মহসীন কবির: [২] মাদক মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুরের পেছনে কী কারণ ছিল, তা লিখিত আকারে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের দুই ম্যাজিস্ট্রেট।
[৩] শুনানিতে দুই ম্যাজিস্ট্রেটের লিখিত ব্যাখ্যার অংশবিশেষ তুলে ধরে হাইকোর্ট বলেছে, ‘ওনাদের ব্যাখ্যা দেখে মনে হয় এই কোর্টকে কিছু শেখাতে চান।’ আদালত বলেছে, ‘এলএসডি ও আইস পেলে এর শাস্তির পরিমাণ কত?’ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, ‘পাঁচ বছর হতে পারে।’ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, ‘ইয়াবা বড়ির ক্ষেত্রে যে সাজা, এলএসডির ক্ষেত্রেও তা-ই হবে।’
[৪] আদালত বলেছে, ‘তাহলে দুই থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত হতে পারে। রিমান্ড মঞ্জুরের পেছনে যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন ম্যাজিস্ট্রেটরা, তাতে আমরা সন্তুষ্ট নই। এরা (ম্যাজিস্ট্রেট) রিমান্ড সংক্রান্ত আপিল বিভাগের নির্দেশনা ও প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে।’ আদালত বলেছে, “ম্যাজিস্ট্রেটরা যে ভুল করেছেন, সেটাও স্বীকার করতে চান না। আমরা মনে করি এরা হাইকোর্টকে ‘আন্ডারমাইন’ করেছেন।” জেড আই খান পান্না বলেন, ‘একদম ঠিক বলেছেন। প্রথম দফায় রিমান্ডে নেওয়ার পর কোনো ডেভেলপমেন্ট নাই। এছাড়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেননি পরীমনি। এতেই বিষয়টি পরিষ্কার যে বেআইনিভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় পরীমনিকে রিমান্ডে পাঠান ম্যাজিস্ট্রেটরা।’ এর পরই হাইকোর্ট ২৯ সেপ্টেম্বর পরবর্তী আদেশের জন্য দিন ধার্য রাখে। ঐ দিনও তদন্ত কর্মকর্তাকে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
[৫] ব্যাখ্যায় দুই ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, রিমান্ড মঞ্জুরের পৃথক ব্যাখ্যায় দুই ম্যাজিস্ট্রেট বলেছেন, রাষ্ট্র মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আসামি পরীমনি বিদেশি মাদক এলএসডি, আইসসহ গ্রেপ্তার হন। এলএসডি মাদক যে কত ভয়াবহ তা দেশবাসী অবগত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায়। এই মাদক যুবসমাজের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে যুবসমাজ ধ্বংস হতে পারে। এই এলএসডি মাদকের উত্স এবং এদের মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের লক্ষ্যে পরীমনিকে রিমান্ডে পাঠানো যৌক্তিক প্রতীয়মান হওয়ায় আসামির রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়। উচ্চ আদালতের নির্দেশনামতে এবং নারী পুলিশের উপস্থিতিতে রিমান্ড কার্যকরের নির্দেশ প্রদান করা হয়।
[৬] ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়, ‘রিমান্ড মঞ্জুরের আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনোরূপ ত্রুটি-বিচ্যুতি নিতান্তই অনিচ্ছাকৃত ভুল এবং সরল বিশ্বাসে করা ভুল। এমতাবস্থায় অনিচ্ছাকৃত ও সরল বিশ্বাসে করা ভুলত্রুটি মার্জনা এবং উপরোল্লিখিত ব্যাখ্যাসমূহ গ্রহণ করে আমাদের অধিকতর ব্যাখ্যা প্রদানের দায় থেকে অব্যাহতিদানে আদালতের সদয় মর্জি হয়। ভবিষ্যতে রিমান্ড আদেশ প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা আরো সতর্কতা অবলম্বন করব।’ ইত্তেফাক