ওমর ফারুক লুক্স : বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিক্ষিত মানুষেরই ধারণাÑ একজন যৌনকর্মীকে কখনোই ধর্ষণ করা সম্ভব নয়। অথবা একজন নারী যৌনকর্মী হলেই তাকে ধর্ষণ করা যায়। এমনকি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর অনেক সদস্যরাও মনে করেন, ধর্ষিতা নারী বিচার চাইতে আসলে তাকে আবারও ধর্ষণ করা যায়। তারা সেটা করেও থাকেন। একটা ঘটনা বলি-২০১৬ সালে জার্মানির ফ্রাইবুর্গে হুসাইন নামের ২২ বছরের এক আফগান তরুণ শরণার্থী ১৯ বছরের মারিয়া নামের এক জার্মান তরুণীকে ধর্ষণ ও খুনের দায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত হয়। জার্মানিতে এই অপরাধের ঘটনাটি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলো এবং সম্ভবত জার্মানরা এই বর্বর ঘটনাটি আগামী একশো বছরেও ভুলতে পারবে না। ধর্ষণ এবং খুন বা নারীর প্রতি সহিংসতা জার্মানিতে নতুন কিছু নয়।
এ ধরনের অপরাধ বিশ্বের বাকি দেশগুলোর মতো জার্মানিতেও কমবেশি ঘটে থাকে। তবে আফগান তরুণ কর্তৃক মারিয়াকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাটি সকল জার্মানদের অস্বাভাবিকভাবে নাড়া দিয়েছিলো একটা বিশেষ কারণে। সেটা হচ্ছে- আদালতে এই ধর্ষক ও খুনি হুসাইনের বক্তব্য। মারিয়াকে পিটিয়ে অজ্ঞান করার পর ধর্ষণ করেছিলো হুসাইন। তারপর মারিয়াকে খুন করে নদীতে ফেলে দেয় হুসাইন। এটাও জার্মানিতে কোনো নতুন ঘটনা নয়। নতুন এবং কোটি কোটি জার্মানদের মগজ নাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঘটনাটি হচ্ছে, আদালতে হুসাইন বলেছিলো, ‘আমি কী এমন অপরাধ করেছি বুঝতে পারছি না? আমি একটা নারীকেই তো ধর্ষণ আর খুন করেছি’।
আদালত এই বক্তব্য শুনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে পরীক্ষা নিরীক্ষার পর নিশ্চিত হয়েছিলো, হুসাইন কোনো মানসিক ভারসাম্যহীন পুরুষ ছিলো না। নারীর প্রতি এই ভাবনা সে মগজে ধারণ করেছিলো তার দেশ, তার সমাজ, আর শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে। ইদানিং ফেসবুকে পড়ে বা গণমাধ্যমে প্রগতিশীল আর উচ্চ-শিক্ষিত বাঙালিদের কথা শুনে আমার মনে হয়- শুধু শিক্ষিতরাই নয়, দেশের ৯৯ ভাগ জনগণই আফগানিস্তানের হুসাইনের মতোই জ্ঞান এবং মানসিকতা ধারণ করেন। আর এটাই হচ্ছে একটা জাতির আজীবন ধর্মীয় রাজনীতি, ধর্মীয় শিক্ষাব্যবস্থা আর সমাজের সর্বস্তরে ধর্মীয়করণের ফল। ফেসবুক থেকে
আপনার মতামত লিখুন :