অপূর্ব চৌধুরী : [২] করোনা মহামারী ছাপিয়ে আবারো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে প্রায় ২০০ বছরের পুরনো বাহাদুর শাহ পার্ক। পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী এই পার্ক দিনব্যাপী মুখোরিত থাকে নানা বয়সী মানুষের পদচারণায়। ঘনবসতির মধ্যেও এই পার্ক ঘিরেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে লোকজন।
[৩] পার্কটি ঘুরে দেখা যায়, স্থানীয় বয়স্কদের প্রাতভ্রমণের মধ্য দিয়েই প্রতিদিনের প্রাণোচ্ছলতা শুরু হয় এই পার্কে।বেলা বাড়ার সাথে সাথে ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে ভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতি।শিশু-কিশোর, বন্ধু-বান্ধব, মধ্যবয়সী এবং বয়স্ক সহ প্রায় সবাইকেই গভীর আড্ডা কিংবা ব্যায়ামে মগ্ন থাকতে দেখা যায়।অনেকে আবার ফটোগ্রাফিতে ব্যাস্ত থাকেন।
[৪] দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলেই পাল্টাতে থাকে পার্কের চিত্র। আবার বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা হবার সময় পার্কের ভেতরের গাছগাছালির ওপর থাকা হরেক রকমের পাখির কলকাকলীতে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে পার্কটি।
[৫] ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলের স্মৃতিবিজড়িত এই পার্কের আশেপাশে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল সরকারি কলেজ,সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল সহ বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তাই সন্ধ্যায় ও রাতে আশেপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জমপেশ আড্ডায় মেতে উঠে পার্কে।সূর্যের আলো ডুবতেই চারপাশে লাইটের উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠে সম্পূর্ণ পার্কটি।
[৬] এদিকে দীর্ঘ সংস্কার কাজের পর গতবছরের ১১ মার্চ পার্কটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল।সামগ্রিক সংস্কার কাজের ফলে বিস্তৃত হয়েছে পার্কটির ভেতরের কাঠামো।এতে করে হাঁটাহাঁটি ও বসার পর্যাপ্ত জায়গা তৈরী হয়েছে এখন।
[৭] অপরদিকে বাহাদুর শাহ পার্কটির চারপাশের ফুটপাত ঘিরে গড়ে উঠেছে বাহারি খাবার,ফলমূল ও নানা দ্রব্যাদির ভাসমান বেশ কিছু দোকান। পার্কে আসা লোকজন এসব ভাসমান দোকান থেকেও ভিন্ন দ্রব্যাদি ক্রয় করেন। যা যুক্ত করেছে বাড়তি সৌন্দর্য।
[৮] ‘আন্টাঘর’ থেকে যেভাবে বাহাদুর শাহ পার্ক: জানা যায়, ১৮ শতকের শেষের দিকে এখানে ঢাকার আর্মেনীয়দের বিলিয়ার্ড ক্লাব ছিল।এই ক্লাবকে স্থানীয়রা নাম দিয়েছিল 'আন্টাঘর'।বিলিয়ার্ড বলকে স্থানীয়রা 'আন্টা' নামে অভিহিত করত।সেখানেই ছিল একটি ময়দান। ১৮৫৮ সালে রাণী ভিক্টোরিয়া ভারতবর্ষের শাসনভার গ্রহণ করার পর এই ময়দানেই একটি ঘোষণা পাঠ করে শোনান ঢাকা বিভাগের কমিশনার। এর পর থেকেই এই স্থানের নাম হয় ভিক্টোরিয়া পার্ক।
[৯] সিপাহী বিদ্রোহের (১৮৫৭ সালে) পর একটি প্রহসনমূলক বিচারে ইংরেজ শাসকরা অনেক সিপাহীকে ফাঁসি দেয়।তাদের এই লাশ সেই ময়দানের বিভিন্ন গাছের ডালে ঝুলিয়ে রাখা হয়। ১৯৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহের শতবার্ষিকী উপলক্ষে এখানে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে পার্কের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় 'বাহাদুর শাহ পার্ক'।
[১০] ঐতিহ্যবাহী এই পার্কে প্রাণের স্পন্দন খোঁজতে আসেন প্রবীণরা।অনেকে আবার ব্যাস্ত কর্মজীবনের অবসরে আসেন একটু বিশ্রাম নিতে।
[১১] পার্কে বসে থাকা পুরান ঢাকার বাসিন্দা মো: রমজান আলী বলেন, ৪০ বছর ধরে এখানে বাস করছি। যখনই সুযোগ পাই এই বাহাদুর শাহ পার্কে চলে আসি। এখানে সময় কাটাতে ভালো লাগে।সবকিছুই ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।এই পার্কের সাথে নিবিড় সম্পর্ক তৈরী হয়ে গেছে।
[১২] পার্কে আড্ডারত অবস্থায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মো: রাশিদুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার মাঝেই এই পার্কে আসি।পুরান ঢাকার ঘনবসতির মাঝেও এখানে ফাঁকা জায়গা পাওয়া যায়।তাছাড়া করোনাকালীন আবদ্ধ জীবন থেকে বেরিয়ে এই পার্কেই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারি।
আপনার মতামত লিখুন :