সৈয়দা সাজিয়া আফরিন: পুরুষদের ফ্লার্টিং কালচার বলে একটা জিনিস আছে। আপাত ধর্ষক নয় ও তুলনামূলক শিক্ষিত পুরুষরা এটা করেন। এটা করে ভাবে তারা খুব স্মার্ট। নারীটির কাছে তার হয়তো মর্যাদা বাড়ছে। ‘আন্নি সুন্দর’, ‘আন্নের শাড়ি সুন্দর’, ‘দুলাভাইকে হিংসা’ আরও এতো এতো উদাহরণ আছে। বিষয়টা এমন পুরুষ আসলে লিঙ্গ পরিচিতির বাইরে কিছু ভাবতে পারে না। তাদের মস্তিষ্ক ভর্তি লিঙ্গ আবর্জনা। একটা অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম প্রায় পঞ্চাশ ছোয়া ইউনিভার্সিটি শিক্ষকের সঙ্গে এরকম বাহাসীয় কথাবার্তা বলে আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছিল ফ্লার্টি পুরুষ। যোগ্যতাকে পাশ কাটিয়ে তিনি প্রশংসায় যাচ্ছিলেন নারীটির রুপের।
শিক্ষক যে বিষয়টা পছন্দ করছিলেন না সেটার বুঝলাম যখন তিনি পুরো আলোচনায় চুপ ও গাম্ভীর্য ধরে রাখছিলেন। আমি কিছুটা আশাহত হই যে নারীটি প্রতিবাদে একবারও বলেন না- যে হে বেহায়া পুরুষ তুমি আমার সঙ্গে একরকম কথা বলছ পুরুষদের সঙ্গে অন্যরকম। পুরুষের প্রশংসা করছো কাজের আর আমার রুপের। এখানে আমি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসাবে আসি নাই, আমি আসছি শিক্ষক হিসাবে আজ তোরে কার্টিসি শিখায়া যাব। একটু সিধে টাইপ শান্ত টাইপ ইন্ট্রোভার্ট টাইপের মেয়েরা এটা সয়ে যায়। তিনিও তেমনই ছিলেন। আমার এক বান্ধবী ফ্লার্টিং হজম না করায় তাকে চাকরিতে হিউজ জ্বালাইসে এক বদখত পুরুষ। যদিও তাকে দলবদ্ধ হয়ে উচিত শিক্ষা দিসি। আমি খানিকটা অশান্ত। আমার পেটও অশান্ত। বাহাস বেশিক্ষণ সইতে বা হজম করতে পারি না। আমি প্রথমদিকে ইংগিতে বুঝাই মানে সম্পর্ক নষ্ট করতে চাই না। তারপরেও না বুঝলে তাদের অপমান করে থোতা মুখ ভোতা করতে দ্বিধা করি না। তারপর যা আছে কপালে তুয়াক্কল তু আলাল্লাহ। দুইটা উদাহরণ মনে আসছে [১] এক ছেলে একবার এরকম অকারণ সৌন্দর্যের প্রশংসা দিচ্ছিলো।
আমি তারে বললাম, হ্যালো তোমার বউ বাড়িত একা। ঠিক একটা প্রুষ তোমারি মতো আজ তাকে এভাবেই হয়তো প্রশংসায় ভাসাচ্ছে। বাকি ইতিহাস অপ্রয়োজনীয়। না জানলেও চলবে।[২] প্রত্যেক দিন এক ছেলে সুন্দরী বা এ ধরনের মন্তব্য করে’। প্রথম কয়েকবার হজম করার পর মেবি সেকেন্ড ডে আমি বললাম। আমি যে সুন্দর সেইটা আমি জানি। কারও সার্টিফিকেট লাগবে না। পরেরটা কী সেটা বলেন। তিনি চোখে বিস্ময় আর নিস্পাপ চেহারা ফুটায়ে আমাকে বললেন আমি কী মিন করছি। হোয়াট ইউ মিন? আমি শান্ত অথচ অভিজ্ঞ চোখে উত্তর দিলাম এসব প্রশংসার পেছনে একটা উদ্দেশ্য বা খায়েস থাকে। সেটা কী জানতে চাচ্ছি। এরপর দীর্ঘ ঘণ্টার তর্কযুদ্ধ যেটা থামাতে কয়েকজন তৃতীয় ব্যক্তির প্রয়োজন পড়েছিলো। তো পুরুষ মহলে আমার ঝগড়াটে স্বভাব আছে বলে একটা খ্যাতি হলো। কিন্তু আমি বুঝলাম যতোক্ষণ তাদের জুতাপেটা টাইপ অপমান না করা হয় তারা থামে না। রেস্ট ইন পিস ফ্লার্টি পুরুষ। ফেসবুক থেকে