খালিদ আহমেদ [২] এমনটাই মনে করছেন গবেষকরা। তবে, অনেকে মনে করেন, দূষণের কারণে গভীর সমুদ্রের এই মাছগুলো উপকূল হয়ে নদীতে চলে আসছে। বিবিসি বাংলা।
[৩] বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত কয়েক দিনে পদ্মা, মেঘনা এবং দক্ষিণাঞ্চলের নদীগুলোতেও প্রায়ই সেইলফিশ আটকা পড়ার খবর পাওয়া যায়।
[৪] গভীর সমুদ্রের এই মাছ নদীর ভেতর কিংবা নদীর মোহনায় কেন আসছে, তা নিয়ে নানা ধরনের ব্যাখ্যা পাওয়া যাচ্ছে জেলে ও মৎস্য বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।
[৫] ওয়ার্ল্ড ফিশ বাংলাদেশ (ইকোফিশ-২) অ্যাক্টিভিটির সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি জানান, আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে পটুয়াখালীর একজন জেলের জালে এক সাথে সতেরোটি সেইলফিশ ধরা পড়ে ।
[৬] কক্সবাজারে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে প্রায় প্রতিদিনই অনেকগুলো করে সেইলফিশ ঘাটে এনেছেন জেলেরা। দেশের অন্যতম বৃহত্তম মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পটুয়াখালীর আলীপুর ও মহীপুর কেন্দ্রেও আসছে সেইলফিশ।
[৭] স্থানীয় জেলে মোহাম্মদ বাচ্চু গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকটি সেইলফিশ আটক করেছেন উল্লেখ করে জানান, অন্যদের জালেও আটকা পড়ছে বেশ কিছু। এখন নদীতে রেগুলারই পাই একটা দুইটা।
[৮] তিনি আরও বলেন, এই মাছ আগেও তাদের জালে আটকা পড়ত, তবে সংখ্যায় এত বেশি নয়।
[৯] সেইলফিশকে বলা হয় সবচেয়ে দ্রুত গতির সামুদ্রিক মাছ। ঘণ্টায় ১১০ কিলোমিটার গতিতে সাঁতার কাটতে পারে এই মাছ। মাছটির ঠোঁট লম্বা এবং চোয়ালে রয়েছে তীক্ষ্ণ দাঁত। এই দাঁত দিয়ে তারা অন্য প্রজাতির মাছ শিকার করে। এই মাছের শরীরের ওপরের অংশ গাঢ় নীল, নিচটা রুপালি রঙের এবং পাশের পাশের অংশ বাদামি।
[১০] দেখতে লম্বাকৃতির এই মাছটির পিঠের দিকে পাখার মতো আছে এবং এটি সাধারণত ১০ ফুটের বেশি লম্বা হয় না। ওজন সর্বোচ্চ ৯০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে।
[১১] সমুদ্রের প্রায় নয়শ মিটার পর্যন্ত গভীর দিয়ে মাছটি চলাচল করতে পারে। এই মাছ যখন উত্তেজিত হয় কিংবা ভয় পায়, তখন পিঠের পাখাকে পানির ওপরে ছড়িয়ে দিয়ে দ্রুত গতিতে ছুটতে থাকে। এ সময় তাদের পাখাগুলো দেখতে পাখির ডানার মতো মনে হয়।
[১২] শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ, অ্যাকোয়াকালচার ও মেরিন অনুষদের শিক্ষক অন্তরা ঘোষ মনে করেন, খাবারের সন্ধানেই সেইলফিশ নানা দিকে ছুটছে এবং এদের কিছু উপকূলের দিকে চলে আসছে বলেই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে।
[১৩] তিনি বলেন, সেইলফিশ গভীর সমুদ্রের মাছ। কিন্তু এ মাছটি ইলিশসহ এই প্রজাতির অন্যান্য মাছ খাবার হিসেবে খুব পছন্দ করে। আগস্ট-সেপ্টেম্বর জুড়ে ইলিশ জাতীয় মাছ স্বাদু পানির এলাকায় আসে। এদের ধাওয়া করতে করতেই কিছু সেইলফিশ নদীর মোহনা বা নদীতেও এসে পড়ছে। এগুলোই কিছু ধরা পড়ছে জেলেদের জালে।
[১৪] তবে ওয়ার্ল্ড ফিশের সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি মনে করেন, এই মাছগুলো যেখানে থাকে সেখানে তাদের কোন সমস্যা তৈরি হয়েছে। ভারতীয় গবেষকেরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে উপকূলে দূষণের প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত গড়িয়েছে, যা মাছের জন্য অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি করছে।
[১৫] অন্তরা ঘোষ অবশ্য এই ব্যাখ্যার সঙ্গে একমত নন। তিনি বলেন, দূষণ একটি কারণ হলে সেইলফিশ আরও গভীর সমুদ্রে বা অন্য দিকে চলে যেতে পারত। কিন্তু সেটি না করে তারা উপকূলের দিকে বা নদীতে আসছে, আর এর একমাত্র কারণ হলো খাদ্যের সন্ধান।