শিরোনাম
◈ অর্থনীতিতে ইতিবাচক ইঙ্গিত: রেকর্ডসংখ্যক কোটিপতি ব্যাংক হিসাব ◈ কাতার ও ফিলিস্তিনের প্রতি অবিচল সমর্থন জানালো বাংলাদেশ ◈ দুবাইয়ে বিকৃত যৌ.নাচার ব্যবসার চক্রের মুখোশ উন্মোচন এবার বিবিসির অনুসন্ধানে! ◈ জনপ্রশাসনের ১৭ কর্মকর্তাকে বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে বদলি ◈ ‘আমার নাম স্বস্তিকা, বুড়িমা নই’ ক্ষোভ ঝাড়লেন স্বস্তিকা ◈ তিন জেলার ডিসিকে প্রত্যাহার ◈ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ আবার বাড়ল ◈ আর্থিক সুবিধা নেওয়ায় কর কর্মকর্তা বরখাস্ত ◈ লড়াই ক‌রে‌ছে হংকং, শেষ দি‌কে হাসারাঙ্গার দাপ‌টে জয় পে‌লো শ্রীলঙ্কা ◈ দুর্গাপূজায় মণ্ডপ পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসকে আমন্ত্রণ হিন্দু ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের

প্রকাশিত : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০১:১৭ রাত
আপডেট : ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২১, ০১:১৮ রাত

প্রতিবেদক : নিউজ ডেস্ক

অপার সম্ভাবনা ব্লু- ইকোনমিতে, ২৬ সম্ভাবনার ক্ষেত্র চিহ্নিত

নিজস্ব প্রতিবেদক: যথাযথ গুরুত্ব দিলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। বিশ্লেষকদের মতে, শুধু সামুদ্রিক মাছ ও শৈবাল রপ্তানি করেই বছরে আয় হতে পারে এক বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ। ফলে এই সম্পদ কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। টেকসই উন্নয়নে সমুদ্রসম্পদ ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

এরই অংশ হিসেবে সমুদ্রে (বাংলাদেশ অংশে) কী পরিমাণ মৎস্যসম্পদ, খনিজসম্পদ, নৌচলাচলসহ কী ধরনের অর্থনৈতিক সম্ভাব্যতা রয়েছে; তা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে ১৯ মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি সমুদ্র অর্থনীতির বিষয়ে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা দ্রুত পাঠাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সমুদ্রে বিশাল সুযোগ রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তারে সহায়ক। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা ঘিরে বিরোধ নিষ্পত্তিতে প্রাপ্ত এলাকা এখন দেশের ‘উন্নয়নের নতুন ক্ষেত্র’ হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সমুদ্র অর্থনীতিতে বিনিয়োগের দ্বার দ্রুত খুলে দেওয়া উচিত। তা না-হলে সমুদ্রের গভীরে তো আর কেউ সীমানা মানবে না। ফলে সম্পদ চলে যেতে পারে অন্য দেশে। শুধু পরিকল্পনার মধ্যে থাকলে চলবে না, প্রয়োজন কৌশলগুলের দ্রুত বাস্তবায়ন।

একটি সমৃদ্ধ এবং টেকসই সুনীল অর্থনীতির লক্ষ্যে দেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ১২টি কার্যকলাপ উল্লেখ করা হয়েছে; যেখানে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে মৎস্য চাষ, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, মানবসম্পদ, ট্রান্সশিপমেন্ট, পর্যটন এবং জলবায়ু পরিবর্তন। এ ছাড়া ২০১৭ সালে সুনীল অর্থনীতি সম্পর্কিত উদ্যোগগুলোর সঙ্গে বিভাগীয় মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় সাধনের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে সেল প্রতিষ্ঠা করা হয়। চিহ্নিত করা হয় সুনীল অর্থনীতির ২৬টি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র; মৎস্য চাষ, শিপিং, জ্বালানি, পর্যটন, উপকূলীয় সুরক্ষাব্যবস্থা এবং এসবের জন্য নজরদারি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ ৭১০ কিলোমিটার সুদীর্ঘ উপকূলরেখা রয়েছে। দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের শতকরা ১৯.৪ ভাগই আসে সামুদ্রিক মৎস্য থেকে। এ ছাড়া দক্ষিণাঞ্চলের উপকূল এলাকায় অর্থনৈতিক কর্মকা- বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক আর্থসামাজিক বিকাশে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে। পর্যটকদের গড়ে শতকরা ৮১ ভাগই কক্সবাজার ভ্রমণ করেন।

দেশের সমুদ্রের অভ্যন্তরেও গ্যাস মজুদ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের স্থলসীমানায় কিছু গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে; যা মোট মজুদের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারে। এ ছাড়া তেল, লবণ ও নবায়নযোগ্য সামুদ্রিক সম্পদের (বালু, নুড়ি ইত্যাদি) আছে টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা।

এদিকে দেশের বিশাল সাগরসীমায় কী আছে এবং সেই সম্পদ কাজে লাগিয়ে কীভাবে অর্থনৈতিক সাফল্য অর্জন করা যায়, তা গবেষণা করতে ২০১৭ সালে কক্সবাজারে নির্মিত হয় সমুদ্র গবেষণাকেন্দ্র বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট। শুধু বঙ্গোপসাগরের তলদেশের সম্পদ গবেষণায় নিজেদের সীমাবদ্ধ না রেখে তা কীভাবে বাড়ানো যায়; সেই প্রচেষ্টাও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।

বাংলাদেশের সমুদ্র নিয়ে গবেষণা করা বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেভ আওয়ার সির তথ্য অনুযায়ী, সমুদ্র থেকে মাছ ধরে শুধু বিদেশে রপ্তানি করেই বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব। এ ছাড়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি হতেও পারে।

প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক আনোয়ারুল হক বলেন, ২০১২ এবং ১৪ সালে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি হলেও এখন পর্যন্ত কাজে লাগাতে পারিনি। মেরিটাইম ল এখন পর্যন্ত তৈরি হয়নি। সমুদ্রের তলদেশে খনিজ বালুসহ কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, তা-ও নিরূপণ করা যায়নি। এমনকি মৎস্যসম্পদেরও উপযুক্ত ব্যবহার করতে পারিনি। তাছাড়া আমেরিকা যেখানে বছরে ১০ বিলিয়ন ডলার আয় করে, শুধু সমুদ্রের তলদেশের সৌন্দর্য দেখিয়ে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের লোক সেখানে ভ্রমণ করতে যায় এবং বিভিন্ন ধরনের সৌন্দর্য উপভোগ করে। বাংলাদেশেও এ ধরনের সুযোগ রয়েছে; কিন্তু আমরা তা কাজে লাগাতে পারছি না। যদি সঠিকভাবে মৎস্যসম্পদ, গ্যাসসম্পদ, খনিজসম্পদ এবং স্কুবা ট্যুরিজম কাজে লাগাতে পারি, তা হলে বাংলাদেশের প্রতি অর্থবছরে যে বাজেট হয়, তা সমুদ্র অর্থনীতি দিয়েই তার জোগান দেওয়া সম্ভব।

বিশ্বব্যাংক বলছে, সুনীল অর্থনীতি হলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নততর জীবিকা সংস্থান এবং কাজের লক্ষ্যে সামুদ্রিক প্রতিবেশের উন্নয়ন। টেকসই উন্নয়নে সমুদ্রসম্পদের ব্যবহারের ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। তা ছাড়া সমুদ্রসম্পদ খাদ্যের পাশাপাশি জ্বালানিও সরবরাহ করে।

ভার্চুসো রিসার্চ অ্যান্ড কনসালটেন্সির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং উত্তরা বিশ^বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক দিলরুবা চৌধুরী বলেন, সমুদ্রসম্পদের সুরক্ষার মধ্যে টেকসই ভারসাম্য নিশ্চিত করার মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির বিকাশে আরও নজর দিতে হবে। এই খাতে নতুন বিনিয়োগ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিতকল্পে আরও ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারে। এখন মৎস্য পালন, জাহাজ নির্মাণ, জাহাজভাঙা, লবণ উৎপাদন এবং বন্দর সুবিধাসহ কিছুসংখ্যক সুনীল অর্থনীতির ক্ষেত্র উন্মোচন করা গেছে। আরও ব্যবহার সম্ভব হলে ২০৪১ সালের আগেই উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছতে পারবে বাংলাদেশ।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়