প্রদীপ কুমার দাশ: গ্রেফতার ও তল্লাশি- এ দুটো বিষয় নিয়ে অনেকেই বিপাকে পড়েন। অনেক জ্ঞানী ব্যক্তিকেও জিজ্ঞেস করলে খেই হারিয়ে ফেলেন। এ প্রসঙ্গে আমি একদম স্পষ্টত বলতে চাই-
[১] গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া কাউকে গ্রেফতার করা যায় না। [২] তল্লাশি পরোয়ানা ছাড়া কোথাও তল্লাশি করা যায় না। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- যদি কোনো আমলযোগ্য অপরাধ (Cognizable Offence) সংঘটিত হয়, সেই ক্ষেত্রে মামলা রুজু করে তার ভিত্তিতে আসামীকে গ্রেফতার করা যাবে এবং নিকটবর্তী থানায় হাজির করার পরে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিজ্ঞ আদালতে হাজির করতে হবে। আবার ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা যাবে না। যার নাম এফআইআরভুক্ত হবে অর্থাৎ মামলার আরজিতে অপরাধ সংঘটনে তার ভূমিকা সুনির্দিষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকবে তাকেই গ্রেফতার করা যাবে, যদি প্রাথমিক সত্যতা (Prima facie) পাওয়া যায়। এ ছাড়া মামলায় সন্দিগ্ধ আসামীকেও গ্রেফতার করা যেতে পারে।
তবে তদন্তকারী কর্তৃক মামলার ঘটনায় সম্পৃক্তের বিষয়ে সন্দেহের যুক্তিসংগত কারণসমূহ সিডিভূক্ত (নথিবদ্ধ) করতে হবে। এ ধরনের গ্রেফতার কা:বি: ৫৪ ধারার ১অনুচ্ছেদ সমর্থিত। ৫৪ ধারার আরও ৭টি অনুচ্ছেদ আছে, সেগুলোর কারণ ঘটলেও বিনা-পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যায়। এ ছাড়াও কা: বি: ৫৫, ১৫১ ধারায়, কেউ পরিচয় দিতে অস্বীকৃতি জানালে কিংবা আসন্ন আমলযোগ্য অপরাধ নিবৃত্তি করার লক্ষ্যে গ্রেফতার করা যায়। মোদ্দা কথা হচ্ছে, সুনির্দিষ্ট আইনের ধারা সমর্থন না- করলে কাউকে গ্রেফতার করা যাবে না।
এখন তল্লাসি প্রসঙ্গে আসি, কা: বি: ১০৩ ধারার নিয়ম মোতাবেক কোনো বস্তু, ব্যক্তি বা মামলার আলামত উদ্ধারের জন্য তল্লাশি পরিচিলিত হয়ে থাকে। আমলযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে তল্লাসি পরোয়ানার প্রয়োজন নেই যদি তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে সুনির্দিষ্ট জায়গায় তল্লাশি করার প্রয়োজন হয়। তল্লাসি করতে হলে কতোগুলো বিধি অনুসরণ করা বাধ্যতামূলক। যেমন তল্লাসির স্থানে প্রবেশের আগে সাক্ষী হিসেবে এলাকার গ্রহণযোগ্য লোকদের সঙ্গে নিতে হবে এবং তাদেরকে দিয়ে তল্লাসিতে অংশগ্রহণকারীদের তল্লাসি করিয়ে নিতে হবে। তল্লাসির সময় নজর রাখতে হবে যেন, বাইর থেকে অবাঞ্ছিত কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে না-পারে কিংবা ভেতর থেকে কেউ কিছু সরাতে না-পারে।
তল্লাশিকারীকে যথেষ্ট সংযত থাকতে হবে এবং মহিলাদের পর্দার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। তল্লাশি শেষে একটি তল্লাশি তালিকা (Search list) তৈরি করতে হবে এবং তাতে স্বাক্ষীদের দস্তখত নিতে হবে। যে বিধিগুলো উল্লেখ করা হলো, তা আদালত কর্তৃক প্রদত্ত সুনির্দিষ্ট স্থানে তল্লাশি পরোয়ানার (কা:বি: ৯৮,১০০ ধারা) ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। ব্যতিক্রম হলো, অস্ত্র আইনের ২৬ ধারা মোতাবেক তল্লাশি পরোয়ানা ব্যতীত তল্লাসি করা যায়। এছাড়া জানমাল নিরাপত্তার স্বার্থে অবৈধ ও ক্ষতিকর বস্তু তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধারের প্রয়োজনে তল্লাশির যাবতীয় বিধি মেনে তল্লাসি পরোয়ানা ছাড়া তাল্লাশি করা যেতে পারে। তবে তল্লাশি শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে তল্লাশিতালিকা/জব্দতালিকাসহ বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে এবং প্রাপ্ত মালামাল বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করতে হবে। ফেসবুক থেকে