের হুকুম জারি করেছেন, এমন তথ্য পাওয়া যায়নি। কারণ,তিনি নিজেই ছিলেন দীঘল চুলের অধিকারী। চুল কর্তনের কোনো তথ্য না পাওয়া গেলেও তিনি দাঁড়ি ও টিকি কর্তনের পক্ষে ছিলেন, এমন প্রমাণ মেলে। তার শিষ্য সৈয়দ মুজতবা আলীর সঙ্গে আলাপকালে হিন্দু-মুসলমানের চিরায়ত বিবাদ ঘুচাতে তিনি কাঁচি হাতে এক মহাপুরুষ আগমনের আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। কবিগুরু তার স্বভাবসুলভ সরস ভঙ্গিতে বলেছিলেন, তা বলতে পারিস সেই মহাপুরুষ কবে আসবেন কাঁচি হাতে করে? সৈয়দ মুজতবা আলী তো অবাক। মহাপুরুষ তো আসেন ভগবানের বাণী নিয়ে, অথবা শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম নিয়ে। কাঁচি হাতে করে আবার কীভাবে আসবেন? রবীন্দ্রনাথ পুনরায় বললেন, হাঁ হাঁ কাঁচি নিয়ে। সেই কাঁচি দিয়ে সামনের দাড়ি ছেঁটে দেবেন, পেছনের টিকি কেটে দেবেন। সব চুরমার করে একাকার করে দেবেন।
হিন্দু-মুসলমান আর কতোদিন আলাদা হয়ে থাকবে?’ তৎকালীন হিন্দু-মুসলমানের শীতল সম্পর্কের ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথের এই বচন প্রাসঙ্গিক ছিলো অবশ্যই। কিন্তু তার জন্মের ১৬০ বছরে এসে এখন হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে যখন সবরকম দেয়াল ভেঙে গেছে, পরস্পর পরস্পরকে আপন করে নিয়েছে, মিশে গেছে আত্মার সঙ্গে, তখন তার নামে স্থাপিত বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক কীভাবে লম্বা চুল কর্তনের মতো হীন কাজ করতে পারেন? রবীন্দ্রনাথের নামে বাংলাদেশে একটি নয়, তিন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়। দুটি বেসরকারি আর একটি পাবলিক। ঘটনাটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই ঘটল। তাও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের মতো শেকড়মুখী বিভাগে। যিনি এই কাজ করেছেন তিনি একজন নারী। সতিকার অর্থেই এখন যারা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান, তাদের অধিকাংশরেই প্রাইমারি স্কুলে পড়ানোর মতো যোগ্যতা নেই। ছেলে-মেয়েরা ঠেকায় পড়ে শুধু ক্লাস করে,আর তারা রবীন্দ্রনাথর নামে গড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেও তার জীবন ও দর্শন থেকে বহুদূরে। তাদের দ্বারা শুধু নয়, যেকোনো কিছুর কর্তন হতে পারে। লেখক ও গবেষক