মজুমদার বাপ্পী: [২] সাতক্ষীরা তালা উপজেলার শতকরা ৮০ জন মানুষ কৃষিজীবী। ধান ও সবজির পাশাপাশি অনেকেই জড়িয়ে আছেন বিভিন্ন রকম ফল চাষে। কলেজ শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান তাঁদের মধ্যে ব্যতিক্রম, তিনিই প্রথম তালায় বানিজ্যিক ভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। এখানেই শেষ নয়, তৌহিদুজ্জামানের ড্রাগন চাষ পথ দেখাচ্ছেন অন্য কৃষকদের। তাঁর দেখাদেখি অনেকে শুরু করেছেন ড্রাগন ফলের চাষ।
[৩] তৌহিদুর রহমান সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের মৃত. মাষ্টার ওমর আলী ছেলে ও খুলনা সুন্দরবন সরকারী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক। শিক্ষকতার পাশাপাশি গ্রামে কৃষিকাজ করেন তিনি। তিনি উপজেলার মাগুরা ইউনিয়নের ফলেয়া-চাঁদকাটি এলাকায় ৭ বিঘা জমিতে ড্রাগন ফল চাষ শুরু করেছেন। তালা উপজেলার মাগুরা-পাটকেলঘাটা সড়কের পাশে ফলেয়া এলাকায় এই ড্রাগন ফল চাষ করেছেন।
[৪] বাগান ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে সবুজের সমারোহ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে তিনটি থেকে চারটি করে কাঁচা, পাকা ও আধা পাকা ড্রাগন ফল। বাগানে কাজ করছিলেন ৪-৫ জন শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন গাছ থেকে পাকা ফল সংগ্রহ করছিলেন। অন্যরা নিড়ানি দিয়ে আগাছা তুলছিলেন। প্রায় পাঁচ ফুট উচ্চতার প্রতিটি কংক্রিটের খুঁটি পেঁচিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ড্রাগন ফলের গাছ। জমিতে রয়েছে ১২ শ’ খুটি । খুটি থেকে খুঁটির দুরাত্ব সাড়ে সাত ফুট দৈর্ঘ ও সাড়ে ছয় ফুট প্রস্থ স্থাপন করে গাছ রোপন করা হয়েছে। প্রত্যেক খুঁটিতে ৪ টি করে গাছ লাগানো হয়েছে। ড্রাগন ফল গাছ খুব দ্রুত বাড়ে এবং শাখা তৈরি করে। একটি গাছে এক বছরের ৩০ টি পর্যন্ত শাখা তৈরী করতে পারে। ড্রাগন ফল রোপনের এক বছরের মাথায় ফল সংগ্রহ করা যায়। প্রতিটি ফল ২০০ থেকে ৩০০ গ্রাম করে ওজন হয়। প্রতিকেজি ফল পাইকারি ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা বিক্রি হয় । ড্রাগন ফল চাষে অনেক খরচ হলেও এটি অনেক লাভজনক ফসল বলে তার দেখাদেখি অনেক চাষী ড্রাগন চাষে ঝুকছেন।
[৫] কথা হয় ড্রাগন চাষী কলেজ শিক্ষক তৌহিদুজ্জামানের সাথে তিনি জানান, ইউটিউব দেখে শখের বশে তিনিই প্রথম উপজেলায় বানিজ্যিক ভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেছেন।৭ বিঘা জমি বাৎসরিক ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা লীজ নিয়ে ফলের চাষ করেছেন। ফলের বাগান সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য মাসিক বেতনে দুজন কেয়ারটেকার নিযুক্ত করেছেন তারাই সবসময় ড্রাগন ফলের বাগান তদারকি করেন। প্রকল্প শুরু থেকে ফল উঠা পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩ লক্ষ টাকা। বর্তমানে গাছ থেকে ফল তোলা ও বিক্রয় শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করা হয়েছে। এসময় তিনি শিক্ষিত বেকারদের উদ্দেশ্য বলেন, চাকুরি নামের সোনার হরিণের পিছনে না ছুটে তারা যদি নিজেরাই উদ্যোক্তা হয়ে ড্রাগন ফল চাষ করে তাহলে নিজের বেকারত্ব দূর হবে পাশাপাশি মোটা অংকের টাকা ও উপার্জন করা সম্ভব হবে। সরকার যদি ড্রাগন চাষের উপরে ঋণের ব্যবস্থা করে তাহলে বেকার যুবকরা ড্রাগন চাষে আগ্রহী হবে।
[৬] মাগুরা ইউনিয়নের কর্তব্যরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শামীমুল ইসলাম বলেন, এই প্রথম বানিজ্যিক ভাবে তালা উপজেলায় ড্রাগন চাষ করেছেন শিক্ষক তৌহিদুজ্জামান। ড্রাগন ফলের চাষ শুরুর পর থেকেই কখন কী ভাবে গাছের পরিচর্যা নিতে হবে, সে বিষয়ে তাঁকে পরামর্শ দিয়ে আসছি। ড্রগন ফল চাষে জৈব সার একটু বেশি লাগে। রাসায়নিক সার কম লাগে। তাঁর সফলতা দেখে অনেক কৃষক ড্রাগন চাষের জন্য পরামর্শ নিতে আসছেন। বর্তমানে মাগুরার বেশ কিছু জায়গায় এই ড্রাগন ফলের চাষ হচ্ছে।
[৭] তালা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাজিরা খাতুন জানান, তালায় এই প্রথম বৃহত্তর আকারে বানিজ্যিক ভাবে ড্রাগন চাষ হয়েছে। আমি ড্রগান ফল বাগানে পরিদর্শনে গিয়েছি। ফসলের মান অনেক ভালো, ড্রাগন একটি পুষ্টিকর ফল এ ফলে রয়েছে অধিক পরিমাণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা মানবদেহের জন্য অনেক উপকারী। বিশেষ করে ডায়বেডিস রোগীদের জন্য কার্যকারী একটি ফল। অনেক ব্যায় বহুল থাকলেও ড্রাগন চাষ করে অনেক লাভবান হবেন কৃষকরা। উপজেলার কৃষকরা নিজেদের উদ্দ্যেগে ড্রাগন ফলের চাষে এগিয়ে আসলে। কৃষকদের পাশে তালা উপজেলা কৃষি অফিস সব সময় কৃষকদের পাশে থেকে সকল সহযোগীতায় করবেন বলেও জানান তিনি।
আপনার মতামত লিখুন :