আহসান হাবিব : বসেছিলাম চিলেকোঠায়। তখন আকাশে চাঁদ ছিলো, ছিলো পূর্ণিমা। ছাদে আমার বিবিধ ফুলের গাছ। তারা গন্ধ বিলিয়ে আমাকে মুগ্ধ করছিলো। আমি তখন মর্তে উপভোগ করছিলাম স্বর্গীয় আনন্দ। যদিও স্বর্গ আছে বলে আমার মনে হয় না, কিংবা নরক। এসব বানানো গল্প। হঠাৎ একটা বাতাস আমাকে উড়িয়ে নিয়ে চললো। আমি বাতাসের পাখায় ভর করে উড়ে চললাম। আমি মহাশূন্যে ভাসছিলাম। মনে হলো মাধ্যাকর্ষণ শক্তির বিলোপ ঘটেছে। আমি উড়ছি তো উড়ছি। ক্রমে চিলেকোঠা আমার কাছে একটা বিন্দুর মতো লাগছিলো। জানি না বাতাস আমাকে কোথায় নিয়ে যাবে।
হয়তো তারও আছে নিজস্ব আলয়, আছে অনিন্দ্যসুন্দরী নারীর দল। আমি কেন নারীর থাকার কথা ভাবলাম জানি না, শুধু জানি বাতাস তার সংগীতের মতো নরম এবং পেলব। আর কে না জানে এসব সে পেয়েছে নারীদের কাছ থেকেই। উড়তে উড়তে আমরা পৌঁছে গেলাম এক সমুদ্র তটে। তখন সমুদ্র শান্ত ছিলো। তার বুকে ছিলো ছোট ছোট ঢেউ। আকাশ থেকে বি”্ছুরিত চাঁদের আলো সমুদ্রের ওপর পড়লে সেখানে তৈরি হচ্ছিলো এক নয়নাভিরাম দৃশ্য। আমি আমার নয়ন মেলে তা উপভোগ করতে লাগলাম।
বাতাস আমাকে সমুদ্রের ওপর ফেলে দিলো। আমি ভরহীন পালকের মতো অতি মন্থর গতিতে নিচে নামতে লাগলাম এবং নামতে নামতে সমুদ্রের গভীরে প্রবেশ করলাম। সেখানে আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো অসাধারণ এক অভ্যর্থনা। মাছেরা আমাকে গ্রহণ করলো গান গেয়ে। আমি মাছেদের প্রাসাদে অতিথি হিসেবে দিন কাটাতে লাগলাম। আমার খাদ্যের কোনো অভাব ছিলো না। মাছেরা আমাকে সঙ্গ দিতো। এমনকি তারা আমার সঙ্গে সংগম করতো।
সংগমের ফলে মাছেরা গর্ভবতী হয়ে পড়লো এবং একদা তারা সন্তান প্রসব করলো। মাছ নয়, আবার মানুষ নয়, এমন সন্তানে ভরে উঠলো সাগরের তলদেশ। তখন একদিন মাছেদের সর্দার আমাকে আমার সব সন্তান নিয়ে সমুদ্র ত্যাগের নির্দেশ দিলো। আমি তার নির্দেশ পালন করি, আমি আমার অগণিত সন্তান নিয়ে সমুদ্র থেকে উপরে উঠে আসি। বাতাস আমার জন্য অপেক্ষা করছিলো। আমরা সবাই তার পাখায় উঠে বসলাম। বাতাস আবার আমাদের নিয়ে উড়ে চললো। উড়তে উড়তে সে আমাদের নামিয়ে দিলো আমারই রেখে যাওয়া চিলেকোঠায়। চিলেকোঠা ভরে উঠলো কলহাস্যগীতিতে। ফুল থেকে তখনো সুবাস ছড়াচ্ছিলো আর আমরা সেই সুবাস গায়ে মাখছিলাম মহানন্দে। লেখক : ঔপন্যাসিক