আমিনুল জুয়েল: [২] বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলায় বিধবা ভাতার কার্ড ফিরিয়ে দেওয়া সেই অদম্য লাজিনা বেওয়াকে (৬১) সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে। নিজ সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরে আসায় লাজিনা পূর্বের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেন বলে জানা গেছে।
[৩] মঙ্গলবার (৭ সেপ্টেম্বর) আদমদীঘি উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয় থেকে তাঁকে সম্মাননা দেওয়া হয়। ওই দিন নিজ কার্যালয়ে লাজিনার এমন যুগান্তকরারী দৃষ্টান্তকে স্বাগত জানিয়ে তাঁর হাতে সম্মাননা স্মারক ও ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে অভিনন্দন জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্রাবণী রায়।
[৪] জানা গেছে, আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ধুলাতর নামক নিভৃত পল্লীতে বসবাস লাজিনা বেওয়ার। ওই গ্রামের হাদিস আলীর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হোন তিনি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, ১৯৮২ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে তিনি বিধবা হোন। স্বামীর রেখে যাওয়া ১০ শতক সম্পত্তি আর তিন সন্তানকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে নামেন লাজিনা। দুই মেয়ে আর ছয় মাসের এক ছেলেকে নিয়ে চার সদস্যের সংসার চালাতে বিপাকে পরতে হয় তাঁকে। এর ছয় বছর পর ১৯৯৮ সালে অভাব-অনটনের সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে বিধবা ভাতার তালিকাভুক্ত হন। তবে, সেসময় তিনি স্থির করেন, কখনোও সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরলে তিনি এ কার্ড ফেরত দেবেন।
[৫] দুই মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর একমাত্র ছেলে মামুনুর রশীদকে মাস্টার্স (এম.এ) পাশ করিয়েছেন। ২০১৬ সালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি পান মামুন। এরপর সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরলে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি (লাজিনা) বিধবা ভাতার কার্ড ফেরত দিতে সমাজ সেবা অধিদপ্তরে আবেদন করেন।
[৬] ছেলে মামুন জানান, আমাদের তিন ভাই-বোনকে সুখী দেখতে আমার মা অনেক কষ্ট করেছে। আমি এখন সরকারী চাকুরি করছি। এখন আর আমাদের সংসারে অভাব নেই। তাই আমার মা কার্ডটি ফেরত দিয়েছে। যেন সেই কার্ডটি অন্য পরিবারের কাজে লাগে।
[৭] উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন জানান, লাজিনা বেওয়া শুধু আদমদীঘির নয়; বরং সারাদেশে একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এজন্য আমরা তাকে সংবর্ধনা দিয়ে সম্মানিত করবার চেষ্টা করেছি মাত্র। লাজিনার মতো কার্ড ফেরত দেওয়ার ঘটনা দেশের কোথাও আছে কি-না, তা আমার জানা নেই। তাঁর এমন সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানায়। প্রকৃতপক্ষে, লাজিনার কাছ থেকে আমাদের এই সমাজের অনেক কিছু শেখার আছে।
আপনার মতামত লিখুন :