কামরুল হাসান মামুন, ফেসবুক থেকে, পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল জয়ী প্রফেসর আব্দুস সালামের পরিবার ২০১৪ সালে "স্পিরিট অফ আব্দুস সালাম অ্যাওয়ার্ড" ঘোষণা করেন। বিজ্ঞানীদের মধ্য থেকে যারা সালামের স্পিরিটকে ধারণ করেন তাদের পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেয়। প্রফেসর সালামের স্পিরিট কি? উনি আইসিটিপি নামক একটি ইনস্টিটিউট তৈরী করেন এই উদ্যেশে যেন তৃতীয় বিশ্বের পদার্থবিদ এবং প্রথম বিশ্বের পদার্থবিদদের মধ্যে একটি মেলবন্দন হয়। যেন তৃতীয় বিশ্বের পদার্থবিদরা উন্নত দেশে এসে ভালো পরিবেশে থেকে গবেষণা করতে পারেন। অর্থাৎ গরিব দেশের বিজ্ঞানীদের মান উন্নয়নে প্রভাবক হিসাবে কাজ করাটাই হলো প্রফেসর সালামের স্পিরিট। তিনি বিশ্বাস করতেন তৃতীয় বিশ্বের মানুষদের মধ্যে মেধার অভাব নেই। অভাব হলো সুযোগ, সুবিধা এবং অনুকূল পরিবেশের।
প্রতি বছর ২৯-শে জানুয়ারী তার প্রতিষ্ঠান ICTP distinguished lecture এর আয়োজন করে এবং সেখানেই এই পুরস্কার কারা পাচ্ছে সেটা ঘোষণা করা হয়। এইবার এই পুরস্কার পাচ্ছেন তিন জন বিজ্ঞানী। তাদের একজন হলেন আর্জেন্টিনার প্রফেসর হিলদা সারদেইরা (Hilda Cerdeira)। তিনি সালামের ইনস্টিটিউটে রেসিডেন্ট সায়েন্টিস্ট ছিলেন। বিজ্ঞানে তার দীর্ঘ সময় ধরে অবদান, তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানীদের জন্য তার কাজ বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানীরা যেন গবেষণা পত্র পেতে কোন অসুবিধা না হয় সেইজন্য eJDS (ইলেকট্রনিক জার্নাল ডেলিভারি সার্ভিস) পোর্টাল তৈরী করা ছিল তার অসামান্য অবধান। আমি নিজে এই ডেলিভারি সিস্টেম অসংখ্যবার ব্যবহার করেছি।
প্রফেসর হিলদা সারদেইরা আমার সরাসরি শ্রেণীকক্ষের শিক্ষক। আমি যখন ICTP-তে ডিপ্লোমা করি তিনি তখন আমাদের নন-লিনিয়ার ডিনামিক্স কোর্সটি পড়িয়েছেন। এছাড়া আমাদের কাছে তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি বাংলাদেশী অরিজিন ইতালিয়ান বিজ্ঞানী এবং ত্রিয়েস্তে ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নাসিম খলিলুর রহমানের স্ত্রী। তিনি একাধিক বার বাংলাদেশে এসেছেন। অনেক বাংলাদেশী বিজ্ঞানীর তার বন্ধু। সেই ১৯৯২ সালে উনার সাথে আমার পরিচয় এবং সেই সম্পর্ক আস্তে আস্তে আরো সুদৃঢ় হয়। আমি যেই ইনস্টিটিউট তৈরী করার কথা কয়েকদিন যাবৎ বলছি তার পেছনে যারা আমাকে প্রতিনিয়ত সাহস ও আইডিয়া দিয়ে সাহায্য করছে তাদের মধ্যে তিনি এবং কলকাতার অধ্যাপক শ্যামল দানা। প্রফেসর হিলদা সারদেইরাই প্রথম আমাকে জানান আমি যেন এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর ওমেনের প্রতিষ্ঠাতা কামাল আহমেদের সাথে যোগাযোগ করি। এর কিছুদিন পরে আমাকে সাহায্য করার জন্য উনি নিজে প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরীর খোঁজ করে জানতে পারেন উনি আর আমাদের মাঝে নেই। প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরী ছিলেন উনার প্রয়াত স্বামী নাসিম খলিলুর রহমানের ঘনিষ্ট বন্ধু। যতবার তিনি ঢাকায় এসেছেন তার সাথে তাদের দেখা হয়েছে।
আমি অত্যন্ত আনন্দিত যে আমার এবং আমাদের একজন পরম বন্ধু স্পিরিট অফ আব্দুস সালাম অ্যাওয়ার্ড পেতে যাচ্ছেন। আগামী মঙ্গলবার ২৮-শে সেপ্টেম্বর ২০২১ একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে। তিনি ছাড়াও অন্য দুজন এইবার এই পুরস্কার পাচ্ছেন। এরমধ্যে একজন হলেন সুদানের বিজ্ঞানী এবং থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমী অফ সাইন্সের মাধ্যমে তৃতীয় বিশ্বের বিজ্ঞানীদের একটা লম্বা সময় ধরে সাহায্য করে যাওয়া মোহাম্মদ হাসান। এছাড়া এই পুরস্কার আরো যিনি পাচ্ছেন তিনি হলেন স্পেনের Gregorio Medrano Asensio! তিনি সালামের মতই জিওগ্রাফিক এবং ধর্মীয় বাঁধাকে অতিক্রম করে উনিটি থ্রু সাইন্সকে মাথায় রেখে স্পেনে একটি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেছেন। সেটার স্বীকৃতি সুরূপ তিনিও পাচ্ছেন স্পিরিট অফ সালাম অ্যাওয়ার্ড।
অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী তিনজনকেই শুভেচ্ছা।