আল আমীন: [২] ট্রেনের ছাদে ডাকাতি ও হত্যায় জড়িতদের মূল হোতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছেন র্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র্যাব-১৪) ময়মনসিংহ।
[৩] র্যাব জানায়, আটককৃতরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য। তারা ট্রেনের পেশাদার ছিনতাইকারী। ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা ছিনতাই কাজে জড়িত। সুযোগ বুঝে করত ডাকাতিসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ত।
[৪] রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে র্যাব-১৪ এর প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক উইং কমান্ডার মো. রোকনুজ্জামান।
[৫] গ্রেফতাররা হলেন, ময়মনসিংহের শিকারিকান্দা এলাকার আশারাফুল ইসলাম স্বাধীন (২৬), বাঘমারা এলাকার মাকসুদুল হক রিশাদ (২৮), মো. হাসান (২২), রুবেল মিয়া (৩১) ও মোহাম্মদ (২৫)। এদের মধ্যে শনিবার রাত ১টার দিকে প্রথমে স্বাধীনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে চেইন অপারেশন চালিয়ে অন্যদের গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১২টি মোবাইল ফোন ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
[৬] সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, চক্রটি নিয়মিত ট্রেনে ছিনতাই ও ডাকাতি করে আসছে। এরা কমলাপুর, এয়ারপোর্ট ও টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের উদ্দেশে ট্রেনে উঠত এবং তাদের কিছু সহযোগী গফরগাঁও ফাতেমানগর স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠে সম্মিলিতভাবে ডাকাতি ও ছিনতাই করে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেমে যেত।
[৭] ছোট দলগুলোকে টার্গেট করে শনাক্ত করত, কেউ নিরাপত্তার বিষয় দেখত, কেউ লুণ্ঠিত মোবাইল ও অন্যান্য মালামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করত। অন্যরা সরাসরি ডাকাতির কাজে সম্পৃক্ত থাকত। এই চক্রটি তাদের ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন অস্ত্র ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে তাদের পূর্বনির্ধারিত জায়গায় লুকিয়ে রাখত।
[৮] ঘটনার দিন তারা ছিনতাইয়ের পরিবর্তে ডাকাতির পরিকল্পনা করে জানিয়ে উইং কমান্ডার মো. রোকনুজ্জামান বলেন, ট্রেনে ডাকাতির উদ্দেশে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে চার পেশাদার ডাকাত দেওয়ানগঞ্জগামী কমিউটার ট্রেনে ওঠে। রিশাদ, হাসান এবং স্বাধীন টঙ্গী স্টেশন থেকে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়। ট্রেনটি ফাতেমানগর স্টেশনে থামলে তাদের সঙ্গে যােগ দেয় মোহাম্মদ ও তার এক সহযোগী।
[৯] ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলতে শুরু করলে তারা ইঞ্জিনের পরের বগির ছাদে বসে থাকা যাত্রীদের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন লুট করা শুরু করে। ডাকাতির এক পর্যায়ে নিহত সাগর মিয়া ও নাহিদ বাধা দিলে তাদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। এ সময় ডাকাতরা তাদের হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে মাথায় এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে সাগর ও নাহিদ আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ট্রেনের ছাদে লুটিয়ে পড়ে। ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে ঢোকার আগে সিগন্যালে ট্রেনের গতি কমলে ডাকাতরা ট্রেন থেকে নেমে যায়।
[১০] তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনায় রিশাদ, স্বাধীন, মোহাম্মদসহ অজ্ঞাত কয়েকজন সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলো। আর টার্গেট শনাক্ত করার দায়িত্বে ছিলো হাসান। এসব লুণ্ঠিত মােবাইল ও অন্যান্য মালামাল কম দামে এই চক্রের কাছ থেকে সংগ্রহ এবং অন্যদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করত রুবেল। সে চক্রটির পৃষ্ঠপোষকও বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে।
[১১] এই সংঘবদ্ধ চক্রটির মূল হোতা রিশাদ। তার নামে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানা ও কোতোয়ালি মডেল থানায় মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা রয়েছে। সে দুই বছরেরও বেশি সময় কারাগারে ছিলো।
[১২] এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরগামী কমিউটার ট্রেনের ছাদে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের ছুরিকাঘাতে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সানন্দবাড়ী মিতালী বাজার এলাকার ওয়াহিদের ছেলে নাহিদ মিয়া ও জামালপুর শহরের বাগেড়হাটা বটতলা এলাকার হাফিজুর রহমানের ছেলে সাগরের মৃত্যু হয়।
[১৩] এ ঘটনায় নিহত সাগরের মা হনুফা খাতুন বাদী হয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায় একটি মামলা করেন। সেই মামলায় নগরীর কেওয়াটখালি এলাকা থেকে শিমুল মিয়া (২২) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সম্পাদনা: জেরিন আহমেদ