ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ: [২] ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে টোটাল ফার্টিলিটি রেট ছিল ৬.৯ শতাংশ। তৎকালীন সময় দেশে একজন মা গড়ে প্রায় সাত জন সন্তানের জন্ম দিতেন। সবশেষ ২০১৭-১৮ সালের বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ বলছে, টিএফআর এখন ২.৩ শতাংশ। ১৯৭৫ সালে সক্ষম দম্পতির মাত্র ৮ শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। বর্তমানে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার দাঁড়িয়েছে ৬৩.৯ শতাংশ।
[৩] স্বাধীনতার পর জন্মনিয়ন্ত্রণে সচেতনতার কারণে দেশে প্রজনন হার কমেছে। বিপরীত চিত্র দেখা যাচ্ছে উন্নত দেশে। জন্মনিয়ন্ত্রণকে তারা আর আশীর্বাদ মনে করছেন না। জন্মনিয়ন্ত্রণ এখন তাদের মাথা ব্যথার বড় কারণ।
[৪] বিশ্বের সবচেয়ে কম জন্মহারের শীর্ষ চারটি দেশের তালিকায় নাম রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার। দেশটির একজন নারীর গড়ে ১ দশমিক ২ জন সন্তান। ৩৪টি শিল্পোন্নত দেশের সংস্থা ওইসিডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ কোরিয়ার জন্মহার বিশ্বে সবচেয়ে কম। জনসংখ্যা স্থিতিশীল রাখার জন্য একজন নারীর গড়ে ২ দশমিক ১ জন সন্তান থাকা দরকার।
[৫] আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ কোরিয়ায় গর্ভকালীন সময়ে প্রত্যেক মাকে দেওয়া হবে ১৮ শ ২৭ মার্কিন ডলার। আর সন্তান জন্ম দেওয়ার পর দেওয়া হবে সাড়ে ৫শ ডলার। আর সন্তান লালনে ৭ বছর পর্যন্ত প্রতি মাসে মা পাবেন ২শ ৭৫ ডলার।
[৬] জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০৫০ সালের দিকে রাশিয়ার জনসংখ্যা বর্তমান ১৪ কোটি ৩৯ লাখ থেকে ১৩ কোটি ২৭ লাখে নেমে আসবে। এ ছাড়া অন্য কয়েকটি গবেষণা প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে ২০৫০ সালে রাশিয়ার লোকসংখ্যা ১১ কোটি ১০ লাখে নেমে আসতে পারে। দেশটিতে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে বলা হয়েছে নতুন জন্ম নেয়া শিশুর ১৮ মাস পর্যন্ত সম্পূর্ণ ভরণপোষণ খরচ রাষ্ট্র বহন করবে।
[৭] চীনে জনসংখ্যা ১৪১ কোটির সামান্য কিছু বেশি। আদমশুমারির ফলাফল ইঙ্গিত দিচ্ছে দেশটিতে বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। গত ১০ বছরে চীনের বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হচ্ছে ০.৫৩ শতাংশ যা ২০০০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত সময়কালের হার ০.৫৭ শতাংশের চেয়ে কম। দেশটির সরকার ঘোষণা করেছে নাগরিকরা এখন থেকে তিনটি পর্যন্ত সন্তান নিতে পারবেন।
[৮] উত্তর কোরিয়ার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো জনসংখ্যা কমেছে ২০২০ সালে। দ্য গার্ডিয়ান, আল জাজিরাসহ বেশ কিছু সংবাদমাধ্যমে জনসংখ্যা কমার দুটি কারণের উল্লেখ করা হয়েছে। এক. বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি। দুই. জন্মহার অত্যন্ত কম। সর্বশেষ আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী ডিসেম্বরের শেষে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ৫ কোটি ১৮ লাখ ২৯ হাজার ২৩ জন। তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ হাজার ৮৩৮ জন কম। দেশটির জন্মহার বাড়াতে সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিকদের সাপ্তাহিক কর্মঘণ্টা ৬৮ ঘণ্টার পরিবর্তে ৫২ ঘণ্টা করা হয়েছে। এতে করে কর্মজীবী নারী ও পুরুষ পরিবারে অধিক সময় কাটাতে পারবে। দুই জনের এক সঙ্গে বেশি কাটানো অধিক সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে কাজে আসবে বলে মনে করছে দেশটির সরকার। এ ছাড়া যারা একের অধিক সন্তান জন্ম দেবে তাদের নগদ অর্থ প্রদানেরও ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
[৯] দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্র রোমানিয়ায় গত ২৫ বছর ধরে জনসংখ্যা বাড়েনি। ২৫ বছর আগে দেশটির জনসংখ্যা ছিল ২ কোটি ৩০ লাখ। বর্তমানে এই সংখ্যা কমে হয়েছে ১ কোটি ৯০ লাখ। ২০৬০ সাল নাগাদ জনসংখ্যা ১ কোটি ৩০ লাখে কমে আসার আশঙ্কা করা হয়েছে সরকারি তথ্যে। দেশটির সরকার সন্তান জন্মদানের আগেই মাসিক ভাতা ৮৫ ভাগ বৃদ্ধি ও পূর্ণ ভাতাসহ দুই বছরের মাতৃত্বকালীন ছুটির ঘোষণা দিয়েছে।
[১০] ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ হাঙ্গেরিতে জনসংখ্যা মাত্র ৯৭ লাখ। দেশটিতে জন্ম হার মাত্র ১.৪৮ শতাংশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির চেষ্টায় সরকার সন্তানহীন দম্পতিদের বিনামূল্যে আইভিএফ (ইন-ভিট্রোফার্টিলাইজেশন) চিকিৎসা দেবে। ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি নারী যাতে ২ দশমিক ১ জন করে সন্তানের অধিকারী হয় সে লক্ষ্যে দেশটির সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তিন বছরের মাতৃত্বকালীন ছুটি, হাউজিং ভর্তুকি ও শিশু লালনপালনের জন্য নগদ আর্থিক সহায়তা।
[১১] গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে জার্মানিতে কয়েক দশক ধরে জন্মহারের চেয়ে মৃত্যুর হার বেশি। এ ঘাটতি মোকাবেলায় প্রতি বছর ৫ লাখ ৩৩ হাজার অভিবাসীকে স্বাগত জানাতে হবে জার্মানিকে।
[১২] ইউরোপের বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুনিয়া এবং এস্টোনিয়া সরকার প্রবাসীদের দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। দেশে ফিরে এলে তাদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ সুবিধা দেয়ারও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সম্পাদনা: রাশিদ